
এনামুল হক এনা
পটুয়াখালী, ১০ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস): মাছ-মুরগির খামার করে ভাগ্য বদলেছেন পটুয়াখালীর তরুণ উদ্যোক্তা রাজিব কর্মকার (৩২)। কয়েক বছর আগে বেকারত্বের গঞ্জনা থেকে মুক্তি পেতে নিজ উদ্যোগে নিজের বাড়িতে গড়ে তুলেছেন মুরগির খামার। আর এখন তিনি মাছ, মুরগি ও গাভি পালন করে মাসেই আয় করছেন দুইলাখ টাকা। ইতোমধ্যে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করেছেন রাজিব। তার এই সাফল্যে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছেন স্থানীয় অনেকেই।
সরেজমিনে রাঙ্গাবালী উপজেলার পশুরীবুনিয়া গ্রামের রাজিব কর্মকারের খামারে গিয়ে দেখা যায়, পুকুরের মাঝখানে বাঁশ ও সুপারি গাছের তৈরি মাচায় বেড়ে উঠছে ছোট বড় আকৃতির ব্রয়লার, সোনালী ও লেয়ারসহ বিভিন্ন জাতের মুরগি। মাচার নিচে পুকুরে চাষ হচ্ছে পাঙাশ, দেশীয় প্রজাতির শিং ও মাগুর মাছ। ফার্মে মাছ ও মুরগির সমন্বিত চাষে সফলতার মুখ দেখছেন এই তরুণ উদ্যোক্তা। অনেক পরিশ্রম আর ত্যাগে আজ তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গ্রামে পরিচিতি পেয়েছেন।
রাজিব কর্মকারের সাথে কথা হলে তিনি বাসসকে তার সাফল্যের গল্প শোনালেন। তিনি বলেন, বেকারত্ব ঘোচাতে প্রথমে ছোট্ট পরিসরে মুরগির খামার শুরু করি। পরে দেখলাম বেশ ভালোই লাভবান হচ্ছি। এমন বাস্তবতায় মাছ, মুরগি ও গাভি পালন শুরু করি ধাপে ধাপে। অল্প পুঁজি আর অদম্য ইচ্ছাকে একত্রে মিলিয়ে নেমে পরি ব্যবসায়। আর ব্যবসার পণ্য হিসেবে বেছে নিয়েছি নিজের খামারে উৎপাদিত মুরগি। স্থানীয় বাজারে মুরগির পাশাপাশি বিক্রি করি মাছের ফিড। এরই ধারাবাহিকতায় ব্যবসায় বাড়তি মাত্রা যোগ করেছি লেয়ার, ব্রয়লার, সোনালী মুরগি ও মাছের ফিডের ডিলার।
রাজিব বলেন, এখান থেকে উপার্জিত অর্থেই দাঁড় করেছি রিতিকা ও রুদ্র খামার বাড়ি। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৬০ শতাংশ জমিতে গড়েছি মাছ, মুরগি ও উন্নত জাতের গাভিসহ নানারকম সবজি ও ফলের বাগান।
মুরগি ও মাছ চাষে এমন সফলতায় তরুণ ও বেকার যুবকসহ এখন অন্যদের কাছেও আদর্শ রাজিব কর্মকার। তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে এলাকার অনেকেই ঝুঁকছেন মাছ ও মুরগি চাষে। তার খামার বাড়ির চারপাশে সজ্জিত সারি সারি সুপারির বাগান, হরেক রকমের ফল ও সবজির বাগান দেখে মনে হচ্ছে যেন কৃষিতেই থেমে নেই রাজিব।
রাজিব আরো বলেন, তিলে তিলে এই খামার গড়ে তুলছি। মাছ, মুরগি, নানান প্রকার সবজি ও ফলমূলের এই প্রজেক্ট করে আমি ভালোই লাভবান হয়েছি। প্রতি মাসে এখান থেকে দুই লাখ টাকা লাভ হয়।
তিনি বলেন, শাহীওয়াল জাতের গরুও পালন করতাম, বিক্রি করে ফেলছি জায়গা সংকটের কারণে। সরকারি সহায়তা পেলে আরো বড় পরিসরে খামার করতে পারবো। তরুণদের চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শও দেন এই সফল উদ্যোক্তা।
এ বিষয়ে খামার ম্যানেজার রাহাত মিয়া বলেন, আমাদের এখানে উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের মুরগি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পাঠানো হয়। ডিম ও মুরগি আমরা পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করে থাকি। এছাড়াও আমাদের এখানে চাষ করা পাঙাশ, শিং ও মাগুর স্থানীয় বাজারে খুচরা বিক্রি করি। আমাদের খামারে উৎপাদিত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে স্থানীয় বাজারে বেশ সুনামের সাথে বিক্রি করা হচ্ছে আমাদের খামারে উৎপাদিত পণ্য।
রাজিবের প্রতিবেশী রবিন আহম্মেদ (৩০) বলেন, শূন্য থেকে যে একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব, তার জ্বলন্ত উদাহরণ রাজিব কর্মকার। আশেপাশের অনেক তরুণদের তিনি এখন আইডল। রাজিবের খামারের মুরগি, মাছ ও গাভির ব্যাপক চাহিদা এই অঞ্চলজুড়ে। স্থানীয় হতাশাগ্রস্ত বেকারদের আশার আলো দেখাচ্ছেন তরুণ উদ্যোক্তা রাজিব।
এ বিষয়ে রাঙ্গাবালী উপজেলা সামুদ্রিক মৎস্য কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন রাজু বলেন, মৎস্য খামার বেকারদের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য অন্যতম উদাহরণ রিতিকা রুদ্র খামার বাড়ি। রাজিবের মৎস্য চাষে যে ধরনের সহায়তা প্রয়োজন আমরা সরকারি বিধি মোতাবেক তা করবো। একইসাথে বলবো-চাকরির পেছনে না ছুটে তরুণদের রাজিব কর্মকারের মতো এগিয়ে আসা উচিত।’
এ বিষয়ে রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শাহজাহান আলী (ভারপ্রাপ্ত) বাসসকে বলেন, ‘যোগাযোগ করে দপ্তরের সকল সুযোগ সুবিধার আওতায় আনা হবে। রাজিব কর্মকারের মত যদি খামার গড়ে তোলা হয় তাহলে বেকার যুবক, যুব মহিলাদের বেকার সমস্যা দূরীকরণ হবে।
তিনি আরো বলেন, এমন সব খামার গড়ে তোলা হলে স্থানীয় পর্যায়ে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাবের পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়েও ভূমিকা রাখতে পারবে। দেশ অনেক এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি বেকার যুবক, যুব মহিলাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে এসব খামার।’