মেধাভিত্তিক সরকার গঠনে শিক্ষকদের সমর্থন ও সহযোগিতা চায় বিএনপি : তারেক রহমান 

বাসস
প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ২০:৩৬
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফাইল ছবি

ঢাকা, ৭ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জ্ঞান ও মেধাভিত্তিক রাষ্ট্র এবং সরকার গঠনের লক্ষ্যে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে শিক্ষকদের সমর্থন ও সহযোগিতা চেয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র-রাজনীতি এবং সরকারের উন্নয়নে বিএনপির গৃহীত সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন। প্রয়োজন দেশের সবচেয়ে সচেতন অংশ-শিক্ষকদের সমর্থন। একটি জ্ঞান এবং মেধাভিত্তিক রাষ্ট্র এবং সরকার গঠনে আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি আপনাদের সমর্থন এবং সহায়তা চায়। বিএনপি শিক্ষক-কর্মচারী ভাই বোনদের আন্তরিক সহযোগিতা চায়।’

আজ মঙ্গলবার বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত শিক্ষক মহাসমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ সব কথা বলেন তারেক রহমান।  

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের ভোটে বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত ও জাতীয়করণের লক্ষ্যে উচ্চপর্যায়ের কমিশন গঠন করবে। 

তিনি বলেন, ‘দেশের একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে যদি শিক্ষা ও গবেষণার প্রাণকেন্দ্রে রূপান্তরিত করতে পারি তাহলেই আমরা এগিয়ে যাবো।’

তারেক রহমান বলেন, প্রতিযোগিতামূলক এই বিশ্বে সমান এবং মর্যাদার সঙ্গে একটি প্রভাবশালী জাতি, রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকাই আমাদের সামনে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদেরকে অর্থ-বিত্তে মেধা-মননে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হতেই হবে। প্রতিষ্ঠা করতে হবে জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র এবং সমাজ। 

দেশের শিক্ষকরাই জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র-সমাজ গড়ার অন্যতম প্রধান হাতিয়ার উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই হাতিয়ার যদি দুর্বল হয় তাহলে রাষ্ট্রকে শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড় করানো সম্ভব নয়। সবাই মিলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং বিদ্যমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর গুণগতমান নিশ্চিত করতেই হবে।’

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র-সরকার প্রশাসন এবং সমাজের নানা বাস্তবতায় একজন শিক্ষক যদি নিজেই নিরানন্দ পরিস্থিতিতে থাকেন তাহলে তার দ্বারা জ্ঞানের মধ্যে আনন্দ জাগ্রত করা কি সম্ভব? সম্ভব নয়। এ কারণে রাষ্ট্র এবং সমাজে শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি সামাজিক সম্মান নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ’

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে জোর দিয়ে তারেক রহমান বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুঁথিনির্ভর না রেখে শিক্ষা কারিকুলামকে স্কুল পর্যায় থেকেই ব্যবহারিক এবং কারিগরি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থায় রূপান্তর করার বিকল্প নেই। একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি ইতোমধ্যেই বিশেষজ্ঞদের নিয়ে প্রয়োজনীয় কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে।

প্রতিটি শিক্ষার্থীর সামনে শিক্ষক-শিক্ষিকারাই ‘আদর্শ রোল মডেল’ উল্লেখ করে তারেক রহমান নলেন, ‘এ কারণেই প্রত্যেক শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের ‘প্রয়োজন এবং প্রিয়জন’ হয়ে ওঠা জরুরি। কিন্তু শিক্ষকরাই যদি রাষ্ট্র ও সমাজে প্রতিনিয়ত সংসার-সম্মান নিয়ে টানাপড়েনে থাকেন তাহলে একজন শিক্ষকের পক্ষে শিক্ষার্থীদের সামনে নিজেকে রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন সম্ভব নয়।’

তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষিকারা যাতে নিজেকে একজন রোল মডেল হিসেবে শিক্ষার্থীদের সামনে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উপস্থাপন করতে পারেন, সে ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থাপনা প্রণয়নে বিএনপি বাস্তবধর্মী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। 

তারেক রহমান বলেন, দেশে স্কুল,মাদ্রাসা, প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এবং সামাজিক সম্মান সমুন্নত করে শিক্ষকতা পেশাকে সুযোগ এবং সম্মানের দিক থেকে প্রতিযোগিতামূলক করে গড়ে তোলা প্রয়োজন। শিক্ষকতা পেশা কখনোই ‘উপায়হীন বিকল্প’ কিংবা একটি সাধারণ চাকরির মতো হতে পারেনা।

তিনি বলেন, শিক্ষা দীক্ষায় সবচেয়ে মেধাবী মানুষটি যাতে কর্ম জীবনে প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে শিক্ষকতা পেশাকে বেঁচে নিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন বিএনপি শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে সেভাবেই ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা এবং উপায় নিয়ে কাজ করছে। আমরা বিশ্বাস করি রাষ্ট্র এবং সমাজে শিক্ষকদের সম্মান এবং মর্যাদার সঙ্গে রাষ্ট্রের মর্যাদা ও ভাবমূর্তি জড়িত। দুর্নীতিবাজরা বিত্তবান হলে রাষ্ট্রের সমাজের ভাবমূর্তি কমে আর সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা অক্ষুণ্ন থাকলে সমাজের ভাবমূর্তি বাড়ে। 

তারেক রহমান বলেন, দেশের একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির সঙ্গে নীতিগতভাবে অবশ্যই একমত। রাষ্ট্র ও রাজনীতির সংস্কার কিংবা নাগরিক উন্নয়নে আমরা যত উদ্যোগই গ্রহণ করি না কেন, শিক্ষা ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এবং শিক্ষকদের আর্থসামাজিক নিরাপত্তা ও সম্মান যদি আমরা নিশ্চিত করতে না পারি তবে শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত  সুফল মিলবে না। 

শিক্ষকদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, জনগণের ভোটে বিএনপি আবারও রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে রাষ্ট্রের সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়ানো। কিংবা চাকরি স্থায়ীকরণ কিংবা জাতীয়করণের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনার জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠন করবো।

প্রচলিত শিক্ষা কারিকুলামকে ব্যবহারিক এবং কারিগরি শিক্ষা প্রধান করে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ‘শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করা হবে জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘নৈতিকতা এবং ধর্মীয় সামাজিক মূল্যবোধের আলোকে কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়নে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না গেলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।’

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) ও শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

এ ছাড়াও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
শিক্ষার্থী হত্যা : সাবেক ধামরাই উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাদ্দেছসহ পাঁচজন রিমান্ডে
লড়াই করে হারল বাংলাদেশ
ইউনেস্কোর সাধারণ পরিষদের সভাপতি পদে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বিজয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার অভিনন্দন 
গ্রিস উপকূলে নৌকাডুবিতে ৪ অভিবাসী নিহত
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাত : বাংলাদেশ-তুরস্ক সহযোগিতা আরও জোরদারের আহ্বান
বাংলাদেশ ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত
২০২৬ সালে বাংলাদেশে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প অর্থায়ন করতে পারে এডিবি
সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিতে নারী নেত্রী ও বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা চাইলেন সিইসি
রফতানিতে দেশীয় বীমা কোম্পানি ব্যবহারের অনুমতি দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক
আবরার ফাহাদের শাহাদত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বড় প্রেরণা : তথ্য উপদেষ্টা
১০