ঢাকা, ২৮ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : দেশের পশ্চাৎপদ ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর এবং আধুনিক শিল্পের চাহিদাভিত্তিক কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে টেকসই কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘এসআইসিআইপি-পিকেএসএফ’ প্রকল্প আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে।
তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের আওতায় নিয়মিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে দেশের ১২ হাজার তরুণ-তরুণীকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের মধ্যে ৩০ শতাংশ হবে নারী। বাকি ৭০ শতাংশ প্রশিক্ষণার্থীর ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে নিম্ন-আয় ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা।
এই প্রকল্পের আওতায় ১২টি ভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণার্থীদের থাকা-খাওয়ার সম্পূর্ণ ব্যয় প্রকল্প থেকেই বহন করা হবে। প্রশিক্ষণ সফলভাবে সম্পন্ন করার পর তাদের অর্জিত দক্ষতার ভিত্তিতে স্ব-কর্মসংস্থান ও চাকরিভিত্তিক কর্মসংস্থানে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।
আজ পিকেএসএফ ভবনে সরকারের বাস্তবায়নাধীন ‘স্কিলস ফর ইন্ডাস্ট্রি কম্পেটিটিভনেস অ্যান্ড ইনোভেশন প্রোগ্রাম (এসআইসিআইপি)’ এর অংশ হিসেবে পিকেএসএফ-এর কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে এসব তথ্য জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে পিকেএসএফ এই প্রকল্প বাস্তবায়নে অংশীদার প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে। এ প্রকল্পে সহায়তা করছে এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
অর্থ সচিব ও এসআইসিআইপি-এর জাতীয় কর্মসূচি পরিচালক ড. মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
তিনি পিকেএসএফ-এর দক্ষতা উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের প্রশংসা করে বলেন, ‘পিকেএসএফ-এসআইসিআইপি প্রকল্পের অধীনে ১২ হাজার যুবকের প্রশিক্ষণ সফলভাবে সম্পন্ন হলে সরকার পিকেএসএফ-কে অতিরিক্ত সহায়তা প্রদান করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশে দক্ষ কর্মীর চাহিদা রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে পিকেএসএফ ও এর অংশীদার প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে কার্যকর অবদান রাখতে পারে।’
বিশেষ অতিথি অতিরিক্ত সচিব ও এসআইসিআইপি-এর নির্বাহী প্রোগ্রাম পরিচালক মোহাম্মদ ওয়ালিদ হোসেন বলেন, ‘পিকেএসএফ একটি ঐতিহ্যবাহী ও মূল্যবোধনির্ভর প্রতিষ্ঠান। আমরা আশা করি, তারা ১২টি ট্রেড দক্ষতার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস্তবায়ন করবে।’
তিনি আরও জানান, প্রশিক্ষকদের মানোন্নয়নে বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে পিকেএসএফ চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান বলেন, ‘বাংলাদেশের বিদ্যমান জনমিতিক সুবিধা বেশিদিন থাকবে না। তাই এই সুযোগ কাজে লাগাতে দক্ষ জনশক্তি গঠনের বিকল্প নেই। সরকার যে সব উদ্যোগ নিয়েছে, সেগুলোতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে এই এসআইসিআইপি-পিকেএসএফ প্রকল্প।’
পিকেএসএফ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের বলেন, ‘প্রতি বছর দেশে প্রায় ২০ লাখ নতুন তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে, যা দেশের জন্য একদিকে চ্যালেঞ্জ আবার অন্যদিকে সম্ভাবনা। এই বাস্তবতায় সরকার দক্ষতা উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই দৃষ্টিকোণ থেকে পিকেএসএফ তার ‘কৌশলগত পরিকল্পনা ২০২৫-২০৩০’-এ মানবসম্পদ উন্নয়নকে একটি প্রধান কৌশল হিসেবে নির্ধারণ করেছে।’
তিনি জানান, ‘ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এসএনডিএ)-এর অনুমোদিত পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রকল্পভুক্ত জনগোষ্ঠীর চাকরি ও স্ব-কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হবে।’
পিকেএসএফ-এর অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন জানান, ১২,০০০ প্রশিক্ষণার্থীর বাইরেও আরও ৮,৫০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যাদের মধ্যে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ অগ্রাধিকার পাবে।
তিনি আরও জানান, ‘এছাড়া আরও দুই হাজার এতিম ও অভিভাবক-পরিত্যক্ত তরুণ-তরুণীকেও প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শুধু প্রশিক্ষণ নয়, পিকেএসএফ এই তরুণদের জন্য পুঁজি, প্রযুক্তি ও বাজার সংযোগের সহায়তাও দেবে।’
অনুষ্ঠানে প্রকল্পের উপর একটি সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা দেন পিকেএসএফ-এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মো. জিয়াউদ্দিন ইকবাল।
উল্লেখ্য, এর আগে বর্তমান এসআইসিআইপি-পিকেএসএফ প্রকল্পের পূর্বসূরি পিকেএসএফ এসইআইপি প্রকল্পের আওতায় মোট ৩৮ হাজার ৬শ’ ৩৩ জনকে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দিয়েছে।