
দিনাজপুর, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : দিনাজপুরের পুনর্ভবা নদীর তীরে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সূর্যপূজা বা ছট পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা প্রতিবছর কালী পূজার পর নদীর তীরে সূর্য দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে এই পূজা উদযাপন করেন। সনাতন রীতি অনুযায়ী এই ছট পূজাকে অনেকে সূর্যস্নানও বলে থাকেন।
গতকাল সোমবার সকালে সূর্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সনাতন ধর্মাবলম্বী বিপুল সংখ্যক নারী পুনর্ভবা নদীর পানিতে নেমে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেন। তাদের বিশ্বাস এই প্রার্থনার মাধ্যমে পরিবারের সকল অমঙ্গল ও অশুভ চক্রের শেষ হয়। এ সময় পুনর্ভবার তীরে হিন্দু ধর্মালম্বী সব বয়সী নারী ও পুরুষের মিলন-মেলায় পরিণত হয়। ঢাক ও ঢোলের তালে মুখরিত হয় নদীর উভয় তীরের পূজাস্থল।
সকাল থেকে মধ্যে রাত পর্যন্ত শহরে পুনর্ভবা নদীর তীরে কিশোর-কিশোরীদের আতশবাজী আর ছুটাছুটিতে আলোকিত ছিল পুরো এলাকা। স্বামী, সন্তান ও সংসারের মঙ্গল কামানার জন্য সূর্য দেবতার কৃপা লাভের আশায় হিন্দু নারীরা ডালা-কুলা ভর্তি বিভিন্ন ফলমূল ও নিজের তৈরি মিষ্টান্ন এবং হাতের তৈরি ঠেকুয়াসহ বিভিন্ন প্রসাদ সাজিয়ে নিয়ে এসেছে। বিকেল থেকেই নদীর তীরে সূর্যের দিকে তাকিয়ে উপবাস থাকা নারীরা প্রার্থনা করেন।
সূর্যাস্তের পর নারীরা কুলার প্রসাদ ডালায় উঠিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যান নিজেদের বাড়িতে। আজ মঙ্গলবার ভোররাতে আবার তারা ফিরে আসেন নদীর তীরে, কুলার প্রসাদ সাজিয়ে প্রতিক্ষায় থাকেন সূর্য উঠার। সূর্য ওঠার পর থেকেই নারীরা নদীতে স্নান শেষে প্রসাদ নিয়ে অর্ঘ দেন সূর্য দেবতার উদ্দেশ্যে। প্রসাদ অর্ঘ শেষে বিবাহিত নারীরা একে অপরকে সিঁদুর পরিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
দিনাজপুর শহরে কালিতলা কেন্দ্রীয় কালী মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি শ্যাম চরণ ভট্টাচার্য বলেন, এ উৎসব ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তর প্রদেশসহ নেপালের অবাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পালন করে থাকেন। এর ধারাবাহিকতায় স্থানীয়ভাবে এই সূর্যপূজা বাংলাদেশে করা হয়ে থাকে।
মন্দিরের প্রধান পুরোহিত শ্রী জগদীস ঠাকুর বলেন, সূর্যপূজা মূলত অবাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারীরা স্বামী, সন্তান ও সংসারের মঙ্গলার্থে সূর্য দেবের কৃপা লাভের আশায় নদীর তীরে করে থাকেন। এই পূজা ভগবান শ্রী রামের স্ত্রী সিতা মাইয়া এবং পার্বতী দেবী পালন করে ছিলেন বলে ব্যাপক জনশ্রুতি রয়েছে। সেই দীর্ঘকাল থেকেই এই সূর্যপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
দিনাজপুর সদর কোতয়ালী থানার ওসি পরিদর্শক মো. নুরুজ্জামান বলেন, সূর্যপূজাকে কেন্দ্র করে শহরে পুনর্ভবা নদীর তীরে পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। সোমবার ভোর থেকে এই পূজাকে কেন্দ্র করে নদীর তীরে বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষের সমাগম ঘটে। আজ মঙ্গলবার পূজা শেষ না হওয়া পর্যন্ত পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল রয়েছে।