বেলাল রিজভী
মাদারীপুর, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ (বাসস): মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা গ্রামের স্বপন হাওলাদার ইট-বালুর ব্যবসা করে সংসার চালাতেন। সংসারে অভাব ছিল না।
কিন্তু দালালের আশ্বাসে সব বিক্রি করে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করলে লিবিয়ায় নিয়ে তাকে বন্দিশিবিরে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। সেখানে তিনি পঙ্গুত্ববরণ করেন।
পরে দীর্ঘ তদবির ও অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে দেশে ফিরলেও স্বপনের সংসার আজ নিঃস্ব। পঙ্গু স্বামীকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তার স্ত্রী। তিনি বলেন, আমি এখন সমাজের কাছে বোঝা হয়ে গেছি। আমি পুরোপুরি নিঃস্ব।
একই গ্রামের এলেম ফকিরের ছেলে সিরাজুল ফকিরকে ইতালি পাঠানোর জন্য তিনি ঋণ করেন এবং জমি বন্ধক রাখেন। দালালের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়ার পরও তিন মাস ধরে সিরাজুল লিবিয়ার একটি বন্দিশিবিরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
এলেম ফকির বলেন, আমি দালালের কাছে টাকা দিয়েছি সরল বিশ্বাসে। আমার ছেলে এখনও যেতে পারেনি।
অন্যদিকে মোতালেব হাওলাদারের ছেলে মামুন দেশে ট্রাক চালিয়ে সংসার চালাতেন। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর দালালের মাধ্যমে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করলে তারও ভাগ্যে মেলে না কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য। ধারদেনা করে দেওয়া টাকা এখন তার পরিবারের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদারীপুরে অসংখ্য পরিবারের বাস্তবতা এটি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র সাধারণ মানুষকে বিদেশে কর্মসংস্থানের আশ্বাস দিয়ে প্রতারণা করছে। অনেক পরিবার নিঃস্ব হলেও প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। মামলা করেও সুরাহা হচ্ছে না বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, অনেকেই উন্নত জীবনের আশায় বিদেশে যেতে গিয়ে দালালের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। আমরা তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সরকারের নীতিমালা মেনে বৈধভাবে বিদেশ যেতে উৎসাহিত করি।
তিনি বলেন, বৈধ পথে বিদেশ গমন নিশ্চিত করতে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
পাশাপাশি অবৈধ দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিদেশে আটক শ্রমিকদের উদ্ধারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও নিয়মিত তৎপর রয়েছে।