ঢাকা, ২৩ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের মোট রপ্তানি ৪৮.২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) অবদান ১৭.০৩ শতাংশ যা ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ছিল ১৫.৯ শতাংশ।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেপজা পরিচালিত ইপিজেডসমূহ ও বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে রপ্তানি ও কর্মসংস্থানে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এই সময়ে পণ্য রপ্তানীতে ১৬.২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এবং ৩৩ হাজারেরও বেশি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। একইসাথে নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পাদিত চুক্তিসমূহ আগামী দিনে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা উজ্জ্বল করেছে।
২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ৮টি ইপিজেড এবং বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর্মরত রয়েছে মোট ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৫২৭ জন বাংলাদেশি নাগরিক। ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত যা ছিল ৫ লাখ ১১০ জন। নতুন প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম শুরু এবং বিদ্যমান শিল্প প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সম্প্রসারণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের এই প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেপজাধীন জোনসমূহ থেকে ৮.২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্য রপ্তানী হয়েছে যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৭.০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি মূল্যের তুলনায় ১৬.২২ শতাংশ বেশি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বেপজা মোট ১১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। ইপিজেডে উৎপাদিত পণ্যসমূহ বিশ্বের ১২০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেপজাধীন ইপিজেড ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ মূলধনী যন্ত্রপাতি, নির্মাণ সামগ্রী এবং অন্যান্য সম্পদে (চলতি মূলধন ব্যতীত) ২৯২.৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিনিয়োগকৃত ৩৫০.৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তুলনায় সামান্য কম। বেপজা এই প্রবণতাকে বৈশ্বিক ও স্থানীয় অভিযোজন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেখছে। তবে এই সময়ে নতুন লিজ চুক্তি স্বাক্ষরকৃত প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে বিনিয়োগের যে ভিত্তি তৈরি হয়েছে তা আগামী প্রান্তিকগুলোতে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে মর্মে বেপজা আশাবাদী।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩৩টি নতুন বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর বেপজার জন্য একটি মাইলফলক। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা শিল্প স্থাপনের লক্ষ্যে এই সময়ে বেপজার সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
চুক্তি স্বাক্ষরকৃত প্রতিষ্ঠানসমূহের মোট প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৯৭.৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যেখানে ৫৯ হাজর ৪০৮ জন বাংলাদেশি নাগরিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এই প্রতিষ্ঠানসমূহ তৈরি পোশাক, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, কৃষি-প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্য, জুতা, চামড়াজাত পণ্য, প্যাকেজিং, তাঁবু, পরচুলা, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, খেলনা, কম্পোজিটসহ বৈচিত্র্যময় পণ্য তৈরি করবে। আশা করা যায়, এ সকল প্রতিষ্ঠানসমূহের বাস্তবায়ন শুরু হলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রকৃত বিনিয়োগের ধারা বৃদ্ধি পাবে।
বর্তমানে বেপজাধীন জোনসমূহে ৫৬৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে যার মধ্যে চালু প্রতিষ্ঠান ৪৫০টি এবং বাস্তবায়নাধীন ১১৩টি। চালু শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে ৩৩ শতাংশ তৈরি পোশাক, ১৮ শতাংশ গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ এবং ৯ শতাংশ টেক্সটাইল উৎপাদন ও রপ্তানি করে, বাকি ৪০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রনিক্স এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম থেকে শুরু করে আসবাবপত্র এবং ফ্যাশন এক্সেসরিজসহ বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্র্যময় পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানী করে।
উল্লেখ্য, বেপজা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ৮টি ইপিজেড এবং চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিচালনা করছে। এ ছাড়া অধিকতর বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে যশোর ও পটুয়াখালী জেলায় আরো দুটি ইপিজেড স্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।
বেপজা আশা করছে যে, তারা আগামী বছরের মধ্যে পটুয়াখালী এবং যশোর ইপিজেডে বিনিয়োগকারীগণের অনুকূলে প্লট বরাদ্দ শুরু করতে পারবে।