প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কাতার সফর

কাতার ফাউন্ডেশনের প্রতিশ্রুতিতে উচ্ছ্বসিত নারী ক্রীড়াবিদরা

বাসস
প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৪:৪৪ আপডেট: : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:০০
মঙ্গলবার কাতার ফাউন্ডেশনের সিইও শেখা হিন্দ বিনতে হামাদ আল থানির সঙ্গে বাংলাদেশি চার ক্রীড়াবিদসহ প্রধান উপদেষ্টা। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক

দোহা (কাতার), ২৪ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশি নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য খেলাধুলার সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে কাতার ফাউন্ডেশনের প্রতিশ্রুতি ভীষণরকম আশাবাদী ও উচ্ছ্বসিত করেছে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কাতার সফররত চার নারী ক্রীড়াবিদকে। 

মঙ্গলবার দোহায় আর্থনা সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে বাংলাদেশের নারী খেলোয়াড়দের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দেন কাতার ফাউন্ডেশনের সিইও শেখ হিন্দ বিনতে হামাদ আল থানি।

বাংলাদেশের চারজন জাতীয় নারী ক্রীড়াবিদ— জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক আফিদা খন্দকার, ফুটবলার শাহিদা আক্তার রিপা, ক্রিকেটার সুমাইয়া আকতার ও শারমিন সুলতানা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে নারী ক্রীড়াবিদরা নিজেদের অভিজ্ঞতা, বাংলাদেশে নারী খেলোয়াড়দের স্বপ্ন ও চ্যালেঞ্জগুলো সিইও হিন্দ-এর কাছে তুলে ধরেন। কাতারের সাবেক শীর্ষস্থানীয় ক্রীড়াবিদ হিন্দ তাদের গল্পে আবেগাপ্লুত হন এবং দৃঢ়চেতা মনোভাবের প্রশংসা করেন।

বৈঠকে হিন্দ জানান, বাংলাদেশে নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য একটি বিশেষ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে কাতার ফাউন্ডেশন।

কাতারের আমিরের বোন ও কাতার ফাউন্ডেশনের সিইও শেখ হিন্দ-এর এই প্রতিশ্রুতিতে অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত ও আশাবাদী নারী ক্রীড়াবিদরা।

এ ধরনের উদ্যোগ বাংলাদেশের নারী খেলোয়াড় ও খেলার উন্নয়নে অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে তারা মনে করছেন।

এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকার জন্যও কৃতজ্ঞতা জানান নারী খেলোয়াড়রা।

সিইও হিন্দ-এর সাথে বৈঠকের পর নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করে এসব জানান এ চার নারী ক্রীড়াবিদ।

এ সময় কাতার সফরের অভিজ্ঞতাও জানিয়েছেন তারা।

জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক আফিদা খন্দকার বলেন, ‘কাতার সফরের জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর যখন প্রথম আমরা সরকার প্রধানের সাথে দেখা করতে যাই তখন প্রধান উপদেষ্টা স্যার কাতার সফরে আমাদের কি করণীয় সেটি খুব ভালো ভাবে বুঝিয়ে বলেছেন। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে কাতারের কাছে তুলে ধরা। আমরা সেটাই চেষ্টা করেছি।’

দেশে খেলোয়াড়দের থাকা-খাওয়াসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কেমন তা সিইও হিন্দকে তারা জানিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এসবের দিকে দৃষ্টি দিতে অনুরোধ করেছি।

হিন্দ খুবই মনোযোগী ছিলেন। তিনি আমাদের কথা রাখার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন। আমি আশাবাদী, আমরা এখান থেকে ভালো কিছু নিয়ে যেতে পারব।’

ফুটবলার শাহিদা আক্তার রিপা বলেন, ‘যেদিন ফেডারেশন থেকে বলা হয়েছে যে আমরা প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিদেশ সফরে যাচ্ছি, সেদিন আমরা সবাই খুব খুশি হয়েছিলাম। কারণ, স্যারই প্রথম যিনি ক্রীড়াঙ্গনকে নিয়ে চিন্তা করেছেন। মহিলা ক্রীড়াবিদদের নিয়ে ভেবেছেন, আমাদের জন্য কাজ করার চেষ্টা করছেন।’

রিপা বলেন,‘আমরা যখন হিন্দ-এর সাথে কথা বলছিলাম, তিনি খুব আবেগি হয়ে গিয়েছিলেন। আমরা আমাদের জিম ফ্যাসিলিটিজ নিয়ে কথা বলেছিলাম। তিনি আমাদের কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনেছিলেন। খেলা পরবর্তী অবসর জীবনে আমরা কী করতে পারি, সেসব নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। আমরা স্পেয়ার একাডেমিসহ কাতারের বেশ কয়েকটা স্পোর্টস ফ্যাসিলিটি ঘুরে দেখেছি। বাংলাদেশের থেকে অনেক ভালো ফ্যাসিলিটিজ এখানে আছে। বাংলাদেশে একাডেমি ও স্টেডিয়ামগুলোর সুযোগ সুবিধা কীভাবে আরো উন্নত করা যায় সে বিষয়ে কথা বলেছি।’

ক্রিকেটার সুমাইয়া আকতার বলেন, ‘প্রথম যখন শুনেছি যে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমরা সফর সঙ্গী হচ্ছি তখন বিশ্বাস হয়নি। সেসময় আমরা বিকেএসপিতে ক্যাম্প করছিলাম। তখন আমাদের ডাকা হয়। যখন দেখেছি যে প্রধান উপদেষ্টা স্যার নারী ক্রীড়াবিদদের নিয়ে এত আগ্রহী তখন খুব ভালো লেগেছে। সরকার প্রধানের সাথে এই প্রথম কোনো ট্যুরে এসেছি আমরা।’

তিনি বলেন, ‘কাতারে ফুটবল বেশি জনপ্রিয়, এখানে ক্রিকেটের বিষয়ে মানুষের আগ্রহ কম। এখানে এসে আমরা ক্রিকেট খেলায় কাতারের ইনভলভমেন্ট কীভাবে আরো বাড়ানো যায় সে বিষয়ে কাতার ফাউন্ডেশনের সিইও হিন্দকে বলেছি।’

কাতার ফাউন্ডেশনের সিইও নিজেও এখন ক্রীড়াবিদ ছিলেন জানিয়ে সুমাইয়া বলেন, ‘হিন্দকে আমরা ক্রিকেট খেলা দেখার জন্য বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তিনি বাংলাদেশে যেতে খুবই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি আমাদের এতটা ইম্পর্টেন্স দেবেন, ভাবিনি।’

ক্রিকেটার শারমিন সুলতানা বলেন, ‘আমরা এই প্রথম কোনো সরকার প্রধানের সাথে বিদেশ সফরে এসেছি। কাতার ফাউন্ডেশনের সিইও শেখ হিন্দ-এর সাথে আমরা দেখা করতে পেরে খুবই আনন্দিত। খেলাধুলার বিষয় নিয়ে তার সাথে আমাদের অনেকক্ষণ কথা হয়েছে। পুরোটা সময় তিনি অত্যন্ত মনোযোগী এবং আবেগি ছিলেন।’

‘আমাদের সুবিধা অসুবিধার বিষয়ে জানতে চেয়েছেন হিন্দ। আমরা ওনার কাছে মেডিকেল সাপোর্ট চেয়েছি। কাতারে ইনজুরি রিহ্যাব আছে। এখানে সাপোর্টের বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, আমরা অবসর সময়ে ট্রেইনার হওয়ার ট্রেনিং নিতে পারি। ফিজিওথেরাপিস্ট এর ট্রেনিং নিতে পারি। এসব ক্ষেত্রে কাতার সহযোগিতার হাত বাড়াবে,’ যোগ করেন শারমিন।

তিনি বলেন, ‘আমরা স্পেয়ার একাডেমি গিয়েছিলাম। কাতারের বাইরের তাপমাত্রার সাথে এই একাডেমির অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রার কোনো মিল নাই। ভেতরে প্র্যাক্টিস করার জন্য আরামদায়ক আবহাওয়া করা হয়েছে। সেখানে একজন খেলোয়াড়ের থাকা, খাওয়া ও প্র্যাক্টিসের সুবিধাসহ সব ধরনের স্কলারশিপ এর ব্যবস্থা আছে।’

বাংলাদেশের নারী ক্রীড়াবিদদের উন্নয়নের জন্য প্র্যাক্টিস ফ্যাসিলিটিজ বাড়ানো দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা এখনো ছেলেদের মাঠে খেলি। আমাদের নিজস্ব মাঠ দরকার যেখানে নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকবে। বাংলাদেশে নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক স্পনশরশিপ সুবিধা এখনও অপ্রতুল। মেয়েদের খেলায় আগ্রহী করে তুলতে, তারা যেন খেলাধুলাকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিতে নিতে পারে, সে জন্য স্পন্সরশিপ সুবিধা আরো বাড়ানো দরকার। দেশের বড় বড় কোম্পানিগুলো এগিয়ে আসলে আমার মনে হয় ক্রীড়াক্ষেত্রে নারীদের অগ্রযাত্রা আরো ত্বরান্বিত হবে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ
বালু উত্তোলন ও বন দখলের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স : পরিবেশ  উপদেষ্টা
শ্যামনগরে ক্ষতিকারক জেলি পুশকৃত ২৫০ কেজি চিংড়ি মাছ জব্দ
গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ২৫
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগ: ৬৪টি জেলায় স্থাপিত হবে স্বতন্ত্র পরীক্ষা কেন্দ্র
ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ডিএমপির ১৮৩৯ মামলা 
অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘অকার্যকর’ প্রমাণের এক গভীর চক্রান্ত চলছে: রিজভী
বুদ্ধের পবিত্র দন্তধাতু দর্শনে কান্ডিতে উপচে পড়া ভিড়
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীয়ায়  সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত-২ 
২৯ এপ্রিলের মধ্যে সব পাকিস্তানিকে ভারত ত্যাগের নির্দেশ নয়াদিল্লির
১০