ঢাকা, ১৯ মে ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সঙ্গে কখন আপস হবে না। কেউ আপস করতে গেলেও তা রুখে দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করেছে বিএনপিকে। দলের চেয়ারপার্সনকে বিনা কারণে কারাগারে রেখেছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নির্বাসনে রেখেছে। মহাসচিবসহ এমন কোনো নেতাকর্মী নেই যার বিরুদ্ধে মামলা দেয়নি। অথচ আলোচনা হচ্ছে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন করছে বিএনপি । এটা কী সম্ভব? আমরা বেঁচে থাকতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আপস হবে না।
আজ সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম মিলনায়তনে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করণ ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের দাবিতে এক সভায় নজরুল ইসলাম খান এসব কথা বলেন। ১২ দলীয় জোট এ সমাবেশের আয়োজন করে।
ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে কিন্তু গণতন্ত্র এখনো পুনরুদ্ধার হয়নি উল্লেখ করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন করে যাচ্ছে। এই আন্দোলনে জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী ১৭শ‘র বেশি মানুষ মারা গেছেন।
তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে সহস্রাধিক মানুষ খুন হয়েছে। লাখ লাখ মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। হাজারো মানুষ আহত ও অঙ্গহানির শিকার হয়েছে। অনেকেই হয়রানি ও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপরও আন্দোলন করেছি। যার মূল লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা ও ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটানোর। শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল গণতন্ত্রকামী মানুষ এই লড়াইয়ে শরিক হয়েছিলো। তবে জনগণের নির্বাচিত সরকার তথা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়নি।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে দেশে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সেজন্য রাষ্ট্রের কিছু মেরামত প্রয়োজন। আর এই রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা বিএনপিই প্রথম সবার সামনে উপস্থাপন করেছে। ২০১৭ সালে খালেদা ‘ভিশন-২০৩০‘ ঘোষণা করেছিলেন । এরপর ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই তারেক রহমান ২৭ দফা রূপরেখা ঘোষণা করেন। যেটি সকল দলের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তীতে ৩১ দফা করা হয়েছে। আজ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কার প্রস্তাব করছে সেগুলো আমাদের ৩১ দফার মধ্যে রয়েছে।
বিএনপি জনগণের ভোটে রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে ৩১ দফা বাস্তবায়ন করা হবে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, কখনো জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গেলে ৩১ দফা রূপরেখা বাস্তবায়ন করবে তার দল। দুইবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না, ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার কথা বিএনপিই বলেছে। কারণ, বিএনপি চায় রাষ্ট্র ভালো চলুক। যাতে কেউ একক ক্ষমতার অধিকারী না হতে পারে।
রাজনৈতিক দলগুলো যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে তার ভিত্তিতে সনদ তৈরি করে দ্রুত ভোটের আয়োজন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সংস্কার চাই। তবে সেটি অবশ্যই প্রয়োজন এবং সক্ষমতা অনুযায়ী হতে হবে। ঐকমত্য কমিশনে আমরা যারা ঐকমত্য পোষণ করেছি সেটার একটা তালিকা করে সনদ করা হোক।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোট প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিটুর সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, জোটের সমন্বয়ক বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, লেবার পার্টি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, ইসলামী ঐক্য জোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করিম প্রমুখ।