ঈদুল আযহা উপলক্ষে ছুরি-চাকু তৈরিতে ব্যস্ত রাজশাহীর কামাররা

বাসস
প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৫, ২০:২১
ছবি : বাসস

রাজশাহী, ২ মে, ২০২৫ (বাসস) : আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে ছুরি-চাকুসহ বিভিন্ন ধারালো হাতিয়ার তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজশাহী মহানগরীর কামাররা। ঈদের মাত্র আর কয়েক দিন বাকি। এজন্য নগরবাসী পশু কোরবানি করার জন্য নতুন ধারালো হাতিয়ার কিনছেন ও শেষবারের মতো তাদের ধারালো হাতিয়ারগুলো শান দিয়ে নিচ্ছেন। 

এ সব ধারালো হাতিয়ারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, দা, ছুরি, চাকু, চাপ্পর, কুড়াল, কানতাই, হাসুয়াসহ আরো অনেক যন্ত্রপাতি। এ কারণে এখন মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন কামারের দোকানগুলোতে। গ্রাহকের  চাপে কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা। একটুখানি অবসরের সময় যেন নেই তাদের হাতে। সবসময় কাজ আর কাজ। কাজের মধ্য দিয়েই সময় কাটছে কামারদের।

সরেজমিনে রাজশাহী মহানগরীর আরও কয়েকটি এলাকায় ঘুরে কামারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে তাদের কর্মব্যস্ততা সম্পর্কে। কাজ বেড়ে যাওয়ার কারণে এখন নাওয়া-খাওয়ারও সময় নেই তাদের হাতে। গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী কোরবানি পশু জবাই ও কাটার  হাতিয়ার তৈরিতে সময় পার করছেন। 

নগরীর ডিঙ্গাডোবা এলাকার উপেন নামের এক কামারের সাথে কথা হলে তিনি বাসসকে জানান, ঈদের সময় ছাড়া অন্য সময়গুলোতে তেমন একটা কাজ থাকেনা বললেই চলে। দিনের বেশির ভাগ সময় বসেই অলস সময় কাটাতে হয়। ঈদুল আযহার সময় হলে নতুন দা-ছুরিসহ ধারালো হাতিয়ার তৈরি ও পুরাতন দা-ছুরিগুলো শান দিয়ে নেয়ার জন্য কোরবানি দিতে মনস্থির করা লোকজন দোকানে বেশি আসেন। অন্য সময় কাজ না থাকার কারণে আয়-রোজগারও বেশি হয় না। সেই জন্য সারা বছর সংসারে অভাব-অনটন থাকে। এখন কাজ বেশি হচ্ছে আয়ও বেড়েছে।

নগরীর ভাটাপাড়া এলাকার চন্দন নামের আরেক কামারের সাথে কথা হলে তিনি বাসসকে জানান, সামনে ঈদ।  এ কারণেই বর্তমানে কাজ বেড়েছে। আগে দিনে সর্বোচ্চ দু’চারটি কাজ হতো তাও টানাটানি। কিন্তু গত সপ্তাহ থেকে কাজের চাপ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন ৫০/৬০টিরও বেশি কাজ করা হচ্ছে। যার কারণে আয়ও বেশি হচ্ছে।  বছরের অন্য সময়গুলোতে বসে থাকার লোকসান পুষিয়ে নেয়া যাচ্ছে। 
নগরীর সাহেব বাজার এলাকার নিতিশ কামারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এখন বিশ্রাম করার সময় মোটেও নেই। সারাদিন শুধু কাজ আর কাজ। এখন কাজের অর্ডারও বেশি হচ্ছে উপার্জনও বেশি হচ্ছে। এভাবে আয় হলে অভাব থাকবে না। আমার দোকানে যারা কাজ করছে সবাই এখন কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন। বসে থাকার কোনো সুযোগ নেই। তিনি আরো বলেন, অন্য সময় যেখানে  কোনো দিন অর্ডার পাওয়া যেত আবার কোনো দিন মোটেই পাওয়া যেত না । সেখানে বর্তমানে প্রায় শতাধিকেরও বেশি কাজ পাওয়া যাচ্ছে। যার কারণে বছরের অন্য সময়গুলোতে বসে থাকার কারণে যে লোকসান হতো তা পুষিয়ে নেয়া যাচ্ছে।

শুধু এসব কামারদের দোকান নয়, নগরের অনেক দোকান ঘুরেই তাদের কর্ম ব্যস্ততার চিত্র দেখা গেছে। সবাই এখন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।  আসন্ন ঈদ উপলক্ষে  কাজ বেড়ে যাওয়ায় আয় বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি তারাও স্বীকার করেন।

এভাবেই রাজশাহী মহানগরীতে কর্মরত কামাররা তাদের কর্মব্যস্ততার কথা জানিয়েছেন। বছরের অন্য সময়গুলোতে বসে থাকার কারণে তাদের যে লোকসান হয় তা তারা ঈদের মৌসুমে বেশি কাজ করে পুষিয়ে নিতে পারছেন। এখন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা কোরবানি করার জন্য শেষ প্রস্তুতি হিসেবে এ কাজে ব্যবহৃত দা, ছুরি, চাপ্পর, হাসুয়া, কান্তাই, চাকুসহ আরো অনেক হাতিয়ার শান দিয়ে নিচ্ছেন। এজন্যই কামারের দোকানগুলোতে কর্মব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। 

তবে অন্যবারের তুলনায় এবার হাতিয়ার তৈরিতে বেশি টাকা ও মজুরি বেড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। কামাররা অবশ্য তা অস্বীকার করে বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার লোহার দাম কিছুটা বেড়েছে। কোনো কিছুর দাম আগের মতো নেই। সবকিছুর দাম বাড়ায় কিছু টাকা বেশি নিতে হচ্ছে। এটা বেশি নয়। স্বাভাবিক দাম ও মজুরি নেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত মজুরি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
কিশোরগঞ্জে নদীতে গোসলে নেমে কিশোরের মৃত্যু
বেদখল হওয়া খাসজমি উদ্ধার করতে ভূমি উপদেষ্টার নির্দেশ 
সোশ্যাল মিডিয়ায় কিশোরদের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা সম্ভব: অস্ট্রেলিয়ান ট্রায়াল
বাঘ বাঁচাতে প্রকৃতিতে হরিণ ছাড়ছে থাই সরকার
কেরানীগঞ্জে ভেজাল প্রসাধনী কারখানা সিলগালা, মালিক গ্রেফতার
দেশের খাদ্য পরিস্থিতি অত্যন্ত সন্তোষজনক: খাদ্য উপদেষ্টা 
ময়মনসিংহে মানুষের কঙ্কালসহ এক যুবক আটক
নোয়াখালীতে ঝড়ে লন্ডভন্ড তিন গ্রামের অর্ধশতাধিক ঘর বাড়ি
৭৫ রানে এগিয়ে চা-বিরতিতে বাংলাদেশ
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত
১০