ঢাকা, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : ব্যাপক দুর্নীতি ও সেবাপ্রদানে অনিয়মের অভিযোগে সারাদেশে একযোগে ৩৫টি সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম জানান, আজ সারা দেশে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম এসব অভিযান পরিচালনা করেন।
দুদক সূত্র জানায়, দিনাজপুর চিরিরবন্দর সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনাকালে একজন নকলনবিশের কাছ থেকে ২৪ হাজার টাকা ও একজন অফিস সহকারীর কাছ থেকে সাড়ে ১১ হাজার টাকা হাতেনাতে উদ্ধার করা হয়। এই টাকার বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে না পারায় নকলনবিশকে সাময়িক বরখাস্ত এবং অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জেলা রেজিস্ট্রার টিমকে আশ্বস্ত করেন।
কুষ্টিয়ার খোকসা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে নাইট গার্ডের কাছে ৪০ হাজার টাকা পাওয়া যায়, যার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেননি। এছাড়াও অফিস কার্যক্রমে অনিয়ম ও অসঙ্গতির সত্যতা পাওয়া যায়। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে সরকার নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত অর্থ আদায়, ৫২(খ) রশিদ বহিতে গরমিল এবং মোহরাদের দ্বারা দলিল প্রতি ১ হাজার ৯০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সিলেটের গোয়াইনঘাট সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে আবাসিক ভূমি রেজিস্ট্রেশন, নকল উত্তোলনসহ প্রতিটি ধাপে ঘুষ লেনদেনের তথ্য সেবাগ্রহীতাদের সাক্ষ্যে উঠে এসেছে। একজন ভুক্তভোগী জানান, একটি দলিল সম্পন্ন করতে তাকে ৪০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। যশোর সদর সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে এক অফিস সহকারীর টেবিল থেকে ৫ হাজার ১০০ টাকা উদ্ধার করা হয় যার উৎস সম্পর্কে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এছাড়া, এক নকলনবিশ আগে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন।
এ ছাড়া খুলনা সদর সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে ছদ্মবেশে অভিযান চালিয়ে ঘুষ গ্রহণ, অতিরিক্ত অর্থ আদায়, রেকর্ডপত্রে অসঙ্গতি এবং দালালদের সক্রিয়তা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। কয়েকজনকে জেলা রেজিস্ট্রার বরাবর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সোপর্দ করা হয়। ময়মনসিংহ গৌরীপুর সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে একজন উমেদার সরকারের নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত অর্থ দাবি করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করা হয়।
চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে সাবেক এক অফিস সহকারীকে অনুমোদন ব্যতিরেকে বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাখ্যান এবং ১৯ জন নকলনবিশ নিয়োগে অনিয়মের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা রেজিস্ট্রারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। এছাড়া, এক পদোন্নতিতে সিনিয়রদের উপেক্ষা ও দূরবর্তী কর্মকর্তা দ্বারা অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদানের প্রেক্ষিতে রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছে। ঠাকুরগাঁও লাহিড়ী সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে বায়না ও কবলা দলিল সম্পাদনে অনিয়ম এবং নকল পেতে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
বরিশাল সদর সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে চর বদনা মৌজায় নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও দলিল সম্পাদন এবং উৎস কর জমা না দিয়েই দলিল সম্পাদনের তথ্য পাওয়া গেছে যা পরবর্তীতে প্রমাণ ছাড়াই সমন্বয় করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। টাঙ্গাইল কালিহাতী সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে সাবেক সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে অসাধু উদ্দেশ্যে হয়রানি ও সামান্য তথ্যগত অমিল দেখিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শরীয়তপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে শ্রেণি পরিবর্তনের মাধ্যমে দলিল রেজিস্ট্রেশন করে ৩৮ লাখ ৮৩ হাজার ৫০৫ টাকা রাজস্ব ক্ষতির তথ্য প্রমাণসহ উদঘাটিত হয়।
এছাড়াও, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর. জামালপুরের সরিষাবাড়ি, বগুড়ার কাহালু, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, ঝালকাঠির রাজাপুর, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, কিশোরগঞ্জের ইটনা, গাজীপুর সদর, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট, টাঙ্গাইলের কালিহাতী, নওগাঁ সদর, পাবনা সদর, নারায়ণগঞ্জ সদর, নোয়াখালী সদর, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, রংপুরের গঙ্গাচড়া, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী, পটুয়াখালীর বাউফল এবং ঢাকা মিরপুরের (বিশিল) সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে সরকার নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত অর্থ আদায়, হয়রানি, দালাল চক্রের সক্রিয়তা এবং রেকর্ডপত্রে অসঙ্গতির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।
এসব অভিযানে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে এনফোর্সমেন্ট টিমসমূহ কমিশন বরাবর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করবে।