ঢাকা, ৭ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : মূল সুদহার কমাতে যাচ্ছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড (বিওই)। যুক্তরাজ্যের দুর্বল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও মার্কিন শুল্কের সম্ভাব্য ঝুঁকি বিবেচনায় আজ বৃহস্পতিবার এ সিধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
লন্ডন থেকে এএফপি এ সংবাদ জানায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি সম্ভবত সুদের হার এক-চতুরাংশ পয়েন্ট কমিয়ে ৪.০ শতাংশে নামিয়ে আনবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। মূল দৃষ্টি থাকবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে ব্যাংকের হালনাগাদ পূর্বাভাসের দিকে।
ইন্টারঅ্যাকটিভ ইনভেস্টরের ইনভেস্টমেন্ট প্রধান ভিক্টোরিয়া স্কলার বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক অবনতির স্পষ্ট লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে শ্রমবাজার থেকে এটি পরিষ্কার।
নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক এবং জ্বালানি বাজারে অস্থিরতার কারণে আন্তর্জাতিক অনিশ্চয়তার কারণে মুদ্রাস্ফীতির চাপের ঝুঁকি বিবেচনা করতে হবে।
তবে এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকের মুদ্রানীতিনির্ধারণী কমিটিতে মতপার্থক্য দেখা যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নয় সদস্যের কমিটির বেশিরভাগ যাদের মধ্যে গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলিসহ নীতিনির্ধারকের বেশিরভাগই এক চতুর্থাংশের কর্তনের পক্ষে ভোট দেবেন। আবার কেউ কেউ আরও বড় কর্তনের দাবি করবেন এবং অন্যরা কোনও পরিবর্তন করবেন না।
২০২৪ সালের আগস্ট থেকে শুরু হওয়া সুদ কমানোর ধারাবাহিকতায় এটি হবে বিওই এর পঞ্চম এক-চতুরাংশ হার কমানো। যা ব্যাংকের ধীরে ধীরে সুদহার কমানোর কৌশলেরই অংশ।
উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও দুর্বল অর্থনীতি একসঙ্গে
ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের প্রধান কাজ হলো বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি ২.০ শতাংশে ধরে রাখা। অথচ সর্বশেষ সরকারি তথ্যে দেখা যাচ্ছে, জুন মাসে এটি হঠাৎ বেড়ে ১৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩.৬ শতাংশে পৌঁছেছে। এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে মোটর জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্যকে।
একইসঙ্গে মে মাসে টানা দ্বিতীয় মাসের মতো যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে এবং বেকারত্ব বেড়ে চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪.৭ শতাংশে পৌঁছেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই দুর্বলতার পেছনে মূলত রয়েছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন লেবার সরকারের এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এবং যুক্তরাজ্যের পণ্যে ট্রাম্পের নতুন ১০ শতাংশ শুল্ক।
তবে মে মাসে লন্ডন ও ওয়াশিংটনের মধ্যে একটি চুক্তি হয়, যাতে যুক্তরাজ্য থেকে রপ্তানি হওয়া কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশের নিচে নামানো হয়, বিশেষ করে যানবাহনের ক্ষেত্রে।
গত মাসে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড তাদের এক প্রতিবেদনে হুঁশিয়ারি দেয়, শুল্কজনিত অনিশ্চয়তা ও মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত যুক্তরাজ্যের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় ঝুঁকি।
এদিকে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ গত সপ্তাহে সুদের হার অপরিবর্তিত রেখেছে, যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাজনৈতিক চাপ বাড়িয়ে সুদ হার হ্রাস করতে চাচ্ছেন, যাতে অর্থনীতি চাঙ্গা হয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ফেড চেয়ার জেরোম পাওয়েল বলেন, ‘এখনো আমরা দেখছি না পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে থামবে।’
অন্যদিকে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) তাদের পরবর্তী সভায় সুদের হার অপরিবর্তিত রাখবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে, যেহেতু ইউরোজোনে মুদ্রাস্ফীতি ইসিবি-র দুই শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি রয়েছে। তবে ট্রাম্পের নতুন শুল্কের প্রভাবে এই পূর্বাভাস পরিবর্তনও হতে পারে বলে মনে করছেন কিছু অর্থনীতিবিদ।