
ঢাকা, ৭ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো কিংবা লিওনেল মেসি নয়, ফারাজ ফরহাদ কিংবা আরিব ইহতিরামদের ঘরোয়া আড্ডায় থাকে হ্যান্ডবল। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি সানিডেল স্কুলের বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রী এবং তাদের বাবা মায়েরা খেলাধুলা নিয়ে আলোচনা করেন ডাইনিং টেবিলে। আর সেই আড্ডায় থাকে শুধুই হ্যান্ডবল।
গত মাসে পল্টনের শহীদ (ক্যাপ্টেন) এম. মনসুর আলী জাতীয় হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে শেষ হয়েছে স্কুল হ্যান্ডবলের লিগ ভিত্তিক সুপার সিক্সের শেষ ম্যাচ। যেখানে ছেলে ও মেয়ে দুই বিভাগেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সানিডেল স্কুল।
এই স্কুলে গত ২৩ বছর ধরে হ্যান্ডবল কোচের দায়িত্বে রয়েছেন সেলিম মিয়া বাবু। এই সাফল্যের পেছনের গল্পটা বলছিলেন তিনি, “সানিডেইলের হ্যান্ডবলকে প্যারেন্টসদের ডাইনিং টেবিলে নিয়ে গেছি। কারণ ডাইনিং টেবিলে বসে তারা সব আলোচনা করে। হ্যান্ডবলটাকে তারা এত ভালোবাসে যে সেটা বলার মতো না।”
তিনি যোগ করেন, “আমরা ইউরোপেও এই বাচ্চাদের নিয়ে হ্যান্ডবল খেলতে গিয়েছি। ২০২৩ সালে ডেনমার্কে ও ২০২৪ সালে সুইডেনে পারটিলে কাপে অংশগ্রহণ করে রানার্স আপ হই।”
সানিডেলের এই পথচলা সহজ ছিল না। তিনি জানান, “বাচ্চারা এখানে মিনি হ্যান্ডবল থেকে শুরু করে। সপ্তাহে তিন দিন আমাদের প্র্যাকটিস হয়। এখানে আমাদের অনূর্ধ্ব-১০ থেকে অনূর্ধ্ব-১৪ বছরের অনুশীলন হয়। আমরা সারা বছর ট্রেনিংয়ের মধ্যে থাকি। তারপর যেসব কম্পিটিশনগুলো হয় পযায়ক্রমে সেই টুর্নামেন্টগুলোতে খেলতে খেলতে এক সময় পরিণত হয়।”
অভিভাবকদের হ্যান্ডবলে আনতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে এই কোচকে, “ স্কুলের প্যারেন্টস থেকে শুরু করে প্রিন্সিপাল সবাইকে হ্যান্ডবলের প্রতি ধীওে ধীওে আগ্রহী কওে তুলেছি। শুধু হ্যান্ডবল খেললে চলবে না। পড়াশুনার পাশাপাশি যতটুকু সময় বের করা যায় এ সময়টাতে যাতে বাচ্চারা হ্যান্ডবলে সময় দেয়, এই বিষয়টি অভিভাবকদেও বুঝাতে অনেক সময় লেগেছে। সবাইকে এক সুতোয় বাঁধতে পেরেছি। যে কারণে আজ অভিভাবকেরা সবাই এখানে উপস্থিত।”
খেলোয়াড়দের বড় সমর্থন দেয় তাদের পরিবার। সেটাই বললেন বাবু, “তারা তাদের বাচ্চাদের নিয়ে বাসায় গিয়ে কথা বলে। বলে তুমি আজকে ভালো করোনি। তুমি আজ খারাপ করেছো। ভালো করেছো। ভালো সেভ করেছো। সেই সুবাদে অভিভাবকদের উৎসাহের কারণে আমরা এখানে।”
বর্তমানে সানিডেল থেকে জাতীয় দলে খেলছেন সামাহা সামি। চ্যালেঞ্জ ট্রফিতে খেলেছেন কয়েকজন। বাবু জানান, এদের মধ্যে অনেক সম্ভাবনা আছে। এদের ঠিক মতো অনুশীলন করালে অনেক দূর যাবে।
যেখানে এখনো অধিকাংশ পরিবারে খেলাধুলা মানেই ক্রিকেট বা ফুটবলের গল্প, সেখানে সানিডেল স্কুল দেখিয়েছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। কিভাবে ভালোবাসা, শৃঙ্খলা আর অভিভাবকদের অংশগ্রহণ একটি অপেক্ষাকৃত ছোট খেলা হ্যান্ডবলকেও ডাইনিং টেবিলের আলোচনার কেন্দ্রে আনতে পারে। সেলিম মিয়া বাবুর নেতৃত্বে তৈরি এই পরিবারভিত্তিক ক্রীড়া-সংস্কৃতি শুধু একটি স্কুলের নয়, বরং গোটা দেশের জন্য এক উদাহরণ। হয়তো এখান থেকেই জন্ম নেবে বাংলাদেশের হ্যান্ডবলের পরবর্তী তারকা, আর সেই গল্পের শুরুটা হচ্ছে এই ডাইনিং টেবিল থেকেই।