ঢাকা, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : আর্নে স্লটের অধীনে প্রথম মৌসুমেই লিভারপুল রেকর্ড স্পর্শকারী ২০তম প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করেছে। রোববার এ্যানফিল্ডে টটেনহ্যামকে ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত করে চার ম্যাচ হাতে রেখে দ্বিতীয় স্থানে থাকা আর্সেনালের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট এগিয়ে লিভারপুলের শিরোপা জয় নিশ্চিত হয়।
দীর্ঘদিনের সঙ্গী জার্গেন ক্লপকে বিদায় দিয়ে প্রথম বছরেই এত বড় সাফল্যে স্লট নিজেও তার পূর্বসূরীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। লিগ শেষ হতে এখনো একমাস বাকি, কিন্তু তার আগে এ্যানফিল্ডে কাল শিরোপা উৎসব করে ফেলেছে লাল জার্সিধারীরা।
এবারের লিগে যে পাঁচটি ম্যাচের ফলাফল লিভারপুলের ভাগ্য গড়ে দিয়েছিল সেগুলোর প্রতি দৃষ্টি দেয়া যাক :
১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ : ম্যান ইউ ০ লিভারপুল ৩
গত এক দশকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের যে ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে তা মাঠের পারফরমেন্সেও প্রভাব পড়েছে। ক্লপের অধীনে লিভারপুল তাদের চির প্রতিদ্বন্দ্বীদের ঘরের মাঠে খুব একটা সুবিধা কখনই করতে পারেনি। ২০২৩/২৪ মৌসুমে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে লিভারপুল দুইবার জিততে পারেনি, একবার এফএ কাপে, একবার প্রিমিয়ার লিগে। কিন্তু স্লট এসেই পুরো চেহারা পাল্টে দেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইউনাইটেডের মাঠে যেভাবে দাপুটে জয় নিয়ে বাড়ি ফিরেছির লিভারপুল তাতেই স্লটের যোগ্যতা অনেকের সামনে চলে আসে। এটি ছিল স্লটের অধীনে লিভারপুলের তৃতীয় ম্যাচ। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের ঐ ম্যাচে লুইস দিয়াজ জোড়া গোল করেছিলেন, বাকি গোলটি করেছিলেন মোহাম্মদ সালাহ।
২০ অক্টোবর ২০২৪ : লিভারপুল ২ চেলসি ১
স্লটের এই পরিবর্তনের মূল চাবিকাঠি হলো প্রতিপক্ষের সাথে লড়াই করার জন্য তার খেলার পরিকল্পনাটি খাপ খাইয়ে নেয়ার ইচ্ছা। দুর্দান্ত ফর্মে থেকে চেলসি এ্যানফিল্ডে খেলতে এসেছিল। পজিশনের দিক থেকে তারা দাপট দেখাচ্ছিল। কিন্তু তারপরও আগস্ট থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রিমিয়ার লিগে ১৬টি ম্যাচের মধ্যে এটি ছিল তাদের একমাত্র পরাজয়।
সালাহর প্রথমার্ধে পেনাল্টি দ্বিতীয়ার্ধে শুরুতেই নিকোরাস জ্যাকসনের গোলে ম্লান হয়ে যায়। কিন্তু তিন মিনিটের মধ্যে কার্টিস জোনসের গোলে লিভারপুল আবারো এগিয়ে যায়। ম্যাচের শেষ ভাগে চেলসি চাপ সৃষ্টি করলেও মূল্যবান তিন পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছাড়ে অল রেডসরা।
২৭ অক্টোবর : আর্সেনাল ২ লিভারপুল ২
চার পয়েন্ট এগিয়ে লিভারপুল এমিরেটস স্টেডিয়াম ভ্রমনে গিয়েছিল। আর্সেনালই এবারের লিগে শুরু থেকেই লিভারপুলের সবচেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। দুইবার পিছিয়ে পড়েও দুইবারই ম্যাচে ফিরে এসে লিভারপুল কার্যত নিজেদের শক্তিমত্তার প্রমান দিয়েছে। বুকায়ো সাকার গোলে শুরুতেই এগিয়ে গিয়েছিল আর্সেনাল। অধিনায়ক ভার্জিল ফন ডাইক দ্রুতই দলকে সমতায় ফেরান। মিকেল মেরিনো প্রথমার্ধে আবারো গানার্সদের এগিয়ে দেন। কিন্তু আবারো দলের ত্রানকর্তা হিসেবে সেই সালাহই অবতীর্ণ হন। ম্যাচ শেষের ৯ মিনিট আগে তিনি লিভারপুলকে মূল্যবান এক পয়েন্ট উপহার দেন। এই ড্রয়ে টেবিলের শীর্ষে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির থেকে মাত্র এক পয়েন্ট পিছিয়ে ছিল লিভারপুল।
১৮ জানুয়ারি ২০২৫ : ব্রেন্টফোর্ড ০ লিভারপুল ২
স্টপেজ টাইমে ডারউইন নুনেজের জোড়া গোলে লিভারপুল দারুন এক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। এই জয়ে কার্যত শিরোপা কাছাকাছি পৌঁছে যায় স্লট বাহিনী। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও নটিংহ্যাম ফরেস্টের সাথে পরপর দুই ম্যাচে লিভারপুলের ড্রয়ের কারনে আর্সেনাল শীর্ষ চারের মধ্যে পার্থক্য কমানোর সুযোগ পায়।
পশ্চিম লন্ডনে বদলী বেঞ্চ থকে উঠে এসে উরুগুইয়ান তারকা নুনেজ দলকে স্বস্তির জয় উপহার দেন।
এই ম্যাচের মাত্র কয়েক ঘন্টা পর দুই গোলে এগিয়ে থেকেও এ্যাস্টন ভিলার সাথে ২-২ গোলে ড্র করে পয়েন্ট হারিয়েছিল আর্সেনাল। এর ফলে দুই দলের মধ্যে পার্থক্য বেড়ে দাঁড়ায় ৬।
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ : ম্যান সিটি ০ লিভারপুল ২ :
এই ম্যাচের আগেই প্রায় এক দশক পর ঘরের মাঠে লিগে প্রথমবারের মত বর্তমান চ্যাম্পিয়ন সিটিকে পরাজিত করে অনেকটাই ফুরফুরে মেজাজে ছিল লিভারপুল। যে কারনে ইত্তিহাদ স্টেডিয়ামে পারফরমেন্স নিয়ে শঙ্কা তেমন একটা ছিলনা।
সালাহ ও ডোমিনিক সোবোজলাইয়ের প্রথমার্ধের গোলে রেডসের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। আগেরদিন ওয়েস্ট হ্যামের কাছে ঘরের মাঠে আর্সেনাল ১-০ গোলে পরাজিত হয়। যে কারনে ইত্তিহাদে জয়ের ফলে গানার্সদের সাথে পয়েন্টের ব্যবধান বেড়ে দাঁড়ায় ১১।
এই ম্যাচে হারের পর থেকে ম্যানচেস্টার সিটি শিরোপা জয়ের লড়াই থেকে দূরে সড়তে থাকে। এই জয়ে পেপ গার্দিওলার দলের থেকে লিভারপুলের পয়েন্টের ব্যবধান বেড়ে দাঁড়ায় ২০।