ঢাকা, ৯ অক্টোবর ২০২৫ (বাসস) : হার দিয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু করল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
গতরাতে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে ৫ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। ফলে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ল টাইগাররা।
এ ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ৪৮.৫ ওভারে ২২১ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে ১৭ বল বাকী থাকতে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় আফগানিস্তান। টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশের কাছে হোয়াইটওয়াশের পর, দারুণ জয়ে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করল আফগানরা।
আবু ধাবির জাহেদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ। চতুর্থ ওভারে প্রথম ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ২টি চারে ১০ রান করে আফগানিস্তান পেসার আজমতুল্লাহ ওমারজাইর বলে আউট হন ওপেনার তানজিদ হাসান।
তিন নম্বরে নেমে সুবিধা করতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। ২ রান করে ওমারাজাইর দ্বিতীয় শিকার হন তিনি।
২৫ রানে ২ উইকেট পতনের পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার সাইফ হাসান ও তাওহিদ হৃদয়। কিন্তু ২৮ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি তারা। ৫ চারে ২৬ রান করে স্পিনার নাঙ্গোলিয়া খারোতির বলে বিদায় নেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা সাইফ।
৫৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এরপর আফগানিস্তান বোলারদের উপর দাপট দেখিয়েছেন হৃদয় ও অধিনায়ক মিরাজ। ২৬তম ওভারে বাংলাদেশের রান ১শতে নেন তারা।
দলের রান দেড়শ স্পর্শ করার আগেই হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান হৃদয় ও মিরাজ। ছক্কা মেরে ৭৫ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দশম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন হৃদয়। এই নিয়ে টান তিন ইনিংসে হাফ-সেঞ্চুরি করলেন হৃদয়। গত শ্রীলংকা সিরিজের শেষ দুই ম্যাচে দু’টি ৫১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন এই ডান-হাতি ব্যাটার। ৭৪ বলে ওয়ানডেতে সপ্তম অর্ধশতক করেন মিরাজ।
৩৫তম ওভারে বাংলাদেশের রান দেড়শ পার করে বিচ্ছিন্ন হন হৃদয় ও মিরাজ। রান আউটের ফাঁদে পড়েন ১টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৮৫ বলে ৫৬ রান করা হৃদয়। মিরাজের সাথে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১৪২ বলে ১০১ রান যোগ করেন হৃদয়।
দলীয় ১৫৪ রানে চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে হৃদয় ফেরার পর আফগানিস্তানের দুই স্পিনার রশিদ ও এএম গাজানফারের ঘূর্ণিতে পড়ে নিয়মিত বিরতিতে বাকী উইকেটগুলোও হারায় বাংলাদেশ। ৪৬ রানে শেষ ৬ উইকেট পতনে ৪৮.৫ ওভারে ২২১ রানে অলআউট হয় টাইগাররা।
১টি করে চার-ছক্কায় ৮৭ বলে মিরাজ সর্বোচ্চ ৬০ রান করেন। এছাড়া পরের দিকে তানজিম হাসান সাকিব ১৭, তানভীর ইসলাম ১১ ও জাকের আলি ১০ রান করেন।
বল হাতে আফগানিস্তানের ওমারজাই ও রশিদ ৩টি করে এবং গাজানফার ২ উইকেট নেন। এই ইনিংসে আফগানদের প্রথম বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ২শ উইকেট পূর্ণ করেন রশিদ।
জবাবে আফগানিস্তানকে ৫৭ বলে ৫২ রানের সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। দশম ওভারে জাদরানকে ২৩ রানে থামিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম উইকেট এনে দেন স্পিনার তানভীর ইসলাম।
নতুন ব্যাটার হিসেবে ক্রিজে আসা সেদিকুল্লাহ আতালকে ৫ রানে বিদায় দেন পেসার তানজিম হাসান। ৫৮ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে আফগানিস্তান।
তৃতীয় উইকেটে বাংলাদেশ বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন গুরবাজ ও রহমত শাহ। সাবধানে খেলে ১১১ বলে ৭৮ রান যোগ করেন তারা। তবে ৫ বলের ব্যবধানে গুরবাজ-রহমত বিদায় দেন তানজিম ও মিরাজ। দু’জনই ৫০ রান করে করেন। গুরবাজ ৭৬ বলে ১টি করে চার-ছক্কায় এবং রহমত ৭০ বল খেলে ৪ বাউন্ডারিতে নিজেদের ইনিংস সাজান।
১৩৬ রানে চতুর্থ উইকেট হারানোর পর আফগানিস্তানকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন ওমারজাই ও অধিনায়ক হাসমতুল্লাহ শাহিদি। পঞ্চম উইকেটে ৭০ বলে ৫৯ রান তুলেন তারা। দলের জয় থেকে ২৭ রান দূরে থাকতে বিদায় নেন ওমারাজাই। ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৪ বলে ৪০ রান করে তানজিমের তৃতীয় শিকার হন ওমারাজাই।
এরপর ষষ্ঠ উইকেটে ২৬ বলে অবিচ্ছিন্ন ৩১ রানের জুটিতে আফগানিস্তানের জয় নিশ্চিত করেন শাহিদি ও নবি। ২টি চারে শাহিদি ৩৩ এবং নবি ১১ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের তানজিম ৩১ রানে ৩, তানভীর ও মিরাজ ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন ওমারজাই।
আগামী ১১ অক্টোবর একই ভেন্যুতে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ২২১/১০, ৪৮.৫ ওভার (মিরাজ ৬০, হৃদয় ৫৬, রশিদ ৩/৩৮)।
আফগানিস্তান : ২২৬/৫, ৪৭.১ ওভার (গুরবাজ ৫০, রহমত ৫০, তানজিম ৩/৩১)।
ফল : আফগানিস্তান ৫ উইকেটে জয়ী।