সিলেট, ২৬ মে, ২০২৫ (বাসস) : সিলেটের ওসমানী নগর উপজেলায় প্রবাসী ভাইকে হত্যার অভিযোগে চার সহোদর ও দুই ভাবিসহ আট জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ সোমবার সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের বিচারক সৈয়দা আমিনা ফারহিন এই রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- উপজেলার ফতেহপুর গুপ্তপাড়া গ্রামের মৃত শেখ মদরিছ আলীর ছেলে ও নিহতের ভাই শেখ আলফু মিয়া (৪১), তার সহোদর শেখ পংকী মিয়া (৪৩), শেখ তোতা মিয়া (৫৭), শেখ আব্দুর রব ওরফে লেবু মিয়া (৬৩), শেখ পংকী মিয়ার স্ত্রী লাভলী বেগম, আব্দুর রউফ ওরফে লেবু মিয়ার স্ত্রী শেখ আনোয়ারা বেগম ওরফে এশাই (৪৮), একই এলাকার মৃত আখলাছ আলীর ছেলে ফখর উদ্দিন ওরফে অহর (৪৬) ও উপজেলার গ্রামতলা দাসপাড়ার হাজি আলা উদ্দিনের ছেলে হেলাল উদ্দিন ওরফে দিপু মিয়া (৪৩)।
তাদের মধ্যে দিপু মিয়া পলাতক রয়েছেন।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৩ জুন বিকেল ৩টায় নিজ বাড়ি গুপ্তপাড়া থেকে গোয়ালা বাজারে যান প্রবাস ফেরত মাসুক মিয়া। বাজার থেকে ওই দিন তিনি আর ফিরেননি।
পরদিন ১৪ জুন ওসমানী নগরের দাসপাড়া গফুর মিয়ার বাড়ির পশ্চিম পাশে ধানক্ষেত থেকে মাসুক মিয়ার ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়।
এরপর এলাকায় জানাজানি হলে নিহতের সহোদর আলফু ও শেখ তোতা ঘটনাস্থলে গিয়ে মাসুকের লাশ শনাক্ত করেন।
পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
এই ঘটনায় আলফু মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে থানায় মামলা করেন।
মামলার তদন্তে হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নিহতের ভাই আলফু, পংকী ও তোতাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসে আসল রহস্য।
তদন্তে ওঠে আসে— প্রবাস থেকে পাঠানো টাকায় কেনা জমি নিজের নামে লিখে দিতে ভাইকে চাপ দেওয়ায় শেখ মাসুক মিয়াকে পরিকল্পিতভাবে খুন করেন পরিবারের সদস্যরা।
২০১৮ সালের ১৫ জুলাই সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আমলি আদালতে হত্যার বর্ণনা দেন আলফু, পংকি ও তোতো।
তাদের দেওয়া তথ্যমতে, আসামি ফখর উদদ্দিন, লাভলী বেগম, আনোয়ারা বেগম ও শেখ হাজি আব্দুর রউফ লেবু মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।
১৬ জুলাই গ্রেপ্তারদের মধ্যে আসামি আনোয়ারা বেগমও একই আদালতে হত্যাকাণ্ডে নিজেদের জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দেন।
এই ঘটনায় ২০১৯ সালের ৮ মে আদালতে চার সহোদরসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোপত্র (চার্জশিট নং-৫৭) প্রদান করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসএম মাঈন উদ্দিন। মামলাটি আদালতে বিচারের জন্য পাঠানো হলে ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার কাজ শুরু করেন।
দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ায় শুনানিকালে ২৯ সাক্ষীর মধ্যে ২০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিচারক আসামিদের সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে ৩০২/৩৪ ধারায় মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন।