ঢাকা, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): সার্ক উন্নয়ন প্রতিবেদন (এসডিআর) প্রস্তুত করতে দুই দিনব্যাপী পরামর্শমূলক কর্মশালার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ।
আজ সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে এ কর্মশালা শুরু হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) কর্মশালাটি আয়োজন করেছে। এতে বাংলাদেশ, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সার্ক সচিবালয় যৌথভাবে কর্মশালার সামগ্রিক আয়োজন সমন্বয় করছে। আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রযুক্তিগত ও লজিস্টিক সহায়তা প্রদান করছে।
এই কর্মশালা সার্ক সচিবালয়ের পূর্ববর্তী একটি উদ্যোগের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর লক্ষ্য ২০২৫ সালের সার্ক উন্নয়ন প্রতিবেদন (এসডিআর) চূড়ান্ত করা। কর্মশালার মূল প্রতিপাদ্য হলো ‘এসডিআর ২০২৫: শেপিং দ্য ফিউচার টুগেদার ফর এ রেজিলিয়েন্ট সার্ক’।
জিইডির সদস্য (সচিব) ড. মনজুর হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে কর্মশালার উদ্বোধন করেন।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সার্ক সচিবালয়ের ইনফরমেশন অ্যান্ড পোভার্টি অ্যালিভিয়েশন ডিভিশনের পরিচালক প্রথমা উপ্রেতি এবং ম্যানিলাভিত্তিক এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের লিড রিজিওনাল কো-অপারেশন স্পেশালিস্ট ডংজিয়াং লি কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন।
এডিবির পরামর্শক ড. পোষ রাজ পান্ডে কর্মশালায় এসডিআর-এর খসড়া উপস্থাপন করেন। সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরাও ‘রেজিলিয়েন্ট সার্ক টু শেপ ফিউচার টুগেদার: কান্ট্রি পার্সপেক্টিভ’ শীর্ষক উপস্থাপনা তুলে ধরেন।
উদ্বোধনী ভাষণে ড. মনজুর হোসেন সার্ক সচিবালয়কে এই পরামর্শ সভা আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, সার্ক উন্নয়ন প্রতিবেদন কেবল আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। এটি গভীর বিশ্লেষণ, বিপুল পরামর্শ ও কার্যকর বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের জীবনে বাস্তব পরিবর্তন আনতে হবে।’
তিনি কর্মশালা আয়োজনের ক্ষেত্রে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রযুক্তিগত ও লজিস্টিক সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।
ড. হোসেন আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে কম সমন্বিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি, যেখানে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য মোট বাণিজ্যের ছয় শতাংশেরও কম। শুল্ক-বহির্ভূত বাধা হ্রাস, সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নত করা এবং আন্তঃসীমান্ত পরিবহন ও ডিজিটাল সংযোগ সম্প্রসারণের মাধ্যমে সার্ক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য অপরিমেয় সম্ভাবনা উন্মোচন করতে পারে।
আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও দারিদ্র্য ও বৈষম্য এখনো রয়ে গেছে।
ডিজিটাল বিভাজন দূর করা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই) উন্নয়নকে যৌথ অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে, যাতে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা যায়।
সার্ক সচিবালয়ের পরিচালক প্রথমা উপ্রেতি বলেন, সার্ক সচিবালয় দক্ষিণ এশিয়ায় গভীরতর আঞ্চলিক সহযোগিতা ও সহনশীলতা বৃদ্ধিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ‘সার্ক ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০২৫’-এর মাধ্যমে আমরা সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পরিবেশগত স্থায়িত্ব এবং লিঙ্গ সমতা এগিয়ে নিতে চাই। আমরা একসাথে আমাদের অঞ্চলের জন্য আরও শক্তিশালী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ব।
এডিবির বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং দক্ষিণ এশিয়ায় একটি সহনশীল ও টেকসই ভবিষ্যৎ গঠনে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এডিবি আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি উন্নয়ন এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন, সার্ক উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২৫-এর অধীনে যৌথ প্রচেষ্টাগুলো অঞ্চলজুড়ে সমৃদ্ধি বয়ে আনবে।
এডিবির লিড রিজিওনাল কো-অপারেশন স্পেশালিস্ট ডংজিয়াং প্রতিপাদ্যের মূল বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পরিবেশগত স্থায়িত্ব, লিঙ্গ সমতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আঞ্চলিক সহনশীলতা জোরদার করতে হবে।
লি বলেন, সার্ক অঞ্চল আরও শক্তিশালী ও সহনশীল করতে এডিবি অংশীদারিত্ব আরও গভীর করা, জ্ঞান বিনিময় উৎসাহিত করা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগগুলোতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
সদস্য দেশগুলোর উপস্থাপনায় দারিদ্র্য হ্রাস, বৈষম্য কমানো, আঞ্চলিক বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করা, কোভিডপরবর্তী পুনরুদ্ধার, মানবসম্পদ উন্নয়ন, সংযোগ বৃদ্ধি এবং জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলার মতো বিভিন্ন বিষয় গুরুত্ব পায়।
তারা গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ ও ভবিষ্যৎ করণীয় উপস্থাপন করেন। বাংলাদেশ তার উপস্থাপনায় অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত উদ্যোগগুলোর ওপর আলোকপাত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার, দুর্বল ব্যাংক ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা আনা এবং প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্গঠন।
দুই দিনব্যাপী এ পরামর্শমূলক কর্মশালা আগামীকালও চলবে এবং এতে সার্ক উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২৫ প্রস্তুতির জন্য সুপারিশ ও সময়সূচি নির্ধারণ করে একটি প্রতিবেদন গৃহীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই প্রতিবেদনটি সার্ক দেশগুলোতে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকনির্দেশক নথি হিসেবে কাজ করবে।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের যুগ্ম প্রধান (যুগ্ম সচিব) বিধান বড়াল।