দেলোয়ার হোসাইন আকাইদ
কুমিল্লা, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ (বাসস): জেলার পাড়া-মহল্লা সর্বত্র জুড়ে এখন দেবীর আগমনি সুর। শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে প্রতিটি মণ্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। কোথাও প্রতিমায় তুলির আঁচড়ে যুক্ত হচ্ছে রঙের শৈল্পিক ছোঁয়া। কোথাও আবার চলছে প্যান্ডেল সাজানোর কাজ।
এ বছর কুমিল্লা জেলায় ৮১৮টি পূজামণ্ডপে দুর্গোৎসব উদ্যাপিত হবে। গত বছরের চেয়ে এ বছর জেলায় পূজা মণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে ৬৪টি। পূজা উদ্যাপন পরিষদ নেতারা বলছেন, মণ্ডপের সংখ্যা বৃদ্ধিই প্রমাণ করে মানুষের আগ্রহ, অংশগ্রহণ ও সামাজিক সম্প্রীতির বিস্তার ঘটছে।
শরতের কাশফুল ফোঁটার সাথে সাথে যেমন প্রকৃতির মধ্যে এক মায়াময় অনুভবের দোলা তৈরি হয়, তেমনি শারদীয় দুর্গপূজার মণ্ডপগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে উৎসবের আমেজ। মৃৎশিল্পীরা দিনরাত প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্থানীয় কারিগরের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও শিল্পীরা কুমিল্লায় এসে প্রতিমা তৈরি করছেন।
প্রতিটি মণ্ডপের জন্য তৈরি হচ্ছে দেবী দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, মহিষাসুরসহ অন্যান্য প্রতিমা। শিল্পীদের সুনিপুণ ছোঁয়া ও তুলির আঁচড়ে দেবী দুর্গা ক্রমেই অনিন্দ্যসুন্দর রূপে প্রতিভাত হচ্ছে।
পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, শিল্পী, স্বেচ্ছাসেবক ও পূজা কমিটির সদস্যদের নিরলস পরিশ্রমেই প্রতিটি মণ্ডপ দেবী আগমনের প্রতীক্ষায় প্রস্তুত হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট কুমিল্লা মহানগর শাখার আহ্বায়ক শ্যামল কৃষ্ণ সাহা পূজার প্রস্তুতি সম্পর্কে বাসসকে বলেন, মণ্ডপের সংখ্যা বৃদ্ধিই প্রমাণ করে কুমিল্লায় পূজা উদযাপনের পরিধি বেড়েছে। মানুষ এখন আরও আগ্রহীভাবে এই উৎসবে যুক্ত হচ্ছে।
তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রতিটি মণ্ডপে পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক ও সিসিটিভি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। শারদীয় দুর্গোৎসব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও পূজা কমিটির মধ্যে নিয়মিত সমন্বয় করা হচ্ছে।
নগরীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে র্যাব-১১, সিপিসি-২ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম জানান, পূজার সময় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
তিনি বলেন, পূজা মণ্ডপে র্যাবের নিয়মিত টহল থাকবে। পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি, সিসিটিভি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ এবং জরুরি প্রয়োজনে মোবাইল টহল পরিচালনার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কুমিল্লা শহরসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিশেষ টহলের ব্যবস্থা থাকবে। এবার কুমিল্লার প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপে থাকবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান বলেন, পূজা উপলক্ষে পুলিশের নিরাপত্তা পরিকল্পনা তিন ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। পূজার প্রস্তুতির সময়, পূজা চলাকালে এবং বিসর্জনের সময়।
তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ মণ্ডপে ফিক্সড পুলিশ স্ট্যান্ড থাকবে। ডিবির কুইক রেসপন্স টিম ও গোয়েন্দা টিম সার্বক্ষণিক কাজ করবে। যাতে কেউ গুজব ও অপপ্রচার ছড়াতে না পারে সেজন্য সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরের জন্য একটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার বাসসকে বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গোৎসব সম্পন্ন করতে প্রতিটি মণ্ডপে আনসার, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা প্রতিটি মণ্ডপের সিসি ক্যামেরা কার্যক্রম সরাসরি তদারকি করবেন। তিনি আরও জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত মনিটরিং টিম মাঠে থাকবে।
কুমিল্লা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হাজী আমিন-উর রশিদ ইয়াছিন বাসসকে বলেন, বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। এখানে সব ধর্মের মানুষ সমানভাবে ও স্বাধীনভাবে ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছে। বিএনপি সবসময় সম্প্রীতির রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। আমরা চাই, কুমিল্লাসহ সারাদেশে দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হোক। তিনি জনগণকে কোনো উসকানি বা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে মিলেমিশে উৎসব উদযাপনের আহ্বান জানান।
২৭ সেপ্টেম্বর, শনিবার পঞ্চমী তিথি থেকে শুরু হবে শারদীয় দুর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা। কুমিল্লার প্রতিটি মণ্ডপ এখন সময়ের সীমানা ছাড়িয়ে ছুটে চলছে দেবীর মহা আগমনের প্রত্যাশায়। ঢাকের বাদ্য, ধুনুচির নৃত্য, সিঁদুর খেলা আর অঞ্জলির প্রার্থনায় কুমিল্লা ভেসে উঠবে এক অখণ্ড আনন্দ-উৎসবে।