কুমিল্লায় জমে উঠেছে পূজার কেনাকাটা

বাসস
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:৩৭
মার্কেটগুলোতে কেনাকাটার ভিড় বেড়েছে । ছবি: বাসস

কামরুল হাসান

কুমিল্লা, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ (বাসস): সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরের মতো এবারও কুমিল্লার মার্কেটগুলোতে কেনাকাটার ভিড় বেড়েছে। পূজা উপলক্ষে ব্র্যান্ড শপগুলোতে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

কুমিল্লা নগরীর ইস্টার্ন ইয়াকুব প্লাজা, রূপায়ণ টাওয়ার, সাত্তার খান কমপ্লেক্স, খন্দকার হক প্লাজা, কিউআর টাওয়ার, এস আর প্ল্যানেটসহ বিভিন্ন বিপণি বিতানে পূজার কেনাকাটা চলছে। এ মাসের শুরু থেকে পূজার কেনাকাটা শুরু হলেও পূজার দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই জমে উঠছে দোকানপাট। 

নগরীর বিভিন্ন শপিং মল ও বিপণিবিতান ঘুরে দেখা যায়, পূজা উপলক্ষে রাজগঞ্জ ও চকবাজারে শঙ্খ, শাঁখা, সিঁদুরসহ পূজার সামগ্রী কেনাকাটার ধুম পড়েছে। রাজগঞ্জের অলিগলিতে এখন ক্রেতা-বিক্রেতাদের প্রচুর ভিড়।

ক্রেতাদের মধ্যে তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশি। তারা বলছেন, পূজার বেশ কিছুদিন বাকি থাকলেও ভিড় এড়াতে এখন কেনাকাটা সেরে ফেলছেন। বিক্রেতারা বলছেন, আগের চাইতে এ সপ্তাহে বিক্রি বেড়েছে।

কয়েকটি মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, শাড়ি, কামিজ, টপস, টিশার্ট, জিন্স প্যান্টের বিক্রি বেড়েছে। বাচ্চাদের পোশাকের চাহিদাও বেড়েছে। মার্কেট ভেদে জিন্স প্যান্ট ৬০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা, ড্রপ সোল্ডার টি-শার্ট ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, শার্ট ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা, টি-শার্ট ২০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া শাড়ি, সালোয়ার কামিজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। ব্র্যান্ড শপগুলোতে একদর হওয়ায় গায়ের দামে বিক্রি হচ্ছে পোশাক।  বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড শপে পূজা উপলক্ষে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

পূজার কেনাকাটা করতে আসা মৃণালি ঘোষ  বাসসকে বলেন, ‘এবারের পূজা গ্রামে করবো। কয়েকদিন আগেই যাবো তাই কেনাকাটা করতে আসছি। এখন ভিড় কিছুটা কম, কেনাকাটা করতেও ভালো। এ জন্যই আসা। আমি পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করছি। এবারে জামা কাপড়সহ সব জিনিসের দাম বেশি। তাই কিছুটা চাপে পড়তে হচ্ছে।’

ক্রেতাদের মধ্যে কেউ পুরো পরিবারের সদস্যদেরও সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। এসেছে শিশুরাও। বাহারি রঙের জামা-কাপড় ও আনুষঙ্গিক কসমেটিকসের দোকানগুলোতে নারী ক্রেতাদের ভিড় বেশি। 

বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দিনের বেলা ক্রেতাদের আনাগোনা একটু কম থাকলেও বিকেল গড়ালেই ভিড় বেড়ে যায়। এবারের পূজাকে সামনে রেখে দোকানে বাহারি মালামাল তোলা হয়েছে। এসব মালামালই বিক্রি হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন। 

পূজার কেনাকাটা করতে আসা শুভ্র সাহা বলেন, ‘ছেলে-মেয়ে আর বউয়ের জন্য কেনাকাটা করলাম। প্রতি বছরের মতো এবারও জামা-কাপড়ের দাম কিছুটা বেড়েছে।’

পূজায় নারীদের প্রধান চাহিদা শাড়ি। নগরীর শপিং কমপ্লেক্সগুলোতে শাড়ির দোকানে ভিড় বেড়েছে। এছাড়াও পাইকারি কিছু শাড়ির দোকানে বিক্রি বেড়েছে। জামদানি, কাতানের সাথে ইন্ডিয়ান শাড়িরও চাহিদা রয়েছে। অনেকে সূতি শাড়িও কিনছে। এছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা ও গ্রামের খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি দরে শাড়ি নিয়ে যাচ্ছে।  

মৌসুমি ভৌমিক পূজা উপলক্ষে শাড়ি কিনতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, পূজার কেনাকাটা আগামী দু-একদিনের মধ্যে বাড়বে। তখন ভিড় বেড়ে যাবে। তাই আগেভাগেই পূজার কেনাকাটা সেরে নিচ্ছি। তিনি বলেন, প্রতি বছরই নিজের ও পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করি। এখন মা আর বাচ্চাদের জন্য কেনাকাটা করেছি। ভিড় তুলনামূলক কম থাকায় কেনাকাটা করতে ভালো লাগছে।

ইস্টার্ন ইয়াকুব প্লাজার শাড়ি ও থান কাপড় ব্যবসায়ী কাউসার আহমেদ বলেন, ‘পূজার সময় বিক্রি বাড়ে, কিছুটা দামও বাড়ানো হয়। এ সময়ে কিছু লাভ করা যায়।’

শহরের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শো-রুমগুলোতেও ক্রেতার ভিড় দেখা যায়। ক্রেতারা নিজেদের পছন্দমতো পোশাক কিনছেন। ব্র্যান্ডের সবচেয়ে বেশি শোরুম নগরীর কিউআর টাওয়ারে। কিউআর টাওয়ারে গিয়ে দেখা যায় বেশ কয়েকটি শোরুমে মূল্য ছাড়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ইনফিনিটি শোরুমে ৫০ পার্সেন্ট, আর্টে ৫০ পার্সেন্ট, বার্টনে ৪০ পার্সেন্ট, টুয়েলভে ২০ পার্সেন্ট এবং মিররে ৩০ পার্সেন্ট পর্যন্ত মূল্য ছাড় দিতে দেখা গেছে। 

পূজোর কেনাকাটা করতে আসা সুমন দাস বাসসকে বলেন, ‘দুর্গাপূজা আমাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান। প্রতিবছরই নিজের জন্য এবং পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করি। এবারও তাই এসেছি। দাম কিছুটা বেড়েছে বটে, তবে পূজোর সময় এসব গায়ে লাগে না।’

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অর্পিতা সাহা বলেন, ভার্সিটির পরীক্ষা শেষ। পূজায় তাই আগেই বাড়িতে যাব। এ জন্য আগে থেকেই কেনাকাটা সেরে ফেলছি। 

সাত্তার খান কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী পারভেজ রনি বলেন, ক্রেতা সমাগম আজ বেশ বেড়েছে। ভালো বিক্রি হচ্ছে। পূজা উপলক্ষে ফুটপাতের দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের বেশ ভিড় দেখা গেছে। কান্দিরপাড়, মনোহরপুর, রাজগঞ্জের ফুটপাতে বাচ্চাদের পোশাক কিনতে ভিড় করতে দেখা যায়। নিম্ন আয়ের মানুষ এসব দোকান থেকে কেনাকাটা সারছেন।  

রাজগঞ্জের চকবাজারে এখন ‘শাঁখা’ কেনার ধুম। পূজার জন্য প্রায় ১০০ উপকরণের প্রয়োজন হয়। রাজগঞ্জের পুরোনো বড় দোকানগুলোতে এসব উপকরণই পাওয়া যায়। বিভিন্ন অঞ্চলের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এখান থেকে এসব উপকরণ সংগ্রহ করেন। পূজা উপলক্ষে উপজেলা ও গ্রামের বিক্রেতারাও বিভিন্ন জিনিস পাইকারি দরে কিনতে এসেছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের পুরো পরিবারসহ আশেপাশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে শঙ্খ, শাঁখা, সিঁদুর, চন্দন কেনাকাটা করছেন। প্রতিমার সাজসজ্জা থেকে শুরু করে পূজার সব উপকরণই মেলে এখানে।

সরেজমিন রাজগঞ্জ, চকবাজার, ছাতিপট্টি গিয়ে দেখা যায়, প্রতিমার সাজসজ্জা থেকে শুরু করে মুকুট, শাড়ি, অলংকার, লেস, সিঁদুর, ফুলের মালা, প্রতীকী অস্ত্র ও ঘট কিনতে ব্যস্ত ক্রেতারা। পূজা-অর্চনার সব উপকরণই মেলে এখানকার দোকানগুলোতে। এসব উপকরণ কিনতে মানুষ দূরদূরান্ত থেকে নগরীতে এসেছেন। 

শাঁখা, সিঁদুর ও শঙ্খের দোকানগুলোতে প্রচুর ভিড়। বিভিন্ন ডিজাইনের শাঁখা কিনতে ক্রেতারা এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ঘুরছেন। তিন-চারশ টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ-ছয় হাজার টাকা জোড়া দামের শাঁখাও কিনছেন অনেকে। শঙ্খ বিক্রি হচ্ছে চার-পাঁচশ থেকে দুই-তিন হাজার টাকার মধ্যে।

শাঁখা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় প্রাচীন পদ্ধতিতে নিপুণ হাতে শাঁখা তৈরি হতো। তবে এখন আগের সেই সময় নেই। হাতে তৈরি শাঁখার কদর কমেছে। এখন মেশিনে তৈরি হয় বাহারি ডিজাইনের শাঁখা। যদিও মেশিনের চেয়ে হাতে বানানো শাঁখার মান ভালো। কিন্তু মেশিনে বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন খুব সহজেই করা যায়। হাতে সেই সুযোগ কম। তাই মানুষ এখন টেকসই না খুঁজে বিচিত্র ডিজাইন খোঁজ করেন।
ইস্টার্ন ইয়াকুব প্লাজা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মঞ্জুর ভুঁইয়া জানান, পূজা উপলক্ষে দোকানগুলোতে বাড়তি মালালামাল তোলা হয়েছে। কেনাকাটাও বাড়ছে। 

পূজা উদযাপন ফ্রন্ট কুমিল্লা মহানগরের আহ্বায়ক শ্যামল চন্দ্র সাহা জানান, শারদীয় দুর্গোৎসব আমাদের প্রাণের উৎসব। কুমিল্লায় দুর্গাপূজাকে উৎসবমুখর ও প্রাণবন্ত করতে প্রশাসনও রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিকতা দেখেছি। পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসকসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আমাদের মতবিনিময় হয়েছে। পূজায় যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রশাসন বদ্ধ পরিকর বলে আমাদের জানিয়েছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোরও নগরীতে স্বেচ্ছাসেবী টিম থাকবে বলে জানিয়েছে।  

পূজার কেনাকাটা সম্পর্কে তিনি বলেন, কেনাকাটা পূজায় বাড়তি আনন্দ দেয়। নগরীতে কেনাকাটার ধুম পড়েছে। উৎসবের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা সন্তুষ্ট। আশা করি নির্বিঘ্নে এবারের পূজা সম্পন্ন হবে। 

কুমিল্লার পুলিশ সুপার নজির আহমেদ খান বলেন, পূজা উপলক্ষে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন টিম করে সর্বদা টহলে থাকবে। গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে। জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় পুলিশের টিম পৌঁছাতে নৌ ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
অ্যানথ্রাক্স নিয়ন্ত্রণে গাংনীতে ৫০ হাজার গরু-ছাগলকে টিকা দেওয়া হবে 
নারায়ণগঞ্জে পেট্রোবাংলার বিশেষ তদারকি অভিযান
বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ ও ফল রপ্তানিতে সহায়তার আশ্বাস এফএও মহাপরিচালকের
বাগেরহাটে নারীদের নিয়ে বিএনপির উঠান বৈঠক
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে 'শেষ পর্যন্ত লড়াই' করবে চীন
গাজা ঘোষণাপত্রে নেতাদের স্বাক্ষর ‘মধ্যপ্রাচ্যের জন্য অসাধারণ দিন’: ট্রাম্প 
ট্রাম্পের শান্তির আহ্বান মার্কিন পদক্ষেপের সঙ্গে 'অসঙ্গতিপূর্ণ': ইরান
মুন্সীগঞ্জে পদ্মায় অভিযানে কারেন্ট জাল জব্দ
রাজশাহীতে ধর্ষণ মামলার আসামি গ্রেপ্তার 
বিদায় নিয়েছে মৌসুমি বায়ু, আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে
১০