চট্টগ্রামে ১৯০৬ মণ্ডপে দুর্গাপূজা, শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত শিল্পীরা

বাসস
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:৪৬
মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে রঙ-তুলির আঁচড়ে প্রতিমার পূর্ণাঙ্গ অবয়ব ফুটিয়ে তোলার মহাযজ্ঞ। ছবি : বাসস

চট্টগ্রাম, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতি চট্টগ্রামে পুরোদমে চলছে। এবার চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় মোট ১ হাজার ৯০৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা পালন করা হবে। বর্তমানে নগর এবং জেলার বিভিন্ন মণ্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরি, প্যান্ডেল নির্মাণ এবং সাজসজ্জার ব্যাপক প্রস্তুতি। শিল্পী ও কারিগররা পার করছেন ব্যস্ত সময়। মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে রঙ-তুলির আঁচড়ে প্রতিমার পূর্ণাঙ্গ অবয়ব ফুটিয়ে তোলার মহাযজ্ঞ। মূর্ত হয়ে উঠছে প্রতিমার রূপ। 

গতকাল রোববার ছিল শুভ মহালয়া। মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবী পক্ষের শুরু হয়। দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় আয়োজন শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠীর মাধ্যমে শুরু হবে মূল উৎসব।

হিন্দুদের আচার অনুযায়ী মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা- এই তিন পর্ব মিলে দুর্গোৎসব। মহালয়ায় মণ্ডপে-মণ্ডপে চণ্ডীপাঠ, মঙ্গলঘট স্থাপন, ঢাক-কাঁসা ও শঙ্খ বাজিয়ে দেবীকে আহ্বানের মধ্য দিয়ে সূচনা হবে দুর্গোৎসবের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনো কোনো প্রতিমার ওপর শিল্পীর তুলির শেষ আঁচড় পড়ছে। আর কোনো কোনো পূজা উদযাপন কমিটি তাদের অর্ডার করা প্রতিমা মণ্ডপে বসানোর জন্য নিয়ে গেছেন। পুরোদমে চলছে দুর্গোৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি। নগরীর টেরিবাজার, রিয়াজউদ্দিন বাজার এবং শপিংমলগুলোতেও ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে।

চট্টগ্রাম জেলায় এবার সর্বজনীন দুর্গাপূজা মণ্ডপের সংখ্যা গত বছরের চেয়ে ১৯টি বেড়ে ১ হাজার ৬১৪টি হয়েছে। অন্যদিকে মহানগরে একটি কমে ২৯২টি সর্বজনীন পূজার আয়োজন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পূজা উদযাপনের সার্বিক নিরাপত্তায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অধিকাংশ মণ্ডপে লাগানো হচ্ছে সিসিটিভি ক্যামেরা।

সদরঘাট কালীমন্দির এলাকার প্রতিমাশিল্পী তপন পাল বলেন, ‘গত প্রায় চার মাস আগে থেকে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছি। এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের তুলির আঁচড়। একেকটি প্রতিমা ২৫ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করি। কোনো কোনো পূজা কমিটি এরই মধ্যে তাদের প্রতিমা ডেলিভারি নিতে শুরু করেছে।’ 

তিনি জানান, তারা এবার পূজার জন্য প্রায় ২০০ প্রতিমা তৈরি করেছেন। কারণ, তারা শুধু চট্টগ্রাম নয়, আশপাশের জেলার প্রতিমার চাহিদাও মিটিয়ে থাকেন।

তপন পাল আরো জানান, রাতে নির্বিঘ্নে কাজ করা যায় বলে প্রতিমাশিল্পীরা রাতভর কাজ করেন। দিনের বেলায় ঘুমান। শিল্পীরা রাতে কাজ করতে পছন্দ করেন বেশি।

নগরীর দেওয়ানজীপুকুর পাড়ের রূপশ্রী শিল্পালয়, হাজারী লেনের মহামায়া স্টুডিও, সদরঘাটের লোকনাথ শিল্পালয়, নটরাজ শিল্পালয়, স্বর্গীয় দুলাল পাল প্রতিমালয়— সবখানেই শিল্পীর রঙ-তুলির বর্ণিল কারুকাজে মূর্ত হয়ে উঠছে প্রতিমার রূপ। দিন-রাত চলছে কাজ, দম ফেলার অবসরটুকু নেই শিল্পীদের।

কয়েকটি শিল্পালয় ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটিতে ১৫ থেকে ৪০টি পর্যন্ত প্রতিমা তৈরি করা হচ্ছে। শিল্পালয়ের চারপাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে দেবী দুর্গার প্রতিমা এবং লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশ। মাটির কাজ শেষ হয়ে গেছে। এখন চলছে রঙের খেলা। এরপর সাজসজ্জা। তারপর মহাষষ্ঠীর দিনে মৃন্ময়ী মূর্তি যাবে মণ্ডপে-মণ্ডপে।

নগরীর এনায়েত বাজার গোয়ালপাড়া এলাকার মৃৎশিল্পী বিশ্বজিত পাল বলেন, ‘আমরা আষাঢ়ের শুরু থেকে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছি। মাটি আর রঙের কাজ আমাদের শেষ হয়ে গেছে। এখন প্রতিমা সাজাচ্ছি। এরপর গহনা আর শাড়ি পরানো হবে। এবার আমরা ১৪টি মণ্ডপের জন্য প্রতিমা তৈরি করেছি।’

চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিয় মজুমদার দোলন বলেন, ‘এবার জেলায় সর্বজনীন মণ্ডপের সংখ্যা ১৯টি বেড়ে ১ হাজার ৬১৪টি হয়েছে।

আমরা তিন মাস আগে থেকেই পূজার প্রস্তুতি নিয়েছি। পূজার ছুটি দুই দিন হওয়াতে উৎসবের মাত্রা বাড়বে।’ এবারের পূজায় কোনো ধরনের বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা তাদের মাঝে নেই বলেও জানান তিনি।

চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিখিল কুমার নাথ জানান, এবার সর্বজনীন পূজামণ্ডপের সংখ্যা ২৯২টি। আমরা ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র, সিএমপি কমিশনার, জেলা প্রশাসকের সঙ্গে মিটিং করেছি। সেখানে সুন্দরভাবে দুর্গোৎসব ও প্রতিমা বিসর্জনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পূজা উদযাপনের সব প্রস্তুতি আমাদের সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, সুন্দরভাবে পূজা সম্পন্ন হবে।

শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব দে পার্থ বলেন, ‘এবার শারদীয় দুর্গাপূজাকে উৎসবমুখর ও নিরাপদ করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পূজা মণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা, নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক এবং শৃঙ্খলার জন্য মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, বিএনপির নেতারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তারাও আমাদের সঙ্গে নিরাপত্তা দিতে মণ্ডপ টিম গঠন করেছে। সরকারের সার্বিক সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে। আশা করি শান্তিপূর্ণভাবে আমরা দুর্গাপূজা সম্পন্ন করতে পারব।’

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিরাপত্তা বিবেচনায় এবার পূজামণ্ডপকে তিনভাগে ভাগ করে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ এবং সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে ১ হাজার ৪৪০টি পূজামণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। বাকিগুলোতেও কঠোর নজরদারি রাখা হবে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তায় ১৭ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ০১৩২০ ১০৮৩৯৮ নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হয়।

উল্লেখ্য, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব শুরু হবে। ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে সমাপ্তি হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
দুর্গাপূজা উপলক্ষে খাগড়াছড়িতে সেনাবাহিনীর শুভেচ্ছা উপহার প্রদান
খুলনায় জাতীয় মহিলা সংস্থার উদ্যোগে প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে চেক বিতরণ
বাংলাদেশি যুবকদের দক্ষতা প্রশিক্ষণে সহায়তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করল কানাডা
সাবেক আইজিপি বেনজীরের ক্যাশিয়ার জসিমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
বরিশালে নবনির্মিত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র হস্তান্তর করল জাপান
চীনা রাষ্ট্রদূতের সাথে ডাকসু নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎ
পূজামন্ডপের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মাঠে থাকবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
প্রবাসীদের পোস্টাল ভোটিং প্রক্রিয়া প্রকাশ করেছে ইসি
বাংলাদেশকে সক্ষমতা বৃদ্ধি, নীতিগত ধারাবাহিকতা ও বৈশ্বিক সহযোগিতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে: সিপিএ চেয়ারম্যান
খুলনায় তৃণমূল নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ভাতার চেক বিতরণ
১০