ইসরাইলি হামলার জবাবে যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্য না করতে ইরানকে রুবিওর হুঁশিয়ারি

বাসস
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৫, ১০:০৩ আপডেট: : ১৩ জুন ২০২৫, ১২:২৬
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ১৩ জুন, ২০২৫ (বাসস) : ইসরাইল ইরানের ওপর হামলা চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ইরানকে সতর্ক করে বলেছেন—ওই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পৃক্ততা নেই, এবং ইরান যেন আমেরিকান ঘাঁটি বা স্বার্থকে লক্ষ্য না করে।

ওয়াশিংটন থেকে এএফপি রুবিও'র এক বিবৃতির বরাতে জানায়, তিনি বলেন, 'আমরা ইরানে হামলায় জড়িত নই এবং আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে অঞ্চলে মোতায়েন মার্কিন বাহিনীর সুরক্ষা।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই: ইরান যেন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ বা কর্মীদের লক্ষ্য না করে।'

ইসরাইলের পক্ষ থেকে ইরানে হামলার ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই সেখানে জোরালো বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এর আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ইসরাইলের এখনই এমন কিছু করা উচিত নয়।

ট্রাম্প বলেছিলেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান খুব কাছাকাছি এসেছে, এবং ইসরাইলি হামলা সেই সম্ভাবনা বিনষ্ট করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে সপ্তম দফার আলোচনা আগামী রোববার ওমানে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

রুবিও বলেন, 'ইসরাইল আমাদের জানিয়েছে, তারা মনে করছে এই পদক্ষেপটি তাদের আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল।' তবে তিনি ইসরাইলি হামলার পক্ষে বা বিপক্ষে সরাসরি কোনো অবস্থান জানাননি।

তিনি আরও বলেন, 'প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসন আমাদের বাহিনীর সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন এবং আমরা আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রেখেছি।'

ইরানের রাজধানী তেহরানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন। তারা আরও জানিয়েছে, ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘১০০ শতাংশ সক্রিয় অবস্থায়’ রয়েছে।

ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ জানান, হামলার পর তেহরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়া আসতে পারে—এমন আশঙ্কায় দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, 'ইরানে প্রতিরোধমূলক হামলার পর ইসরায়েল ও এর বেসামরিক জনগণের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা আসন্ন বলে ধারণা করা হচ্ছে।'

এই হামলার জেরে বিশ্ববাজারে তেলের দাম ৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে।

ট্রাম্প জানান, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সোমবার তার যে আলোচনা হয়েছে, তার বিস্তারিত তিনি প্রকাশ করতে চান না, তবে বলেন, 'আমি চাই না তারা (ইসরাইল) হামলা করুক, কারণ এতে বিষয়টি বিঘ্নিত হতে পারে।

তিনি যোগ করেন, 'হয়তো এতে (চুক্তি) লাভও হতে পারে, আবার ক্ষতিও।'

এর আগে ইরানের সঙ্গে পরমাণু আলোচনায় অচলাবস্থার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে মার্কিন কর্মীদের ‘বিপজ্জনক’ অঞ্চলগুলো থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বুধবার ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, 'তাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে কারণ এটি বিপজ্জনক স্থান হতে পারে। আমরা সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছি, এখন দেখা যাক কী হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'তারা পরমাণু অস্ত্র পেতে পারে না, বিষয়টা একেবারে পরিষ্কার। আমরা তা কখনোই অনুমোদন করব না।'

এরও আগে যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা জানান, নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কারণে ইরাকে মার্কিন দূতাবাসের কর্মী সংখ্যা কমানো হয়েছে। কুয়েত ও বাহরাইন থেকেও কিছু কর্মী সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে খবর রয়েছে।

একই দিনে ইরানের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়, সংঘাত শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক সামরিক ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হবে।

ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদেহ বলেন, 'তাদের সব ঘাঁটি আমাদের আওতায় রয়েছে, আমরা সেগুলোর অবস্থান জানি।প্রয়োজনে কোনো দ্বিধা ছাড়াই সেগুলোকে লক্ষ্য করব।'

তিনি বলেন, 'আল্লাহ চাইলে তা হবে না, আলোচনা সফল হবে। তবে যুদ্ধ শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্রই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।'

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক সামরিক ঘাঁটি রয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বড়টি কাতারে।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাগদাদ বিমানবন্দরে মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলায়মানি নিহত হওয়ার পর ইরান ইরাকে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল। এতে বহু মার্কিন সেনা মস্তিষ্কে আঘাতজনিত জটিলতায় ভুগেন।

এ পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ইউকে মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনস উপসাগর দিয়ে জাহাজ চলাচলে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে তিনি ‘সর্বোচ্চ চাপ’ নীতিতে ফিরেছেন। তবে কূটনৈতিক পথে সমাধানের সুযোগ রাখলেও আলোচনায় ব্যর্থ হলে সামরিক পদক্ষেপের হুমকিও দেন তিনি।

ইরানের সঙ্গে নতুন একটি চুক্তি করতে এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ দফা আলোচনা হয়েছে। ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি থেকে ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। সেই চুক্তির বিকল্প খোঁজার লক্ষ্যেই এই নতুন আলোচনা চলছে।

ট্রাম্প বুধবার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে বলেন, 'আমি নিশ্চিত ছিলাম, কিন্তু এখন আর ততটা আত্মবিশ্বাসী নই। তারা সময়ক্ষেপণ করছে বলেই মনে হচ্ছে, যা দুঃখজনক।'

তিনি আরও জানান, আলোচনার সুযোগ দিতে তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা না চালাতে বলেছিলেন। কিন্তু এখন ধৈর্য হারাচ্ছেন।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেয়ী সম্প্রতি বলেছেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ হচ্ছে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির ‘মূল’ এবং যুক্তরাষ্ট্র এতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

ইরান বর্তমানে ৬০ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা ২০১৫ সালের চুক্তিতে নির্ধারিত ৩.৬৭ শতাংশের বহু গুণ বেশি। তবে পরমাণু অস্ত্র তৈরির প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশের কম।

ইরান দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি কেবল শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। তবে পশ্চিমা দেশগুলোর অভিযোগ, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে।

তেহরান বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ খসড়া চুক্তিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি উপেক্ষিত হয়েছে। এটি তাদের অন্যতম প্রধান দাবি। ফলে তারা এর বিপরীতে একটি পাল্টা প্রস্তাব দেবে বলে জানিয়েছিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
টাঙ্গাইলে অগ্নিকাণ্ডে ৫টি দোকান পুড়ে গেছে
সাগর থেকে ইলিশ নিয়ে ফিরছেন জেলেরা
নদীবন্দর সমূহের জন্য ১ নম্বর সতর্ক সংকেত
কার্বন মুক্তকরণের জন্য ঋণ নিপ্পন স্টিলের জন্য চ্যালেঞ্জ
মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে সতর্ক বিনিয়োগকারীরা, ওয়াল স্ট্রিটে শেয়ারবাজারে বড় পতন
ক্যান্সার আক্রান্ত লিটনের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন সাঈদ আল নোমান
পদ্মা সেতুতে সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত 
ইরানের 'প্রতিরক্ষা ঘাঁটি'তে আঘাত হানার দাবি ইসরাইলি সেনাবাহিনীর
অন্তর্ঘাতকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে : আসিফ মাহমুদ
দিনাজপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত, ১৫ জন আহত
১০