যেকোনো ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে : মির্জা ফখরুল 

বাসস
প্রকাশ: ২০ মে ২০২৫, ১৯:১৫ আপডেট: : ২০ মে ২০২৫, ২০:১৪
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

ঢাকা, ২০ মে, ২০২৫ (বাসস) : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্খাগুলোকে বাস্তবায়িত করতে দলের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে অত্যন্ত সজাগ ও সচেতনভাবে কাজ করতে হবে। যেকোনো ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’ 

মঙ্গলবার দুপুরে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক রুটনিন আই হসপিটালের কেবিন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দলের এক যৌথ সভায় নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে এরকম শঙ্কার কথা বলেছেন মির্জা ফখরুল। 

দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যবার্ষিকীর প্রতি বছরে যে যৌথ সভা হয় সেটিতে মির্জা ফখরুলই সভাপতিত্ব করেন। অসুস্থতার কারণে বিদেশে থাকলেও এবারও তিনি এই সভায় ভার্চূয়ালি সভাপতিত্ব করেছেন।  

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকের এই সময়টা অত্যন্ত মূল্যবান। হাজার হাজার ছাত্রদের রক্তের বিনিময়ে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার যে নতুন একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সত্যিকার অর্থে ফ্যাসিবাদমুক্ত আধুনিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথে একটা কালো ছায়া এসে দাঁড়াচ্ছে। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচনকে পিছিয়ে দেয়া, জনগণকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে এবং ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। বিভাজনের রাজনীতি আবার শুরু হয়েছে। এখানে গোত্রে গোত্রে বিভাজন সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সরকারের বিভিন্ন ইনস্টিটিউশনগুলোকে পরস্পরের মুখোমুখি করার একটা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত শুরু হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা দেখতে পারছি যে, কিছু মানুষ যারা সরকারের মধ্যে অনুপ্রেবশ ঘটিয়ে বাংলাদেশকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে।

গত ১৩ মে চোখে জটিলতা দেখা দিলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্যাংকক যান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একদিন পর হাসপাতালে ভর্তি হয়েই তার বাম চোখে সফল অস্ত্রোপচার হয়। চিকিৎসকরা তাকে তাদের টানা দুই সপ্তাহ নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকতে বলেছেন। কেবিনে আছেন তিনি। সঙ্গে তার সহধর্মিনী রাহাত আরা বেগমও রয়েছেন।

বিএনপির ওপর এখন গুরু দায়িত্ব উল্লেখ করে মির্জা বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ওপরে সবসময় গুরু দায়িত্ব এসে পড়ে। সেই দায়িত্ব হচ্ছে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব, সেই দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশকে আবার নতুন করে গড়ে তোলার দায়িত্ব, সেই দায়িত্ব হচ্ছে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার কাজ করতে শুরু করেছিলেন, এখন যে তরুণ নেতা নতুন স্বপ্নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে গড়ে তোলবার নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।’

নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যেন কেউ কখনো কেড়ে নিতে না পারে, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব যেন কেউ কখনো বিনষ্ট করতে না পারে, গণতন্ত্রকে আর কেউ যেন কখনো ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচার দিয়ে দাবিয়ে রাখতে না পারে সেজন্য বিএনপির প্রতিটি কর্মীকে সেই অতন্দ্র ভূমিকা পালন করতে হবে।’

মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে এই যৌথ সভায় জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে ২৬ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত আট দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে মহাসচিবের অনুমতি নিয়ে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জিয়া এক ক্ষণজন্ম মহাপুরুষ উল্লেখ করে তার বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্ম তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ ও আধুনিক করার জন্যে যে কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছিলো সেই কর্মযজ্ঞের সূচনা করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। দুর্ভাগ্য আমাদের এই জাতির আমরা এই ক্ষণজন্মা মহাপুরুষকে বেশিদিন ধরে রাখতে পারিনি।’

তিনি বলেন, আজকে যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে, যারা বাংলাদেশকে ১৫ বছর ধরে একটা ফ্যাসিস্ট শাসনের মধ্যে রেখেছিলো। যারা আজকে এখনো ষড়যন্ত্র করে চলেছে সীমান্তের ওপার থেকে বাংলাদেশকে আবারও জনগণকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত বাংলাদেশের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করার জন্যে এরকম সময়ে আমাদেরকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম বার বার মনে রাখতে হবে, স্মরণ করতে হবে।

শোককে শক্তিতে পরিণত করতে হবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপির নেতা-কর্মীরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে, ৬০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিলে। প্রায় ১৭শ’ নেতা-কর্মীকে এ্যানফোর্স ডিজএপিয়ারেন্সের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। সেই অবস্থা থেকে আজকে একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করব।’

তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যে স্বপ্ন, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে স্বপ্ন, তারেক রহমানের যে স্বপ্ন সেই স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়নে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকীতে আসুন শোক নয়, শোককে আমরা শক্তিতে পরিণত করতে চাই এবং এভাবে অনুপ্রাণিত হতে চাই যাতে করে সমস্ত অপশক্তিগুলোকে পরাজিত করে আমরা যেন সত্যিকার অর্থেই গণতান্ত্রিক, আধুনিক এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি।

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী ছাড়া দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
বিশেষ অভিযানে ১৯ জন গ্রেফতার 
ভোলাগঞ্জে পাথর লুটপাটে জড়িত ১৪ জনের কারাদণ্ড
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বজ্রপাতে ৩ ব্যক্তির মৃত্যু
সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যা মামলায় ৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ
নির্বাচন কমিশনের সামনে এনসিপির বিক্ষোভ সমাবেশ কাল
টিএনজেড ও মাহমুদ গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রি করে শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করা হবে : শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা
৪৩তম বিসিএসে ১৬২ জনকে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি  
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত নরওয়ের
মৌলভীবাজারে চা শ্রমিক দিবস পালিত
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলায় সেনাবাহিনীর মেডিকেল ক্যাম্পেইন 
১০