চট্টগ্রাম, ১ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনায় ইসকনের সাবেক সংগঠক চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে প্রধান আসামি করে ৩৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। অভিযুক্তদের বেশিরভাগই চিন্ময়ের অনুসারী।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি অঞ্চল) মাহফুজুর রহমান অভিযোগপত্র চট্টগ্রাম আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় জমা দেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজুর রহমান বলেন, ‘আলিফ খুনের মামলার চার্জশিট পেয়েছি। চিন্ময় দাসকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত ও তদন্তে প্রাপ্ত হিসেবে মোট ৩৮ জন আসামির নাম আছে চার্জশিটে। চারজনকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। আমরা মামলার আগামী ধার্য তারিখে চার্জশিট আদালতে দাখিল করব।’
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী বলেন, ‘আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ৩৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। এই মামলায় চিন্ময় দাস এজাহারনামীয় আসামি ছিলেন না। গত ৫ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তে সম্পৃক্ততা পাওয়াার তথ্য উল্লেখ করে চিন্ময়কে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেন। আদালত গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন। এরপর আদালতের অনুমতি নিয়ে ওই মামলায় চিন্ময়কে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদও করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
গত বছরের ২৫ অক্টোবর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে সনাতনী সম্প্রদায়ের একটি বড় সমাবেশ হয়। এর কয়েকদিন পর ৩১ অক্টোবর চিন্ময়ের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়। এ মামলায় আরও ১৮ জনকে আসামি করা হয়। একই বছরের ২২ নভেম্বর চিন্ময়ের নেতৃত্বে রংপুরে আরও একটি বড় সমাবেশ হয়। রাষ্ট্রদ্রোহের সেই মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরদিন তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন চট্টগ্রামের আদালত। সেদিনই চিন্ময় দাসের আইনজীবীরা ওই আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন চেয়ে আবার জামিন আবেদন করেছিলেন। তার জামিন ঘিরে সংঘর্ষে জড়ান চিন্ময়ের ভক্তরা। তবে সংঘর্ষের সময় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে একজন আইনজীবীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
পরবর্তীতে আইনজীবী আলিফ হত্যার ঘটনায় তার বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আলিফ হত্যার আসামিদের মধ্যে চন্দন দাস, রিপন দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য্য আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, আইনজীবীর ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস। আর কিরিচ দিয়ে কোপান চন্দন দাস। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এই আইনজীবীকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ ও বঁটি দিয়ে তারা ১৫ থেকে ২০ জন পিটিয়ে হত্যা করেন।