তীব্র দাবদাহে চাহিদা বেড়েছে নওগাঁর তালপাতার হাতপাখা

বাসস
প্রকাশ: ১১ মে ২০২৫, ১৪:০৪

নওগাঁ, ১১ মে, ২০২৫ (বাসস) : সারাদেশে বয়ে যাচ্ছে তীব্র দাবদাহ। আর এই আধুনিক প্রযুক্তির যুগে তালপাতার হাতপাখা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন নওগাঁর মহাদেবপুরের ভালাইন গ্রামের ৭০ থেকে ৭৫টি পরিবারের মানুষ। 

একদিকে সকল জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় লাভ কম হলেও বাপ দাদার পেশা ধরে রাখতে কঠিন সংগ্রাম করতে হচ্ছে তাদের। তবে তালগাছ কমে যাওয়া, আর্থিক সমস্যা, আগের মত চাহিদা না থাকা এবং পরিশ্রমের তুলনায় লাভ কম হওয়া এই পেশার মূল সমস্যা। স্বল্প সুদে ঋণ এবং সরকারি সুযোগ সুবিধা পেলে আরো এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন পাখা তৈরীর কারিগররা।

নওগাঁ শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার পশ্চিমে মহাদেবপুর উপজেলার উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম ভালাইন। ওই গ্রামের দরিদ্র গ্রামীণ নারীরা দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে তালপাতার হাতপাখা তৈরিকে এখন পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সময়ের পরিক্রমায় গ্রামটি এখন ‘পাখাগ্রাম’ হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। তালপাতা দিয়ে তৈরি হাতপাখা থেকে অনেকের সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। পুরুষরা শুধু তালপাতা নিয়ে এসে শুকানোর পর পরিষ্কার করে দেয়। এরপর সাংসারিক কাজের পাশাপাশি গৃহবধূরা পাখাকে সুই-সুতা দিয়ে সেলাই ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করেন।

হাতপাখার কারিগর সুফিয়া বেগম বাসস’কে বলেন, একজন নারী প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ পিচ পর্যন্ত পাখা তৈরি করতে পারে। ১০০টি তালপাখায় সুই-সুতা দিয়ে সেলাই ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজের বিনিময়ে ৭০ টাকা পান তিনি। তবে কাজের তুলনায় মজুরি খুবই কম বলছেন তিনি।

হাতপাখার আরেক কারিগর কমলা বানু ও শাপলা খাতুন বাসস’কে বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকার এসে তাদের তৈরি হাতপাখা কিনে নিয়ে যায়। তাল পাতার সাথে বাঁশের খিল, সুতা ও রং মিশিয়ে হাতপাখা তৈরি করা হয়। তবে লাভের পরিমাণ আগের তুলনায় কম। তাই সরকারের কাছে সহযোগিতা অথবা সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করার জোর দাবী তাদের।

তাল পাখার ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম ও শহীদ হোসেন বাসস’কে বলেন, তারা দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এ ব্যবসা করছেন। প্রতিটি পাখা কিনতে হয় ৫ টাকায়। তাল পাতাকে সুন্দর করে সাইজ করে রং করা পর্যন্ত আরো খরচ পরে আরো দেড় টাকা। সব মিলিয়ে খরচ পড়ে ৮-৯ টাকা। আর প্রতিটি পাখা বিক্রি হয় ১০-১১ টাকায়। এসব পাখা দেশের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও ঢাকার ব্যবসায়ীরা নিয়ে যায়।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন বিসিক নওগাঁ এর উপ-ব্যবস্থাপক শামীম আক্তার মামুন বাসসকে বলেন, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সাথে যারা যুক্ত তাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করা হয়ে থাকে। পাখা তৈরির কারিগর ও ব্যবসায়ীরা আরো বড় পরিসরে আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সহজ কিস্তিতে ঋণ পেতে পারে এমন আশ্বাস দেন তিনি।

পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত তালপাতার হাতপাখা তৈরীর সাথে জাড়িতদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ সহজ শর্তে ঋণ দিলে অনেক বেকার মানুষের নতুন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
যৌথ বাহিনীর অভিযানে সারাদেশে আটক ৩৩ জন 
মিছিলের প্রস্তুতিকালে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ১২ নেতাকর্মী গ্রেফতার
দুদকের ৪টি অভিযানে দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে
কাঠমান্ডু থেকে দেশে ফিরলেন বাংলাদেশ ফুটবল দল ও আটকে পড়া নাগরিকরা
জয় দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু করল বাংলাদেশ
বৈষম্যের শিকার অফিসারদের আবেদনপত্র ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দিতে হবে
দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষ্যে রাজবাড়িতে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত
জামায়াতের আমিরের সঙ্গে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ
‘পোপ ফেস্ট’ উদযাপনে ভ্যাটিকান রাষ্ট্রদূতের অনুষ্ঠানে জামায়াত প্রতিনিধি দল
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের কোন বিকল্প আমাদের হাতে নেই : প্রধান উপদেষ্টা
১০