ঢাকায় নগর জলবায়ু ও দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমন হাবের উদ্বোধন

বাসস
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫, ১৮:১৯
ছবি : বাসস

ঢাকা, ২ জুলাই, ২০২৫(বাসস) : জলবায়ু পরিবর্তন, অতিরিক্ত তাপমাত্রা, প্রবল বন্যা এবং সামাজিক বৈষম্যের ফলে বিশ্বের শহরগুলোতে পরিবেশগত বিপর্যয় মোকাবেলায় ঢাকা নগর জলবায়ু ও দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমন হাবের উদ্বোধন করা হয়েছে।

আজ বুধবার দুপুরে অক্সফাম বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন ইউনিভার্সিটির উদ্যোগে রাজধানীর একটি হোটেলে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। এসময় স্থানীয় সরকারের বিভাগের সচিব, ঢাকার দুই সিটির প্রশাসক, অক্সফামের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর, অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন ইউনিভার্সিটির দুইজন অধ্যাপকসহ গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।

আয়োজকরা জানান, বর্তমানে বিশ্বের ৫৮শতাংশ মানুষ শহরে বসবাস করে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ৭০ শতাংশে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শহরগুলো বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত মোট জ্বালানির ৭৫ শতাংশ এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের ৭০ শতাংশেরও বেশি উৎপন্ন করে। শহরগুলো আজ উত্তপ্ত আবহাওয়া, বায়ু দূষণ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও বন্যার সরাসরি শিকার। ২০২৪ ছিল ইতিহাসে সর্বাধিক উষ্ণ বছর, যেখানে ঢাকা শহরের বস্তিবাসীদের মতো প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ধনীদের তুলনায় ১০ গুণ বেশি জলবায়ু ঝুঁকির মুখে পড়ে।

অক্সফাম বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশীষ দামলে বলেন, ‘ঢাকার মতো শহরগুলো একাধিক সংকটের মধ্যে রয়েছে— প্রচণ্ড গরম, বায়ু দূষণ, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং ঘন ঘন জলবায়ুজনিত দুর্যোগ। এই সংকট সবচেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকেই বেশি বিপদে ফেলছে।’

তিনি বলেন, এই হাবের মূল লক্ষ্য হলো গবেষণা, অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিগত সহায়তা, সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ এবং কমিউনিটি ভিত্তিক উদ্ভাবনের মাধ্যমে শহরগুলোর জলবায়ু ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস করা।

কার্টিন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মার্টিন ভ্যান ক্রানেনডঙ্ক বলেন, গত কয়েকদিনে বাংলাদেশে অবস্থান করে আমি অভিভূত হয়েছি—এই দেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব, নগর সমস্যা এবং জলবায়ু দুর্যোগ মোকাবেলার জটিলতা দেখে প্রথমে চমকে গিয়েছিলাম। তবে পরে উপলব্ধি করেছি, সমস্যাগুলোর গভীরতা নয়, বরং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সীমাবদ্ধতাই বড় চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, যদিও বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া উভয়ই ভৌগোলিকভাবে আলাদা। তবুও এই দুই দেশ উষ্ণতা বৃদ্ধি, নগরায়ণ, এবং আবাসস্থল ধ্বংস-একই ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি । প্রযুক্তি আমাদের হাতে আছে, কিন্তু এখন দরকার সেই প্রযুক্তিকে সঠিক জায়গায় প্রয়োগ করা। সেখানেই আমরা বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে চাই।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব এবং অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বলেন, একদিন জাতিসমূহের শক্তি পরিমাপ করা হবে-না অর্থনৈতিক,না কূটনীতিক দক্ষতা, না জনমতকে বিভ্রান্ত করার ক্ষমতার পরিধি দিয়ে। বরং পরিমাপ করা হবে মানুষের শক্তিতে, মানুষের জ্ঞানের স্তরে, শিক্ষার মানে, পুষ্টির পর্যায়ে। আমাদের যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, আদিবাসী, শিশুসহ ঝুঁকিপূর্ণ নাগরিকদের কথা বিবেচনা করতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ জরুরি। তবেই বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান বদলে যাবে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, বর্তমানে জলবায়ু সংকটের প্রেক্ষাপটে আমাদের নগরায়নের যে প্রক্রিয়া চলছে, তা সরাসরি অভিবাসনের সঙ্গে জড়িত। আর এই অভিবাসনের অধিকাংশই জলবায়ু জনিত কারণে ঘটছে। যারা জলবায়ু অভিবাসী, তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা উচিত- কারণ এটি ন্যায্যতা ও সুবিচারের বিষয়। তাদের আবাসন ও স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলায় নগর প্রশাসনের সহায়তা প্রদান করা উচিত।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, এক সময় ঢাকায় টানা ৭ দিন বা তারও বেশি সময় ধরে বৃষ্টি হতো, তবে তা ছিল ধীরে ধীরে পড়া গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। কিন্তু এখন একদিনেই বৃষ্টি হয় তীব্রতার সঙ্গে— এক দিনে ১৯৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের অবকাঠামো এই পরিমাণ পানি ধারণ করতে পারছে না। এই পরিবর্তনগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি।

সভায় বাংলাদেশে সুইডিশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ও ডেপুটি হেড অব ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন নাইয়োকা মার্টিনেজ-বেকস্ট্রোম বলেন, আমি চার বছর আগে বাংলাদেশে এসেছিলাম এই আশা নিয়ে যে, আমরা নগর সমস্যা নিয়ে কাজ করব। কিন্তু বাংলাদেশে যখন আপনি জলবায়ু বিষয় নিয়ে কাজ করেন, তখন আপনি দেখবেন একটি গ্রামীণ পক্ষপাত রয়েছে। অথচ নগর এলাকাও অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। নগর এলাকায় দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি গ্রামীণ এলাকা থেকেও বেশি হয়। তাই গ্রামের পাশাপাশি শহরগুলোতেও দুর্যোগ মোকাবেলা  ও ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি বাড়াতে হবে।

অনুষ্ঠানে অক্সফামের ক্লাইমেট জাস্টিস অ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্স রাইটস বিভাগের প্রধান ড. মোহাম্মদ এমরান হাসান এবং কার্টিন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. আশরাফ দেওয়ান হাবের প্রেক্ষাপট, লক্ষ্য এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন। 

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অক্সফামের হেড অব ইনফ্লুয়েন্সিং, কমিউনিকেশনস, অ্যাডভোকেসি ও মিডিয়া মো. শরীফুল ইসলাম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
সিভাসুতে ‘হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন-২০২৫’ শুরু
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধনের অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ
বাস-মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে এনজিও কর্মকর্তা নিহত
ক্ষমতার পালাবদল নয়, অভ্যুত্থান হয়েছে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য : নাহিদ ইসলাম
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে তরুণদের অংশগ্রহণে আইডিয়া প্রতিযোগিতা
অপারেশন ঈগল হান্ট মামলায় সাবেক এসপি আসাদ দুই দিনের রিমান্ডে
সাবেক গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর এপিএস রাশেদ গ্রেফতার
ট্রাম্পের বিতর্কিত ট্যাক্স বিল পাসে চূড়ান্ত ভোটাভুটি হতে যাচ্ছে
আইজিপির সাথে ইউনেস্কো প্রতিনিধির সাক্ষাৎ
ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিস স্থাপনের আলোচনা চলছে : তৌহিদ
১০