অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুদৃষ্টির আশায় পুনর্ভবা তীরের ৪০০ পরিবার

বাসস
প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:৫৩ আপডেট: : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:০৫
দিনাজপুর সদর উপজেলার মধ্যে অবস্থিত পুনর্ভবা নদীর ভাঙনে সৃষ্ট চরে প্রায় ১৫ বছর ধরে বাস করছে অনেক ভূমিহীন পরিবার। ছবি : বাসস

।। রোস্তম আলী মন্ডল।।

দিনাজপুর, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫(বাসস): নির্ধারিত কিংবা অনির্ধারিত মেয়াদে নির্বাচন হয়। রাজা যায়, রাজা আসে । কিন্তু জীবনমানের পরিবর্তন হয়না দিনাজপুর সদর উপজেলার পুনর্ভবা নদী তীরবর্তী ৪০০ পরিবারের ৩০০০ বাসিন্দার। তাদের বিশ্বাস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হস্তক্ষেপে তাদের দিন বদলাবে। 

দিনাজপুর সদর উপজেলার মধ্যে অবস্থিত পুনর্ভবা  নদীর ভাঙনে সৃষ্ট চরে বসতি গড়ে ওঠা এই গ্রামটি খামারঝাড় বাড়ী নতুন পাড়া নামে পরিচিত। প্রায় ১৫ বছর ধরে এই গ্রামে বাস করতে শুরু করে ভূমিহীন কিছু পরিবার। ভৌগলিক অবস্থান অনুযায়ী এটি সদর উপজেলার অন্তর্ভূক্ত হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ৪০০ পরিবারের প্রায় ৩০০০ বাসিন্দা নাগরিক সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত।

সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের জীবন যাত্রার করুন কাহিনী। তাদের বঞ্চনার ইতিহাস। 

খামারঝাড় বাড়ী নতুন পাড়া গ্রামের বাসিন্দা সত্তোরোর্ধ মো. নুর আলী আবেগজড়িত কন্ঠে বলেন, আমরা দিনাজপুর সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের খামার ঝাড়বাড়ী গ্রামের ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত। নির্বাচনের আগেই শুধু আমাদের কদর বাড়ে। তখন আমাদের এই অবহেলিত মহল্লায় নেতাকর্মীদের আগমন ঘটে। নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা আমাদের জীবন মানের উন্নয়নে নানাপ্রকার প্রতিশ্রুতি দেন।

তিনি বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি পুনর্ভবা  নদীতে বেইলি ব্রিজ স্থাপন, সহজে নদী পারাপারের ব্যবস্থাসহ কমিউনিটি ক্লিনিক, প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও স্থানীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা এসব দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচনের পর আর কোন এমপি, মন্ত্রী বা ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারদের দেখা মেলে না। কেউ আমাদের খোঁজ-খবর পর্যন্ত নেয় না। আমাদের এই মহল্লায় শিশুদের পড়াশোনার জন্য কোন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে না থাকায় এখন পর্যন্ত শিক্ষার মানের কোন অগ্রগতি নাই। এ গ্রামের ১০ থেকে ১২ বছর বয়সি শিশু-কিশোররাও এলাকায় স্কুল না থাকায় পড়ালেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। 

তিনি জানান, এ এলাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ারও কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই কোনো কমিউনিটি ক্লিনিক। রাতের বেলা কোনো গর্ভবতী নারী অসুস্থ হয়ে পড়লে বা অন্য কোন বৃদ্ধ বা শিশু গুরুতর অসুস্থ হলে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। ফলে এলাকাবাসীকে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হয়। 

উল্লেখ্য, খামারঝাড় বাড়ী থেকে দিনাজপুর শহরে যেতে এই মহল্লার বাসিন্দাদের ৪ কি.মি. পথ ঘুরে কাঞ্চন সেতু পার হয়ে যেতে হয়। এতে সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। কিন্তু এই দেড় ঘণ্টার পথেও নেই কোনো সুবিধাজনক যানবাহন। নদীর চর থেকে ভ্যান অথবা বাইসাইকেলই তাদের বাহন। এপথে অন্য কোনো যানবাহন আসতে পারে না।  

এলাকাবাসী জানায়, একটি বেইলি ব্রিজ হলে এ গ্রাম থেকে শহরে যেতে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগবে। তারা জানান, দুর্গম যাতায়াত এবং প্রশাসনের দৃষ্টির আড়ালে হওয়ায় এই মহল্লায় বহিরাগত দুষ্কৃতিকারী চক্র প্রায়ই মাদকের আস্তানা গড়ে তোলার চেষ্টা করে। মহল্লাবাসীরা ভয়ে ওইসব দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। 

জাফর আলী, খয়রাত হোসেন, অপূর্ব রায়, জয়নাল আবদীনসহ এ এলাকার বাসিন্দারা তাদের জীবনমান উন্নয়নে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন। 

দিনাজপুর সদর উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের সার্ভেয়ার দাইয়ান হোসেন বাসসকে জানান, সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত পুনর্ভবা  নদীর  চরে ৪০০ পরিবারের বসবাস। এর মধ্যে ৩৫০ টি মুসলিম এবং ৫০টি  হিন্দু পরিবার রয়েছে। সরকারিভাবে ১৮৮ পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে ঘর নির্মাণসহ স্থায়ী বসবাসের জন্য মালিকানার কাগজ প্রদান করা হয়েছে। ৬০টি পরিবারকে লিজের মাধ্যমে প্রত্যেককে ৩ শতক করে খাস জমি সরকারিভাবে বরাদ্দ প্রদান করা হয়। অবশিষ্ট পরিবারগুলো পরবর্তীতে বসবাস শুরু করায় তাদের এখনও কোনো কাগজপত্র তৈরি হয়নি। 

এলাকার বাসিন্দা মো. জবেদ আলী জানান, তিনিসহ লিজ বঞ্চিত ১৫২ টি পরিবার  লিজ গ্রহণের জন্য সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে দুই বছর আগে আবেদন করেছেন। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত তাদের বসবাসরত বাড়ির কোন বরাদ্দের কাগজপত্র পাননি। তারা নিজেরা ভূমিহীন হিসেবে দাবি করে তাদের বসবাসরত বাড়ির বৈধ কাগজ প্রদানের দাবি জানান।

একই এলাকার বাসিন্দা মো. আরিফুর রহমান জানান, গত ১০ বছর আগে সদর উপজেলা প্রশাসন এই এলাকা পরিদর্শন করে  ৩৩ শতক জমি প্রাইমারি স্কুলের জন্য নির্ধারণ করে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এলাকায় কোনো স্কুল প্রতিষ্ঠা হয়নি। 

গ্রামবাসীদের অভিযোগ এলাকায় একটি খেলার মাঠ ছিল, কিন্তু সেই খেলার মাঠে চিহ্নিত ভূমিদস্যুরা বালু  বোঝাই করে রাখায় শিশু কিশোররা খেলাধুলার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। এসব বিষয় বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনকে অভিযোগ করা হলেও অজ্ঞাত কারণে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

এই গ্রামের বাসিন্দা সুমনা আক্তার বলেন, এই চরের বাসিন্দারা দিনাজপুর পৌরসভা এবং আউলিয়াপুর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। এই গ্রামের নারীরা বিধবা, মাতৃত্বকালীন, গর্ভকালীন ও বয়স্ক ভাতা থেকে বঞ্চিত। কয়েকজন নিজ উদ্যোগে যোগাযোগ করে ভাতা পাচ্ছে। এছাড়াও নিরাপত্তার অভাবে মেয়েদের বাল্য বিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন কন্যা সন্তানের বাবা-মা। এখানে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের কোন ব্যবস্থা নেই। দুর্বিষহ আতঙ্কের জীবন কাটে নারীদের। 

দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন সুলতানা বাসসকে বলেন, আমি গত কয়েক মাস আগে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেছি। বিষয়টি অবগত হলাম। সরেজমিন পরিদর্শন করে ওই মহল্লাবাসীদের সরকারিভাবে কি ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।  

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
কাল থেকে শুরু সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস অক্টোবর
দুর্গাপূজা প্রকৃতি ও মানবিক সম্পর্কের প্রতি গভীর ভালোবাসার বার্তা বহন করে : ফরিদা আখতার
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাঁচটির পরিবর্তে তিনটি টি২০ ম্যাচ খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকা
১ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন সার আমদানি করবে সরকার
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাকিস্তানের টেস্ট সিরিজের দল ঘোষনা
দিনাজপুরে কুমারী পূজায় ভক্তদের ভিড়
মেহগনি বাগানে চুইঝাল চাষে সফল খুলনার আবু জাফর
বগুড়ায় কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত
টাঙ্গাইলে ৫৪টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ প্রশাসনের
রাজধানীতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও ওয়াকিটকি সেটসহ দুইজন গ্রেফতার
১০