
\ মুহাম্মদ নূরুজ্জামান \
খুলনা, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : ষড় ঋতুর বাংলাদেশে প্রতিটি ঋতুই যেন কোনো না কোনো সম্ভাবনা বয়ে নিয়ে আসে বাঙালির জীবনে। কার্তিক-অগ্রহায়ণ দুই মাস হেমন্তকাল। কার্তিক মাসের শুরুটা গ্রামবাংলায় কিছু রোগ-শোক দেখা গেলেও অগ্রহায়ণে নবান্নের ঘ্রাণে ভিজে যায় কৃষাণীর মন। ধানে ভরে ওঠে কৃষকের গোলা। শীতের আগমনীকে সামনে রেখে ঘরে ঘরে শুরু হয় উৎসবের আয়োজন।
পঞ্জিকার পাতায় এখন কার্তিক মাস। কার্তিকের প্রথম দিন থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত চলবে রবি মৌসুম। ইংরেজি পঞ্জিকা অনুযায়ী মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য মার্চ পর্যন্ত রবি মৌসুম। এই সময়ে রবিশস্য বা শীতকালীন ফসল, যেমন - গম, আলু, সরিষা, ডাল, তেলবীজ, শীতকালীন সবজি ইত্যাদি চাষ করা হয়।
রবি মৌসুমের শুরুতেই নানা জাতের শাক-সবজি ও রবি শস্য চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কৃষক। অনেকে আগাম শীতের সবজি চাষ করায় বাজারে আসতে শুরু করেছে ফুলকপি, শিম, বাধাকাপি ইত্যাদি শীতকালীন সবজি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, খুলনাঞ্চলের চার জেলায় ২০২৫-২৬ রবি মৌসুমে ৩০ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই জমিতে ফুলকপি, বাধাঁকপি, ওলকপি, ব্রো-কলি, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, শিম, কুশি, লালশাক, ঘি-কাঞ্চন (সাদা শাক), পালংশাক, গাজরসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ শুরু হয়েছে। কৃষকেরা এখন জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে। বড়ো ধরনের কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা না দিলে শীতকালীন সবজির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ পূরণ হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি বিভাগ জানায়, খুলনাঞ্চলের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইল- এর ৪ জেলায় চলতি ২০২৫-২৬ রবি মৌসুমে ৩০ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে । এরমধ্যে খুলনা জেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৮ হাজার ৩৩৫ হেক্টর। এরমধ্যে অর্জিত হয়েছে ৪৬৫ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ৫.৬ শতাংশ। বাগেরহাট জেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৯ হাজার ২০০ হেক্টর। এরমধ্যে অর্জিত হয়েছে ৩ হাজার ১২২ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৩৪ শতাংশ। সাতক্ষীরায় ৯ হাজার ৬৯০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে অর্জিত হয়েছে ৮২২ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার ৮.৫ শতাংশ। নড়াইল জেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ১৪০ হেক্টর জমি। এরমধ্যে অর্জিত হয়েছে ২১৫ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার ৬.৮ শতাংশ।
জেলার রূপসা উপজেলার কৃষক সাইফুল ইসলাম বাসসের সাথে আলাপকালে বলেন, শীতের সবজির প্রতি মানুষের বেশি আগ্রহ থাকে। এ কারণে আগাম শীতের সবজি চাষ করেছি। লাল শাকের বীজ ছড়িয়েছি। আশা করি আগাম সবজি বাজারে বা হাটে গেলে ভালো দাম পাবো।
বটিয়াঘাটা উপজেলার কৃষক হামিদুল বলেন, জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষ করছি। সারাবছর সবজির বেশ চড়া দাম থাকে। কিন্তু শীতের সবজি বাজারে উঠলে দাম আস্তে আস্তে কমতে থাকে। শীতের শুরুতে ভালো দাম পাওয়ার আশায় আগাম সবজি চাষ করেছি।
ডুমুরিয়া উপজেলার ঘের মালিক আব্দুস সালাম জানান, ঘেরে মাছের ব্যাবসা করি। কয়েক বছর ধরে শীত মৌসুমে ঘেরের আইলে কুমড়া, শীম ও লাউয়ের চাষ করছি। গত বছরও ভালো দাম পেয়েছি। আশা করি এ বছরও ভালো সবজি ফলবে। বাজারেও ভালো দাম পাবো বলে আশা করছি।
কালিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আমিরুল ইসলাম বাসসকে বলেন, সালামাবাদ ইউনিয়নে ধুসহাটি বিল, বাউচ ও বলাডাঙ্গা ব্লকের ২০ হেক্টর জমিতে রবি মৌসুমে শীতকালীন সবজি চাষ করা হচ্ছে। ক্ষেতে শীতকালীন সবজির বীজ বপন, কীটনাশক প্রয়োগ ও পরিচর্যায় কৃষকেরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন । আমরা তাদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি।
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. কিশোর আহম্মেদ বলেন, চলতি রবি মৌসুমে ৩১৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ করা হয়েছে। সমতল জমির পাশাপাশি ঘেরের পাড়কেও শীতকালীন সবজি চাষের জন্য গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রণোদনা হিসেবে কৃষকদের বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, চলতি রবি মৌসুমে ঘেরের পাড়ে সবজি চাষের উপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। কারণ এখানে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না। এটি স্বাস্থ্যের জন্য অধিক নিরাপদ। ঘেরে সবজি চাষে চাষি ও ভোক্তা উভয়ই লাভবান হন। প্রতিদিনই এ অঞ্চলে চাষাবাদের ক্ষেত্রে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। কোনো বড়ো ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা না দিলে শীতকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ পূরণ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।