শিরোনাম
ঢাকা, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : তিন দশক আগে পাবনার ঈশ্বরদীতে শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার মামলায় বিচারিক আদালতের রায়কে অমানবিক উল্লেখ করে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘ওই রায়টি কোন পাল্লায় মাপা যায় তা আমাদের জানা নাই।’
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নয়জন ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ২৫ জনসহ দণ্ডিত সব আসামিকে খালাস দিয়ে ভাষার মাস উপলক্ষ্যে বাংলায় দেয়া রায়ের পর্যবেক্ষণে আজ হাইকোর্ট বলেন, ‘বিচারিক আদালতের রায়ে বিচারিক মননের কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। মূলত এই মামলাটি একটি বিদ্বেষপ্রসূত মামলা, যেখানে তিলকে তাল করা হয়েছে। আর বিজ্ঞ বিচারক গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে এই রায় দিয়েছেন। বিজ্ঞ বিচারক কৃষ্ণ জলে তার লেখনীকে ভাসিয়ে এই রায় দিয়েছেন। অমানবিক ওই রায়টি কোন পাল্লায় মাপা যায় তা আমাদের জানা নাই।’
বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের আবেদন) শুনানি শেষে বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব-উল ইসলাম ও বিচারপতি মো. হামিদুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ রায় দেন।
উচ্চ আদালত আজকের রায়ে খালাস প্রাপ্তদের অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে।
বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যাদের খালাস দিয়েছে হাইকোর্ট তারা হলেন এ কে এম আক্তারুজ্জামান, মো. জাকারিয়া পিন্টু, মোখলেছুর রহমান বাবলু, রেজাউল করিম শাহীন, শহীদুল ইসলাম অটল, আজিজুর রহমান ফড়িং, শ্যামল, মাহাবুবুর রহমান পলাশ ও শামসুল আলম।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত যে ২৫ জনকে হাইকোর্টের রায়ে খালাস দেয়া হয়েছে তারা হলেন বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম, আজাদ হোসেন ওরফে খোকন, ইসমাইল হোসেন ওরফে জুয়েল, আলাউদ্দিন বিশ্বাস, শামসুর রহমান, আনিসুর রহমান, আক্কেল আলী, মোহাম্মদ রবি, মোহাম্মদ এনাম, আবুল কাশেম, কালা বাবু, মো. মামুন, মামুন-২, সেলিম হোসেন, মো. কল্লোল, তুহিন, শাহ আলম ওরফে লিটন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, লাইজু, আব্দুল জব্বার, পলাশ, আবদুল হাকিম, আলমগীর হোসেন, এ কে এম ফিরোজুল ইসলাম ওরফে পায়েল ও আবুল কালাম।
১০ বছর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত যাদের খালাস দিয়েছে হাইকোর্ট তারা হলেন বিএনপি নেতা ও ঈশ্বরদী উপজেলার শাহাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নেফাউর রহমান রাজু, আজমল হোসেন, সাবেক ছাত্রদল নেতা ও ঈশ্বরদী পৌরসভার কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন, ছাত্রদলের সাবেক নেতা মো. রনো, মো. বরকত, চাঁদ আলী, এনামুল কবির, মো. মোক্তার, হাফিজুর রহমান মুকুল, হুমায়ন কবির ওরফে দুলাল, জামরুল, তুহিন বিন সিদ্দিক ও ফজলুর রহমান।
হাইকোর্টে রাষ্ট্রপক্ষে এই মামলার শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মজিবুর রহমান। আর আসামিপক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, কামরুজ্জামান মামুন, জামিল আক্তার এলাহী। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মাকসুদ উল্লাহ।
এই মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর খুলনা থেকে ট্রেনে ঈশ্বরদী হয়ে সৈয়দপুরের দলীয় কর্মসূচিতে যাচ্ছিলেন শেখ হাসিনা। তাকে বহনকারী ট্রেনটি ঈশ্বরদী স্টেশনে ঢোকার মুহূর্তে ট্রেন ও শেখ হাসিনার কামরা লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা গুলি চালায় বলে অভিযোগ করা হয়।
পরবর্তীতে ঈশ্বরদী রেলওয়ে (জিআরপি) থানার সে সময়কার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাদী হয়ে ছাত্রদল নেতা ও বর্তমানে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন।
পরে আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের জন্য দিলে ৫২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এতে নতুন করে স্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়।
২০১৯ সালের ৩ জুলাই পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রোস্তম আলী এই মামলায় ৯ জনের ফাঁসির আদেশ দেন।
এ ছাড়া ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১৩ জনকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে যাবজ্জীবন সাজার আসামিদের ৩ লাখ টাকা এবং ১০ বছরের সাজার আসামিদের এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, আসামিরা আপিল করেন। সেই ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে আজ রায় দিলেন হাইকোর্ট বিভাগ।