আইন প্রণয়নের আগে অংশীজনদের সাথে আলোচনার আহ্বান ধর্ষণ আইন সংস্কার জোটের

বাসস
প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১৬:১৫
বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘ধর্ষণ ও নির্যাতন : আইনগত সুরক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি : বাসস

ঢাকা, ১৯ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : ধর্ষণ ও নির্যাতন বিরোধী আইন প্রণয়নের আগে সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে এমন ব্যক্তি অথবা বিশেষজ্ঞদের সাথে অংশীজন হিসেবে পূর্ণাঙ্গ ও গভীর আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট (রেপ ল’ রিফর্ম কোয়ালিশন)।

আজ সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত ‘ধর্ষণ ও নির্যাতন : আইনগত সুরক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব দাবি জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শাহনাজ হুদা।

এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ। আলোচক হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি উপদেষ্টা এডভোকেট সালমা আলী, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন সদস্য ড. মাহীন সুলতান এবং ব্লাস্ট এর আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিম।

একেক আইনে ভিক্টিমের বয়সে মাপকাঠি ক্ষেত্রভেদে একেক রকম না রেখে বয়স নির্বিশেষে অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করতে হবে উল্লেখ করে বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ বলেন,  এসব ক্ষেত্রে মিথ্যা মামলা তো হয়েই থাকে, সেই সাথে অনেক মামলা আপস হয় নাহলে টেকনিক্যাল কারণে আর চালানো হয় না। অনেকে আদালতে আসেন না। এসকল জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করার দরকার এবং এর জন্য এ বিষয়ে আরো বেশি আলোচনা হওয়া উচিত। একটি ঘটনা ঘটার সাথে সাথে আইন পরিবর্তন করতে হবে- এমন ধারনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সেইসঙ্গে, প্রণীত আইনের শাস্তি কতটা কঠোর করা যায় সেটার বদলে শাস্তি কতটা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে সেটিকেই নির্ধারক হিসেবে বেছে নিতে হবে।

প্রয়োজনীয় সংশোধনের সাথে সাথে সমাজকেও সচেতন করা জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে ধর্ষণের মত অপরাধ করে সে এই সমাজের বাইরের কেউ নয়। বেড়ে ওঠার সাথে সাথে এসকল সামাজিক ব্যাধির বিষয় সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে সচেতন করে গড়ে তোলার দায় আমাদের। জনগণ, আইন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান ও বিচার বিভাগ যদি সচেষ্ট হয়, সুদিন আসবেই।

অধ্যাপক শাহনাজ হুদা বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংস্কারের অবশ্যই দরকার আছে। সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকারই আসবেন তাঁদের সামাজিকভাবে মেয়েদের নিরাপত্তা দেয়ার বিষয়টির নিশ্চয়তা দিতেই হবে, এবং এভাবেই এ ধরনের অপরাধ এমনকি বাল্যবিবাহ ও নারী নির্যাতনের মত বিষয়গুলো প্রতিরোধ করা যাবে। একটা মেয়ের বিয়ের বয়স কত, সে শিশুর সংজ্ঞায় পড়ে কিনা, তার সম্মতি দেয়ার সক্ষমতা কতটুকু, শিশুদের প্রতি বিকৃত যৌন আকাঙ্ক্ষা অথবা ‘পিডোফাইল’ এর ধারণা আমাদের দেশে নেই। এ বিষয়গুলো সংস্কারে তুলে আনতে বিশদ আলোচনা হওয়া দরকার।

এডভোকেট সালমা আলী তার বক্তব্যে বলেন, আইনের সাথে সাথে সেবা দেয়ার জায়গা গুলোতে ও সংশোধনী ও সংযোজন করার প্রয়োজন, তাই এ বিষয়গুলো নিয়ে যারা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন   তাদের সাথে কথা বলাটা অত্যন্ত জরুরি। কারণ ধর্ষণের শিকার নারীর মানসিক সুরক্ষার জন্য কি তার ও তার পরিবারের সাথে কিরুপ আচরণ করতে হবে সে বিষয়ে প্রসিকিউটর, পুলিশ, বিচারিক দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তি ও গণমাধ্যমকর্মীদের এখনো অনেক কিছুই জানার ও শেখার আছে। এ বিষয়ে যথাযথ প্রচারণা করার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের দায়িত্ব অনেক। সমাজকে এটি জানানোর যে ধর্ষণ একটি দুর্ঘটনা যেখানে ভিক্টিমের দোষ যেমন নেই তেমনই তার হারানোর কিছু নেই বরং ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণ পাবার আছে।

নিজ বক্তব্যে পর্নোগ্রাফি বন্ধ করার ওপর জোর দিয়ে এডভোকেট সালমা আলী স্বচ্ছ বিচার, তৃণমূল পর্যায়ে নজরদারি ও প্রয়োজনে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য পুলিশ, আইনজীবী, সাংবাদিকদের যথাযথ ট্রেনিং, দৃশ্যমান বিচারিক অগ্রগতি ও শাস্তির দ্রুত বাস্তবায়ন দাবি করেন।

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. মাহীন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নেয়া সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো থেকে বোঝা যাচ্ছে যে তারা এ ব্যাপারে ভাবছেন, কাজ করছেন এবং এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। তবে একটি আইন প্রণয়ন করার সময় মনে রাখতে হবে যে, সেই আইনটি এমনভাবে করতে হবে যেন তার দ্বারা আমরা দীর্ঘদিন সুবিচার পেতে পারি। তাই অংশীদারদের সাথে সময় নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করে আইন প্রণয়ন করা উচিত বলে আমি মনে করি।

আলোচনার শুরুতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া বিষয়ক সুপারিশমালা তুলে ধরেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ব্লাস্টের লিগ্যাল স্পেশালিস্ট অ্যাডভোকেট আয়েশা আক্তার ও ব্লাস্টের সিনিয়র গবেষণা কর্মকর্তা ফাহাদ বিন সিদ্দিক।
এছাড়া, আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন মানবাধিকার, আইনগত সহায়তা, এনজিও প্রতিষ্ঠানের সদস্য, দেশের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীবৃন্দ, আইনজ্ঞ ও গবেষক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
সাঘাটা উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব তুলিপকে পদ থেকে অব্যাহতি
সব হাসপাতালে ডেডিকেটেড ডেঙ্গু ইউনিট করার আহ্বান ডিএনসিসি প্রশাসকের
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ৩১ জন হাসপাতালে ভর্তি
দাঁতের মজ্জা থেকে উদ্ভাবিত স্টেম সেলে মানবদেহের ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু প্রতিস্থাপনের সম্ভাবনা
কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশ 
মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ট্রাম্পের ‘রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের’ নিন্দা জানিয়ে চিঠি 
ঠাকুরগাঁওয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ভবনের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করলেন মির্জা ফখরুল
মেহেরপুরে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালিত 
চট্টগ্রামে জব্বারের বলীখেলার ১১৬তম আসর বসছে ২৫ এপ্রিল
দোহায় ৪ নারী ক্রীড়াবিদকে পরিচয় করিয়ে দিলেন প্রধান উপদেষ্টা
১০