দেশের প্রথম কৃষি জাদুঘর: কৃষির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রযুক্তির অনন্য সংগ্রহশালা

বাসস
প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:২৮
ছবি : বাসস

ময়মনসিংহ (বাকৃবি), ২১ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): প্রাচীন ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সংরক্ষণ, প্রদর্শন এবং কৃষি সংশ্লিষ্ট ইতিহাস- ঐতিহ্য সম্পর্কে জাতীয় চেতনা জাগিয়ে তুলতে গড়ে তোলা হয়েছে দেশের প্রথম কৃষি জাদুঘর। 

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসের বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউটের সামনে সবুজ ছায়ায় দেবদারু গাছে ঘেরা মনোরম পরিবেশে অবস্থিত জাদুঘরটি কৃষির বিবর্তন ও ক্রমবিকাশের এক জীবন্ত দলিল।

বাকৃবি’র সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ হোসেনের স্বপ্ন থেকে জন্ম নেয় এই জাদুঘরের ধারণা। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মু. মুস্তাফিজুর রহমান ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং ২০০৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম এর উদ্বোধন করেন। জনবল সংকটসহ নানা কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০০৭ সালের ৩০ জুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোশাররফ হোসাইন মিঞা এটি পুনরায় জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করেন।

পাঁচ একর আয়তনের দৃষ্টিনন্দন এই জাদুঘরে রয়েছে অষ্টাভুজ আকৃতির একটি মূল ভবন, যার প্রতিটি কক্ষে সাজানো আছে কৃষি ও গ্রামীণ জীবনের ঐতিহ্য বহনকারী নানা উপকরণ। প্রবেশপথেই দর্শনার্থীদের চোখে পড়ে বিচিত্র মাছের অ্যাকুরিয়াম এবং প্রাচীন সাতটি খনার বচন। এরপর রয়েছে সংরক্ষণশালার কক্ষগুলো, যেখানে প্রদর্শিত হয়েছে বীজ, মাটি, সার, মডেল, কৃষি যন্ত্রপাতি, জীববৈচিত্র্য এবং ঐতিহ্যবাহী জীবনধারার নানা নিদর্শন।

বীজ সংগ্রহশালায় রয়েছে ধান, গম, ভুট্টা, চীনাবাদাম, কাউনধান, তিসি, ফ্রাঞ্চ বিন, ফাবা বিনসহ বিভিন্ন ফসলের বীজ ও ফল। এখানে বিরল প্রজাতির তৈকর, ভ্যান্না, মিষ্টি আলু ও অন্যান্য ফসলের নমুনাও সংরক্ষিত আছে। প্রদর্শনীতে আরও রয়েছে- পাহাড়ি চাষাবাদের মডেল, ফসলের রোগের নমুনা, মসলাজাতীয় উপকরণ ও প্রাচীন কৃষিযন্ত্র।

অন্য কক্ষে রয়েছে প্রাণিজ সামগ্রীর বুনো মহিষ, হরিণের শিং, অজগর সাপের কঙ্কাল, শকুনের সংরক্ষিত মডেল, প্লাটিপাসের কঙ্কালসহ নানা প্রাণীর নমুনা। দেশীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্য তুলে ধরেছে বিয়ের সময় ব্যবহৃত ‘গিলা’, গৃহস্থালির উপকরণ যেমন ঢেঁকি, কুলা, হুঁকা, পানের ডাবর, হারিকেন, মাছ ধরার যন্ত্র, বাদ্যযন্ত্র বেহালা ও তবলা ইত্যাদি।

প্রযুক্তির বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় রয়েছে পুরোনো মাইক্রোকম্পিউটার, ডট প্রিন্টার ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ। গ্রামীণ জীবনের নিদর্শন হিসেবে স্থান পেয়েছে কৃষকের বসতবাড়ির মডেল, পালকি, লাঙল, ধান মাড়াইয়ের ঘাণি, গরুর গাড়ি, ডিঙি নৌকা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পোশাক ও কৃষিকাজে ব্যবহৃত ‘দোন’।

কৃষি জাদুঘরটি বাংলাদেশের কৃষি ঐতিহ্যের অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত ধারাবাহিক ইতিহাস তুলে ধরে দর্শনার্থীদের কৃষির মূল ভিত্তি সম্পর্কে গভীর ধারণা প্রদান করছে। শহুরে মানুষদের কাছে এটি যেন গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া জীবনের এক সজীব প্রতিচ্ছবি।

জাদুঘরটি শনিবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ট্রাম্পের সঙ্গে নভেম্বরে সাক্ষাৎ করবেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স
বিএনপিকে প্রধান উপদেষ্টা : নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন, আমরা তা করব
দেশের মানুষ এখনো প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা ফিরে পায়নি: আখতার হোসেন
ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি বাতিল, কিছু পর্যালোচনায় আছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা ও আইআরআই প্রতিনিধির সাক্ষাৎ : ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি
নভেম্বরে গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চূড়ান্ত করতে হবে: পরওয়ার
গণপূর্ত, স্বাস্থ্যসেবা ও সেটেলমেন্ট অফিসে অনিয়মের অভিযোগে দুদকের অভিযান
নির্বাচন অর্থবহ করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়কের ভূমিকায় যেতে হবে: মির্জা ফখরুল
খুলনায় ‘থ্রি-সি’ প্রকল্প বাস্তবায়নে সভা
অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি
১০