নিজ উদ্যোগে ‘প্রাকৃতিক বাঁধ’ গড়ছেন খেরুয়ার চরবাসী

বাসস
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:২৬ আপডেট: : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:৩৮
চরের প্রায় দুই কিলোমিটার জুড়ে বিভিন্ন গাছের চারা রোপণ করে প্রাকৃতিক বাঁধের প্রাথমিক স্তর তৈরি করা হয়েছে । ছবি: বাসস

\ শফিকুল ইসলাম বেবু \

কুড়িগ্রাম, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : প্রতিবছর ব্রহ্মপুত্র নদের ভয়াবহ ভাঙনে বসতভিটা, ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের নদের তীরবর্তী বাসিন্দারা। এখানকার শিশুরা ভাঙনে হারাচ্ছে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
উদ্যোগের অভাবে তাদের জীবনে নেমে এসেছে নিরাপত্তাহীনতা ও অনিশ্চয়তা। তবে এবার নয়ারহাট ইউনিয়নের খেরুয়ার চরের মানুষ অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নিজেদের অর্থ ও শ্রমে নিজেরাই গড়ে তুলছেন ‘প্রাকৃতিক বাঁধ’।

চরের প্রায় দুই কিলোমিটার জুড়ে কলা গাছ, কাশফুল ও কলমি গাছের চারা রোপণ করে এই প্রাকৃতিক বাঁধের প্রাথমিক স্তর তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এসব গাছের বিস্তৃত শিকড় মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখবে, যা সময়ের সঙ্গে ভাঙন প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে।

নয়ারহাট ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙনে বজরা দিয়ারখাতা, দক্ষিণ খাউরিয়ার চর ও ফেইচকা এলাকার অন্তত ১০০ পরিবার সর্বস্ব হারিয়েছে। ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ও গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে আশ্রয়ণ প্রকল্প ও একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।

খেরুয়ার চরের বাসিন্দা দুলাল জোয়াদ্দার, আনোয়ার হোসেন, আব্দুল করিম ও নুর হোসেন বলেন, প্রতিবছর ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে যাই। তাই এবার আর অপেক্ষা না করে নিজেরাই গাছ লাগাচ্ছি। গাছ লাগালে অন্তত কিছুটা ভাঙন রোধ হবে—এই বিশ্বাসেই আমরা কাজ করছি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সানোয়ার হোসেন জানান, এর আগে ছোট পরিসরে এমন উদ্যোগ নেওয়া হলেও এবার তা অনেক বৃহৎ এবং সংগঠিতভাবে হচ্ছে। আমরা আশা করছি, এর সুফল শিগগিরই পাওয়া যাবে।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আব্দুল কাদের বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের গভীরতা ও প্রবাহের তীব্রতা বিবেচনায় এই ধরনের গাছ রোপণের কার্যকারিতা সীমিত। কারণ গাছের শিকড় কয়েক বছরে মাত্র এক থেকে দুই ফুট পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে, যা বড় ধরনের ভাঙন ঠেকাতে যথেষ্ট নয়।

চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক বলেন, এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। সরকারিভাবে আমরা বিভিন্ন স্থানে গাছ লাগাচ্ছি এবং স্থানীয় পর্যায়েও মানুষকে এই কাজে উৎসাহিত করছি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয় এই ধরনের উদ্যোগ ভাঙন মোকাবিলায় সচেতনতা ও অংশগ্রহণ বাড়াবে, তবে টেকসই সমাধানের জন্য সরকার ও স্থানীয় জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
পল্টন ট্রাজেডি উপলক্ষে ছাত্রশিবিরের আলোচনা সভা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী
দুদকের অভিযান : স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও ভূমি খাতে অনিয়ম উদঘাটন
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে পাকিস্তান সফরে ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী
চট্টগ্রামে দু’পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে যুবদল কর্মী নিহত
রাজধানীতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ডামি পিস্তলসহ ৯ জন গ্রেফতার
রাবির সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন
খুলনায় দুর্ঘটনা রোধ ও যানজট কমাতে সচেতনতামূলক র‌্যালি
এআই ব্যবহারে গতি আনতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপদানে ৮০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের
বিদ্যুৎ আমদানির অর্থ পরিশোধে নিয়ম শিথিল করল বাংলাদেশ ব্যাংক
ড্যাবের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদন
১০