আল-আমিন শাহরিয়ার
ভোলা, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ (বাসস) : প্রতীক্ষার পর অবশেষে মিললো ইলিশের দেখা। উপকূলীয় জেলা ভোলার নদ-নদীতে এতদিন ছিল ইলিশের আকাল। জেলেদের মাঝে ছিল চরম হতাশা। অভাব-অনটন আর দূর্ভোগের মধ্যে ছিল জেলে পরিবারগুলো। আজ শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) ভোররাত থেকেই এখানকার মেঘনা,তেতুলিয়া, ইলিশা, কালাবাদর আর বেতুয়া নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ।
এতে করে যেমনি বেড়ে গেছে নদীতে ইলিশ ধরার কর্মব্যস্ততা তেমনি সরব হয়ে উঠেছে মাছের আড়ৎগুলো। জেলেরা জানিয়েছেন, নদী ও সাগরের মধ্যবর্তী ডুবোচরের কারণে এতোদিন সাগর থেকে নদীতে ইলিশসহ অন্যান্য প্রজাতির মাছ আসতে বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছিল। প্রবল জোয়ার আর উজানের পানির স্রোতে ডুবোচরগুলোর আকার প্রকৃতি ক্ষয় হয়ে ছোট হয়ে যাওয়ায় সাগর থেকে নদীতে ইলিশ প্রবেশের বাঁধা এখন দূর হয়ে গেছে। ফলে মেঘনা-তেতুলিয়ায় এখন সাগর থেকে বাধাহীনভাবে ইলিশের ঝাঁক আসছে। তাই মেঘনায় জেলেদের জালে এখন ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। এতে জেলে পাড়ায় বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
জেলেরা জানান, মৌসুমের শুরুতে ইলিশ ধরা না পড়লেও আজ থেকে হঠাৎ করে ধরা পড়তে শুরু করেছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। এতে ভোলা উপকূলের জেলেদের কর্মব্যস্ততা বেড়েছে গেছে।
জেলে, পাইকার আর আড়ৎদারদের হাঁকডাকে সরগরম হয়ে উঠেছে এ অঞ্চলের ইলিশের আড়তগুলো।
মাছের এমন সরবরাহ অব্যাহত থাকলে বিগত দিনের সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে আশা করছেন এখানকার মৎস্যজীবীরা।
জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,চলতি মৌসুমের শুরুটা তাদের ভালো কাটেনি। মেঘনায় ইলিশের সংকট থাকায় ধারদেনা করে চরম অভাবের মধ্যে পড়ছিলেন তারা। তবে এখন আর সেই চিত্র নেই।
আজ সকালে ভোলা সদরের মেঘনা পাড়ের তুলাতুলি মাছঘাটে গিয়ে কথা হয়, জেলে আবুল বাশার,মনোয়ার মাঝি,শরীফ ও বিল্লাল মাঝির সঙ্গে। তারা বলেন, আগে সারাদিন জাল বেয়ে এক থেকে দেড় হাজার টাকার ইলিশ পেতাম, এখন আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিবার মাছ শিকারে গিয়ে ১০/১২ হাজার টাকার ইলিশ পাচ্ছি আমরা। ভোলার কাঠির মাথা নামক এলাকার আড়গুলোতে গিয়ে দেখা গেছে,ঘাটে ইলিশের কেনাবেচার হিড়িক।। কেউ ইলিশের ওজন দিচ্ছেন, কেউ বরফজাত করছেন আবার কেউবা বা ঝুড়িতে সংরক্ষণ করছেন। এসব আড়ত থেকে জেলেদের আহরিত ইলিশ চলে যাচ্ছে ঢাকা ও বরিশালের বিভিন্ন মোকামে।
এভাবে ইলিশ ধরা পড়লে দীর্ঘদিনের সংকট দূর করতে পারবেন বলে আশাবাদী এখানকার জেলেরা।
ভোলার ইলিশা জেলে পল্লীর বাসিন্দা মিরাজ মাঝি, আলম মাঝি ও শাহীন মাঝি বলেন, এভাবে ইলিশ ধরা অব্যাহত থাকলে আগামী মৎস্য না ধরা অভিযানের আগেই আমাদের ধার দেনা পরিশোধ করা যাবে।
এদিকে ইলিশের সরবরাহ বাড়ায় আড়তে কেনাবেচার জমে উঠেছে, এতে আড়ৎদাররাও সন্তুষ্ট।
ভোলার রাজাপুর মাছঘাটের আড়তদার রফিকুল ইসলাম ও তরিক মিয়া বলেন, মৌসুমের শুরুতে না হলেও এবার ধরা পড়ছে ইলিশ। এতে জেলেরা লাভবান, আমরাও খুশি।
ভোলা সদরের অপর কয়েকজন আড়ৎদার জানালেন, আগে তুলাতলী ঘাটে প্রতিদিন এক লাখ টাকার ইলিশের কেনাবেচা হতো, আজ থেকে এখন তা বেড়ে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
শুধু তুলাতলী নয়, জেলার অধিকাংশ আড়তে এখন ইলিশ কেনাবেচা জমজমাট। এতে স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম কিছুটা কমবে বলে মনে করছেন ভোক্তারা।
এদিকে নদীতে ইলিশ ধরা পড়ায় ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে মনে করছেন এখানকার মৎস্য সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে ভোলার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বাসস'কে জানান, এ বছর ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। জেলেদের জালে যেহেতু ইলিশ ধরা পড়ছে,তাই আমরা আশাবাদি এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। তাছাড়া সাগর হতে নদীতে ইলিশ প্রবেশে ডুবোচরের বাঁধা এখন অনেকটাই সংকুচিত হয়েছে বলেও জানান, এই কর্মকর্তা।