\ মুহাম্মদ নূরুজ্জামান \
খুলনা, ২৪ আগস্ট ২০২৫ (বাসস) : জেলার বিলডাকাতিয়ার জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প হাতে নিয়েছে খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
পাউবো কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে জরুরি ভিত্তিতে শৈলমারী গেটের মুখ থেকে সালতা মোহনা পর্যন্ত পলি অপসারণের কাজ চলমান রয়েছে। ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দের এই প্রকল্পটি চলতি আগস্ট মাসের প্রথম দিকে শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা ডিভিশন- ১।
সূত্র আরো জানায়, চলতি বর্ষা মৌসুমে এই প্রকল্পের কাজ চলমান থাকবে। অর্থাৎ যখন যেখানে পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজন হবে তখন সেখানে পলি অপসারণের কাজ করা হবে। তবে, বর্ষা মৌসুম শেষ হলে এলাকার জলাবদ্ধতা কমে গেলে প্রকল্পের কাজও বন্ধ রাখা হবে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এলাকাবাসী সাময়িকভাবে জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্তি পাবেন। এমনকি এই বর্ষা মৌসুমে তাদের ঘের, পুকুর, ঘরবাড়ি এবং ফসল ফলাদিও জলাবদ্ধতার ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে।
পাউবো খুলনা বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল কুমার সেন বাসসকে বলেন, ‘বিলডাকাতিয়ার জলবদ্ধতা নিরসনে তিনটি ধাপে কাজ বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চলমান বর্ষা মৌসুমে জরুরি ভিত্তিতে স্বল্প মেয়াদী পলি অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। সবগুলো পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে বিলডাকাতিয়ার জলাবদ্ধতা নিরসন।’
তিনি বলেন, শৈলমারী গেটের মুখ থেকে সালতা মোহনা পর্যন্ত পলি অপসারণে চলমান ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দের এই প্রকল্পটি রাজস্ব বিভাগের অর্থে পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া পানি নিষ্কাশনের জন্য দুটি ৩৫ কিউসেক পাম্প চালু আছে। জোয়ারের সময় এসব পাম্প চালানো হয় এবং ভাটায় জলকপাট দিয়ে পানি বের করে দেওয়া হয়।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আরো জানান, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে সংশ্লিষ্ট এলাকা স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হবে। একইসাথে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাছের ঘের, ফসল, খেত খামার, রাস্তা-ঘাট এবং ঘরবাড়িসহ সবকিছুই জলাবদ্ধতামুক্ত হবে। তবে নদী খননসহ অন্যান্য মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও অর্থ ছাড়ের পর শুরু হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সাল থেকে বিলডাকাতিয়ার মানুষ পানির সাথে সংগ্রাম করে বেঁচে আছে। গত দুই বছর ধরে ভয়াবহভাবে পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে বিলডাকাতিয়াসহ ডুমুরিয়া-ফুলতলা উপজেলার একটি বৃহৎ অংশ। এসব অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ শৈলমারী ১০ ভেন্ট রেগুলেটর। কিন্তু সম্প্রতি পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে শৈলমারী ও ভদ্রা নদী। যার কারণে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। বর্তমানে ডুমুরিয়া উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় জীবনযাপন করছে ।
পাউবো খুলনা-১ এর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিলডাকাতিয়ার জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এ উপলক্ষে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে শৈলমারী নদীর সাড়ে ১৫ কিলোমিটার ড্রেজিং, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচটি পাম্প স্থাপন এবং ২৪টি খাল পুনঃখনন প্রকল্পের সমীক্ষা চলমান রয়েছে। নদী ও খাল খননের ক্ষেত্রে পরিবেশগত ছাড়পত্র এবং পরিবেশগত অন্যন্য বিষয় বিবেচনায় সমীক্ষাটি শেষ করতে আরো দুই মাস সময়ের প্রয়োজন হবে। এরপরই উল্লিখিত ৫০ কোটি টাকার প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড়ের অনুমোদন হলে কাজটি শুরু হবে। পাউবো খুলনা বিভাগ-১ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, খুলনার বিলডাকাতিয়ার দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকার সম্ভাব্যতা সমীক্ষা (ফিজিবিলিটি স্টাডি) শুরু করেছে। ডুমুরিয়ার শৈলমারী নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য নদী ড্রেজিং, ২৪টি খাল পুনঃখনন এবং ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পগুলোর ওপর এক সমীক্ষা চলছে। সমন্বিতভাবে এলাকার পানি কীভাবে নিষ্কাশন করা যায় সেই লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে। বাস্তবায়ন হলে জলাবদ্ধতা নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হবে। সম্প্রতি ডুমুরিয়ার শৈলমারী রেগুলেটর পরিদর্শনকালে তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি বিলডাকাতিয়ার পানি কালিঘাট রেগুলেটর দিয়ে ময়ূর নদীতে নিষ্কাশনে পূর্বের বাধা নিরসন করে উভয় পক্ষের সমন্বয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানপূর্বক রেগুলেটর খুলে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং কালিঘাট খালের অবৈধ বাঁধ অপসারণে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেন।
এলাকাবাসী জানায়, প্রতিবছর বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যাচ্ছে ডুমুরিয়া। এতে হাজার হাজার মৎস্য ঘের তলিয়ে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সবজি। বর্তমানে ডুমুরিয়ার কমপক্ষে ৭টি ইউনিয়ন পানির নীচে। পানিতে তলিয়ে যাওয়া ডুমুরিয়া সদরের খলশী, মির্জাপুর ও মাধবকাঠী বিলসংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দারা মানবেতর জীবন যাপন করছে।
ডুমুরিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি এস. এম. জাহাঙ্গীর আলম আগামী ৭ দিনের মধ্যে শোলমারীর ১০টি রেগুলেটর সচল করার জন্য জোর দাবি জানান। কচুরিপানা কাটার মেশিন নষ্ট হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি দ্রুত ডুমুরিয়া সদরের বিভিন্ন খালের কচুরিপানা কাটার ব্যবস্থা গ্রহণে উপজেলা প্রশাসনকে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।