
ঢাকা, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর জোড়া সেঞ্চুরির পর বোলারদের নৈপুন্যে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে জয়ের সুবাস নিয়ে তৃতীয় দিন শেষ করল স্বাগতিক বাংলাদেশ। জয় থেকে ৫ উইকেট দূরে টাইগাররা।
আয়ারল্যান্ডের ২৮৬ রানের জবাবে জয়-শান্তর সেঞ্চুরিতে ৮ উইকেটে ৫৮৭ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। এতে প্রথম ইনিংস থেকে ৩০১ রানের লিড পায় টাইগাররা। প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে তৃতীয় দিন শেষে ৫ উইকেটে ৮৬ রান করেছে আয়ারল্যান্ড। ইনিংস হার এড়াতে ৫ উইকেট হাতে নিয়ে আরও ২১৫ রান করতে হবে আইরিশদের।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম ইনিংসে আয়ারল্যান্ডের ২৮৬ রানের জবাবে দ্বিতীয় দিন শেষে ১ উইকেটে ৩৩৮ রান করেছিল বাংলাদেশ। ৯ উইকেট হাতে নিয়ে ৫২ রানে এগিয়ে ছিল টাইগাররা। ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ১৬৯ এবং মোমিনুল হক ৮০ রানে অপরাজিত ছিলেন।
তৃতীয় দিনের শুরুতেই জোড়া উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দিনের দ্বিতীয় ওভারে জয় ও চতুর্থ ওভারে প্যাভিলিয়নে ফিরেন মোমিনুল। দু’জনই আয়ারল্যান্ড পেসার ব্যারি ম্যাককার্থির বলে আউট হন।
১৪টি চার ও ৪টি ছক্কায় ২৮৬ বলে ক্যারিয়ার সেরা ১৭১ রান করেন জয়। ৫ চার ও ২ ছক্কায় ১৩২ বলে ৮২ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন মোমিনুল।
৩৪৬ রানের মধ্যে জয়-মোমিনুল ফেরার পর বাংলাদেশের রান চারশ পার করেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত এবং ক্যারিয়ারের ৯৯তম টেস্ট খেলতে নামা মুশফিকুর রহিম। ১০৩ বলে ৭৯ রান যোগ করে বিচ্ছিন্ন হন তারা। ৩ চারে ২৩ রান করা মুশফিককে শিকার করেন আয়ারল্যান্ডের বাঁ-হাতি স্পিনার ম্যাথু হামফ্রিজ।
মুশফিকের বিদায়ে ক্রিজে শান্তর সঙ্গী হন উইকেটরক্ষক লিটন কুমার দাস। রানের গতি বাড়িয়ে ১১৮তম ওভারে বাংলাদেশের রান ৫শ স্পর্শ করেন তারা। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এই নিয়ে ১৩তমবারের মত ইনিংসে ৫শ রান স্পর্শ করল টাইগাররা।
এরপর ৫৩ বলে টেস্টে ১৯তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন লিটন। শেষ পর্যন্ত ৮ চার ও ১ ছক্কায় ৬৬ বলে ৬০ রান তুলে হামফ্রিজের তৃতীয় শিকার হন লিটন। শান্তর সাথে ১০৭ বলে ৯৮ রানের জুটি গড়েন এই ডান-হাতি ব্যাটার।
লিটন ফেরার পর টেস্ট ক্যারিয়ারের ৩৮তম ম্যাচে অষ্টম সেঞ্চুরি তুলে নেন শান্ত। সর্বশেষ পাঁচ ইনিংসে তৃতীয় সেঞ্চুরি তার। গত জুনে শ্রীলংকা সফরে সিরিজের প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসে ১৪৮ ও অপরাজিত ১২৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।
১১২ বলে সেঞ্চুরি পাওয়ার পরই আউট হন শান্ত। অফ-স্পিনার এন্ডি ম্যাকব্রিনের বলে লেগ বিফোর আউট হন টাইগার দলনেতা। ১৪ চারে ১১৪ বলে ১০০ রান করেন শান্ত। এতে বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবারের মত ব্যাটিং অর্ডারে উপরের সারির প্রথম চার ব্যাটারই (জয় ১৭১, সাদমান ইসলাম ৮০ ও মোমিনুল ৮২) অন্তত হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পেলেন।
শান্তকে শিকার করে টেস্টে আয়ারল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েন ম্যাকব্রিন। ১০ টেস্টে ২৬ উইকেট আছে তার। ৭ টেস্টে ২৫ উইকেট নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে নেমে গেলেন পেসার মার্ক অ্যাডায়ার।
দলীয় ৫৪৫ রানে শান্ত ফেরার পর আরও ২ উইকেট হারিয়ে ৪২ রান যোগ করে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। ৮ উইকেটে ৫৮৭ রানে ইনিংস ঘোষণা করে টাইগাররা। টেস্টে এটি বাংলাদেশের তৃতীয় এবং দেশের মাটিতে সর্বোচ্চ দলীয় ইনিংস। ফলে প্রথম ইনিংস থেকে ৩০১ রানের লিড পায় টাইগাররা।
হামফ্রিজ ১৭০ রানে ৫ উইকেট নেন। এটি তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেরা বোলিং।
৩০১ রানে পিছিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে দলীয় ১৪ রানে প্রথম উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড। ওপেনার কেড কারমাইকেলকে ৫ রানে বোল্ড করেন পেসার নাহিদ রানা।
দ্বিতীয় উইকেটে বাংলাদেশ বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে ৮৩ বলে ৪৭ রান যোগ করেন আয়ারল্যান্ডের আরেক ওপেনার পল স্টার্লিং ও হ্যারি টেক্টর। ৭ চারে ৪৩ রান করে রান আউট হন স্টার্লিং।
দলীয় ৬১ রানে স্টার্লিং ফেরার পর আয়ারল্যান্ডকে ইনিংস হারের শঙ্কায় ফেলে দেন দুই স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও অভিষিক্ত হাসান মুরাদ।
টেক্টরকে ১৮ রানে তাইজুল এবং কার্টিস ক্যাম্ফারকে ৫ ও লরকান টাকারকে ৯ রানে শিকার করেন মুরাদ। ফলে ৫ উইকেটে ৮৬ রানে দিন শেষ করেছে আয়ারল্যান্ড। ম্যাকব্রিন ৪ ও হামফ্রিজ শূন্য হাতে অপরাজিত আছেন।
মুরাদ ৮ রানে ২টি, রানা ও তাইজুল ১টি করে উইকেট নেন।