চট্টগ্রাম, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : আয়ের উৎস আড়াল করে ব্যাংকে ৯৪৮ কোটি ৮৮ লাখ ৮৩ হাজার ৮৩৮ টাকার ‘সন্দেহজনক’ লেনদেন এবং ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জনে আওয়ামী লীগ দলীয় সীতাকুণ্ডের সাবেক সংসদ সদস্য দিদারুল আলম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মালেক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এ আলাদাভাবে দুটি মামলা দায়ের করেছেন।
দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর মধ্যে একটি মামলায় শুধুমাত্র দিদারুল আলমকে আসামি করা হয়েছে। আরেকটি মামলায় স্ত্রী ইসমত আরা বেগমের সঙ্গে দিদারুল আলমকেও আসামি করা হয়েছে।
দিদারুল আলমের আয়কর নথি পর্যালোচনার তথ্য উল্লেখ করে দুদক মামলায় অভিযোগ করেছে, তিনি জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১৩ কোটি ৯৮ লাখ ৩৯ হাজার ৩০৭ টাকার সম্পদের মালিক।
গত ২০১০-১১ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত আয়কর নথিতে তিনি এমপি ভাতা, জাহাজ ভাঙা ও ক্যারিং ব্যবসা, মালিকানাধীন ব্যাংকের লভ্যাংশ, মাছ চাষ, জমি বিক্রি, ঘর ভাড়াসহ ২০টি খাত থেকে ৬৯ কোটি ৬২ লাখ ৭৩ হাজার ৪০৪ টাকা আয়ের তথ্য দেন। কিন্তু দুদক অনুসন্ধানে তার প্রদর্শিত আয়ের মধ্যে ১০ কোটি ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯২৮ টাকার সম্পদের কোনো উৎস পায়নি। এ হিসেবে তার বৈধ সম্পদের পরিমাণ ৪৩ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার ৪০১ টাকা।
আয়কর নথিতে তিনি ব্যয়ের পরিমাণ উল্লেখ করেন ১৫ কোটি ৯৬ লাখ ৭৫ হাজার ৭৫ টাকা। তাহলে ব্যয় বাদে তার নীট আয় বা সঞ্চয় ৫৩ কোটি ৬৫ লাখ ৯৮ হাজার ৩২৯ টাকা। কিন্তু দুদক অনুসন্ধানে তার নীট সম্পদের মূল্য পেয়েছে ৫৭ কোটি ৬০ লাখ ৮৯ হাজার ৭০৮ টাকা। অর্থাৎ অর্জিত সম্পদের চেয়ে তার জ্ঞাত আয়ের উৎস ১৩ কোটি ৯৮ লাখ ৩৯ হাজার ৩০৭ টাকা কম পাওয়া গেছে।
এছাড়া দুদক দিদারুল আলমের ২০টি ব্যাংক হিসেব যাচাই করে ৪৭৫ কোটি ৯৮ লাখ ২৭ হাজার ৫৪৩ টাকা জমা ও ৪৭২ কোটি ৯০ লাখ ৫৬ হাজার ১৯৫ টাকা উত্তোলনের তথ্য পায়। অর্থাৎ তিনি মোট ৯৪৮ কোটি ৮৮ লাখ ৮৩ হাজার ৮৩৮ টাকা আয়ের উৎস আড়াল করে হস্তান্তর ও স্থানান্তর করেছেন।
দুদক আইন ২৭ (১), দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ও মানিলন্ডারিং আইনের ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।
এদিকে দিদারুল ও ইসমতের বিরুদ্ধে করা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ইসমত আরা তার স্বামীর সহযোগিতায় জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার ৪৫০ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। এ সম্পদ তার স্বামী দিদারুল আলম সংসদ সদস্য থাকার সময় ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলায় বলা হয়েছে, ২০১৪-১৫ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত আয়কর নথিতে ইসমত আরা ৩ কোটি ১৮ লাখ ২৩ হাজার ১৪৩ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য উল্লেখ করেন। কিন্তু দুদক অনুসন্ধান করে বিভিন্ন খাত থেকে তার ২ কোটি ৩৮ হাজার ৫৭৩ টাকার বৈধ আয়ের তথ্য পায়। আর ব্যয়ের তথ্য পায় ২৯ লাখ ৭৫ হাজার ৮৮০ টাকার। তাহলে ব্যয় বাদে তার সঞ্চয়ের পরিমাণ ১ কোটি ৭০ লাখ ৬২ হাজার ৬৯৩ টাকা। এ হিসেবে প্রদর্শিত আয়ের চেয়ে তার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত ১ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার ৪৫০ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়।
অবৈধ সম্পদ ভোগদখলে রাখায় ইসমত আরার বিরুদ্ধে দুদক আইনের ২৭ (১) এবং অসৎ উপায়ে অর্জিত অর্থ স্ত্রীর নামে রেখে ভোগদখল করায় দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।