প্রসিদ্ধ কাঁচাগোল্লা নাটোরের ঐতিহ্য 

বাসস
প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪১ আপডেট: : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৫২
নাটোরের কাঁচাগোল্লা। ছবি: বাসস

ফারাজী আহম্মদ রফিক বাবন

নাটোর, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : নাটোরের কাঁচাগোল্লা নাকি কাঁচাগোল্লার নাটোর। এই সিদ্ধান্ত অমীমাংসিত। তবে দেশের প্রসিদ্ধ মিষ্টির তালিকায় কাঁচাগোল্লা রাজত্ব করে যাচ্ছে আড়াইশ’ বছর ধরে।

নাটোরের কাঁচাগোল্লাকে ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) দেশের ১৭তম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। কাঁচাগোল্লা নাটোরের একমাত্র জিআই পণ্য।

কাঁচাগোল্লা সৃষ্টির পেছনে আছে মজার ইতিহাস। অর্ধ বঙ্গেশ্বরী খ্যাত নাটোরের রাণী ভবানীর প্রিয় খাদ্যের তালিকায় ছিল মিষ্টি। তার রাজপ্রাসাদে নিয়মিত মিষ্টি সরবরাহ করতেন শহরের লালবাজারের মিষ্টি বিক্রেতা মধুসূদন পাল। 

একদিন মধুসুদন পালের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মচারীই অসুস্থ হয়ে গেল। মিষ্টি তৈরির জন্য দুই মণ ছানা সংগ্রহ করা ছিল। ছানাগুলো নষ্ট হয়ে যাবে ভেবে মধুসূদন ছানার সঙ্গে চিনি মিশিয়ে উনুনে তাপ দেন। কারিগর ছাড়াই এলোমেলো এই আয়োজনে তৈরি হয় নতুন এক মিষ্টি। স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় নতুন এই মিষ্টিই পাঠিয়ে দেন রাণী ভবানীর রাজবাড়িতে। রাণী ভবানী এই মিষ্টি খেয়ে প্রশংসা করেন এবং এর নাম জানতে চান। মধুসূদন পাল তখন কাঁচা ছানা থেকে তৈরি বলে এর নাম দেন কাঁচাগোল্লা। এই হচ্ছে কাঁচাগোল্লা সৃষ্টির ইতিহাস। 

এই গল্প বেঁচে আছে শত শত বছর ধরে মানুষের মুখে মুখে। নাম গোল্লা হলেও এটি দেখতে গোল নয়, মুখ্য উপকরণ ছানা আর চিনির সংমিশ্রণে এক প্রকার সন্দেশ। কাঁচাগোল্লার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নাটোরবাসীর আবেগ ও ভালোবাসা। তাই আজ থেকে আড়াইশ’ বছর আগে তৈরি কাঁচাগোল্লা আজও সুনাম বজায় রেখেছে। নাটোরের বিয়ে, বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও অতিথি আপ্যায়নে সরবরাহ করা হয় কাঁচাগোল্লা। শুধু দেশে নয়, সারাবিশ্বেই নাটোরের কাঁচাগোল্লা প্রসিদ্ধ।

নাটোরের প্রসিদ্ধ জয়কালী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী প্রভাত কুমার পাল বলেন, জিআই পণ্য হওয়াতে আমাদের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে। আমরা নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাই, গুণগতমানের কাঁচাগোল্লা তৈরি করতে। আমাদের তিন পুরুষের ব্যবসায়। প্রতিদিন বিক্রি করি পঞ্চাশ থেকে ষাট কেজি কাঁচাগোল্লা। আর সারা শহরে ১২টি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন গড়ে বিক্রি ছয়শ’ কেজি।

শহরে সবচেয়ে বেশি কাঁচাগোল্লা বিক্রি হয় মৌচাক মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে। স্বত্বাধিকারী মো. আরিফ জানান, প্রতিদিন গড়ে বিক্রি একশ’ কেজি। দর কেজি প্রতি ছয়শ’ আশি টাকা। আমরা গুণগতমান অক্ষুণ্ন এবং আমাদের সুনাম বজায় রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

জলযোগ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারী জয়দেব ঘোষ জানান, ক্রেতাদের মধ্যে বেশিরভাগই নাটোরে বেড়াতে আসা মানুষ।

নাটোর মহারাজা জগদিন্দ্র নাথ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মাসুমা সুলতানা বলেন, কাঁচাগোল্লা নাটোরের ঐতিহ্যের স্মারক। বাড়িতে নাটোরের বাইরে থেকে অতিথি আসলে আপ্যায়নে কাঁচাগোল্লা রাখতেই হয়। আর আমরা যখন বাইরে বেড়াতে যাই, কাঁচাগোল্লার প্যাকেট নিয়ে যেতে ভুল করি না।

নাটোরের জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন বলেন, কাঁচাগোল্লার গুণগতমান বজায় রাখতে জেলা প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে উদ্বুদ্ধকরণ সভা করেছে। ভেজাল প্রতিরোধে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানও পরিচালনা করেছি।

জিআই পণ্য হিসেবে কাঁচাগোল্লা তালিকাভুক্তির মধ্য দিয়ে নাটোরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি দেশ-বিদেশে কাঁচাগোল্লার ব্র্যান্ডিং ও চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে উল্লেখ করেন জেলা প্রশাসক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
জুলাই জাদুঘর বিশ্বব্যাপী মডেল হিসেবে কাজ করবে : আইসেস্কো মহাপরিচালক
অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা গ্রেফতার
নারীর ক্ষমতায়ন বাস্তব নেতৃত্ব ও প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে প্রতিফলিত হতে হবে: শ্রম উপদেষ্টা
নৌবাহিনীর যৌথ অভিযানে খুলনায় আগ্নেয়াস্ত্রসহ সন্ত্রাসী আটক
ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমরা ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশি : আমীর খসরু
অহিংস আর মঙ্গলবারতায় চট্টগ্রামের আকাশে উড়ল প্রবারণার ফানুস
রাস্তা দখল ও হাসপাতালে চুরির ঘটনায় ৭ জনের কারাদণ্ড
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ
ইসি-মিডিয়া সংলাপ : স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের আহ্বান
খুলনায় যুব মহিলা লীগ সভাপতি তুলি গ্রেফতার
১০