বাসস
  ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৩১
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৪৩

সহিংসতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার একমাত্র উত্তর ভালোবাসা: শফিক রেহমান

ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসের মুখোমুখি প্রখ্যাত সাংবাদিক শফিক রেহমান। ছবি : বাসস

ঢাকা, ১৪ ফেব্রুয়ারি,২০২৫ (বাসস) : বিশ্ব ভালোবাসা দিবস আজ। এদেশে পাশ্চাত্য ও বাঙালি সংস্কৃতির মিশেলেই দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। চার অক্ষরের ‘ভালোবাসা’ শব্দটি সর্বজনীন। ভালোবাসা বদলে দিতে পারে সব। সৃষ্টির আদিকাল থেকে এই ভালোবাসার জন্য বদলে গেছে দেশ, বদলে গেছে পরিবেশ-পরিক্রমা। এই ভালোবাসার নান্দনিক আবহই রুক্ষ, ধূসরতায় ছড়াতে পারে সজীবের আবহ।

এ দেশে ভালোবাসা দিবসের ধারনাটি পাশ্চাত্যের ভ্যালেন্টাইনস ডে থেকেই এসেছে। এ দিনে ফুল, চকলেট, পোশাক ও উপহারসামগ্রী আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা হয়।

‘আমি সব সময় চেয়েছি সব ধরনের ভালোবাসায় পূর্ণ থাকুক প্রতিটি পরিবার, প্রতিটি সম্পর্ক, তাহলে মানুষে-মানুষে হানাহানি, প্রতিহিংসা আর বিদ্বেষ থাকবে না।’ কথাগুলো বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমানের, যিনিপাশ্চাত্যের ভ্যালেন্টাইনস ডে-কে বাংলাদেশে ‘ভালোবাসা দিবস’ হিসেবে উদযাপনের মধ্য দিয়ে একে জনপ্রিয় করে তুলেছেন।

এক সময়ের বহুল প্রচারিত ও পাঠকনন্দিত সাপ্তাহিক ‘যায়যায়দিন’ এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক (বর্তমানে যায়যায়দিন প্রতিদিন এর সম্পাদক ) শফিক রেহমান। তিনি ১৯৯৩ সালে তার সাপ্তাহিকীতে ‘ভালোবাসা দিবস’ নামে পৃথক একটি সংখ্যা বের করেন । তারপর থেকেই সারাদেশে ভালোবাসা দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে।

ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে শফিক রেহমান সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর মুখোমুখি হন।  বাসস’র জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সেলিনা শিউলীর কাছে এ সম্পর্কিত নানা প্রশ্নের জবাবে তিনি তার মূল্যবান বক্তব্য তুলে ধরেন।

বাসস : কোন পরিকল্পনা থেকে বাংলাদেশে ভ্যালেন্টাইনস ডে পালনের বিষয়কে প্রাধান্য দিলেন?

শফিক রেহমান : ‘ছোটবেলায় আমি অনেকগুলো গণহত্যা দেখেছি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৯৪৪ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকের ঘটনাবলী। আরেকটি হলো ১৯৪৬ সালের ‘কলকাতা গ্রেট রায়ট’।

এগুলো আমার ভেতরে অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। আমি সবসময় মৃত্যু ও মৃত্যুদণ্ডবিরোধী। আমার যুক্তি হচ্ছে তুমি মানুষকে সব দণ্ড দিতে পারো, কিন্তু মৃত্যুদণ্ড দিও না। আমি এসব সমর্থন করি না। আমি মনে করি এখনো সব সহিংসতা, অশান্তি, ঘৃণা, বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার একমাত্র উত্তর হচ্ছে ভালোবাসা। তুমি যদি কাউকে  ভালোবাসো, তাহলে তুমি মানুষকে মারতে পারবে না। মানুষই একমাত্র প্রাণী যে স্বজাতিকে খুন করে। মানুষ পরিবর্তনশীল, সভ্যতা পরিবর্তনশীল, এটাই সত্য। সুতরাং মানুষকে বদলাতেই হবে। সেখানেই মানুষের অগ্রগতি।

বাসস : বাংলাদেশে ভ্যালেন্টাইনস ডে পালন শুরু হয় আপনার হাত ধরে, কোন ভাবনা থেকে এমন সিদ্ধান্ত নিলেন?

শফিক রেহমান : বহুদিন দেশের বাইরে থাকলেও দেশের ও দেশের মানুষের প্রতি একটা দায়বদ্ধতা অনুভব করেছি সবসময়। আমার কাছে মনে হয়েছে, দেশে একটা স্থিতিশীল পরিস্থিতি থাকা দরকার।

মানুষে মানুষে বিভাজন দূর করতে হবে। দেশের মানুষের শান্তি দরকার। আমি ভেবে দেখলাম এ দেশে শান্তি আনতে হবে। সবাইকে সহনশীল আর অহিংস হতে হবে। সুতরাং ভালোবাসা দিয়ে শুরু করতে হবে। ’৯২ তে যায়যায়দিন কাগজ বের করলাম। ’৯৩ তে আমি প্রথম ভালোবাসা সংখ্যা বের করলাম। নানা কথা চিন্তা করে বিশেষ একটি দিবস হিসেবে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে বেছে নিলাম। তবে তা একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। ভ্যালেন্টাইনস ডে-নাম দিলাম না।

পশ্চিমে ভ্যালেন্টাইনস ডে প্রেমিক প্রেমিকা, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সীমাবদ্ধ। আমি ভাবলাম বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবস হবে এদেশের প্রেক্ষাপটে। ‘ভালোবাসার  দিন হবে সবার’।

আমার সহকর্মীদের বললাম, সবচেয়ে বড় ভালোবাসার সম্পর্ক মা ও ছেলের সম্পর্ক। দেখতে পেলাম, ‘মায়ের দোয়ায় চলিলাম’ শিক্ষিত-অশিক্ষিত যেই হোক তাদের সিএনজি, রিকশা,বাস, ট্রাক,কোচ-ব্যানার,দোকানের নাম কিংবা বিলবোর্ড-সব জায়গায় ‘মা’ কে কেন্দ্র করে চলে। এটাই একমাত্র সত্যি সম্পর্ক যেখানে কোন স্বার্থ নাই। যেখানে সন্তান তার মাকে ভাল রাখবে, মাও তার সন্তানকে ভাল রাখবে। পিতার সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক থাকলেও সন্তানের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব হয়। একমাত্র সব স্বার্থের উর্ধ্বে ‘মা’ আর সন্তানের সম্পর্ক। তো, ভালোবাসা দিবসটাকে পারিবারিক রূপ দিতে হবে। সেজন্য এটাকে ভ্যালেন্টাইনস ডে বাদ দিয়ে ‘ভালোবাসা দিবস’ হিসেবে পালনের কথা ভাবলাম।

বাসস : আপনার বাড়ির ‘দেয়াল লিখন’ সম্পর্কে কিছু বলুন, এছাড়া ভালোবাসা দিবস নিয়ে নেপথ্যের কারো অণুপ্রেরণার কথা মনে পড়ছে?

শফিক রেহমান : প্রসঙ্গক্রমে বলছি, আমার বাসার সামনের দিকের সাদা দেয়ালটা খালি ছিল। চুনকাম করানোর পর মনে এলো এ জায়গাটা খালি না রেখে কিছু প্রিয় কথা বা গানের কলি লিখে রাখতে পারি। যেমন ভাবনা তেমনি কাজ। দেয়ালে প্রায় ৮০টি বাণী  লিখিয়েছিলাম। এর মধ্যে দুটি বাণীর কথা মনে পড়ছে। একটি হলো বিখ্যাত টেলিভিশন উপস্থাপক ডেভিড ফ্রস্ট বলেছিলেন, ‘সারা রাত জেগে মাকে সেবা-শুশ্রুষা করা, সেটাই হচ্ছে প্রকৃত ভালোবাসা’।  আরেকটি হলো,‘চালর্স বুকোস্কি বলেছিলেন,‘যদি তোমার প্রকৃত বন্ধুকে জানতে চাও, একবার জেলে যাও’। মাঝখানে লেখা ছিল অভিনেত্রী জ্যাঁ জ্যাঁ গেবোর ‘টাকা, ধোঁয়া আর প্রেম লুকানো যায় না’ বাণীটি।  দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকায় পরিচর্যার অভাবে দেয়ালের সেইসব লিখন আর নেই। সামনে আবার এমন করে লেখা হবে।

তবে একটা অভিজ্ঞতার কথা না বললেই নয়, একদিন আমি দুপুরের দিকে আমার বাড়ির সামনের দিককার বারান্দায় বসে পড়ছিলাম বা কিছু লিখছিলাম। হঠাৎ চোখ গেল বাড়ির সামনের ঐ দেয়ালটায়। দেখি, একজন বুড়ো লোক,আমার চেয়ে অনেক কম বয়েস, কিন্তু আমার চেয়ে অনেক বুড়িয়ে গেছে, দাঁত পড়ে গেছে, ময়লা লুঙ্গি-গেঞ্জি পরা। মাথায় টুকরি। টুকরিতে মনে হলো পুরানো কিছু বোতলসহ আরও কিছু রয়েছে। সে টুকরি মাথায় নিয়েই দাঁড়িয়ে দেয়ালের সেইসব লেখা পড়ছিল। আমার মনে হলো লোকটি শিক্ষিত। কি করে তা দেখছিলাম। তিনি পা বাড়াতেই আমি তাড়াতাড়ি নেমে ছুটে গেলাম তার কাছে। রোগা দীর্ঘাকায় শীর্ণদেহী মানুষটা হেঁটে যাচ্ছিল। কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ভাই সাহেব, কিছু মনে করবেন না, দেখলাম সবগুলো লেখা আপনি পড়লেন। কেমন লাগল? সে বলল, ভালো লাগছে। আমি আবার জানতে চাইলাম, কোনটা আপনার ভালো লাগল? আমাকে আঙুল দিয়ে দেখালো একটা গানের দিকে। দেখি, পাবনা জেলার মানুষ, অমাদের গর্ব গৌরিপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা এবং গায়ক মান্না দে’র সেই বিখ্যাত গানের মাঝখানের দুটো লাইন ,‘হৃদয় আছে যার সেই তো ভালোবাসে, প্রতিটি মানুষের জীবনে প্রেম আসে।’ আমার মনে হলো এই লোকটার জীবনেও প্রেম এসেছিল। এই লোকটার মুখে তা লেগেছিল। সে তার স্মৃতিটাকে মনে করছিল। দেখে আমার মায়া লাগল।

বাসস : ‘ভালোবাসা দিবস’ নিয়ে বিশেষ সংখ্যা বের করেছিলেন, প্রক্রিয়াটা নিয়ে কিছু বলুন।

শফিক রেহমান : ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকার  একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। গার্ডিয়ান পত্রিকা করতো কি -সব সিরিয়াস খবরের মধ্যে এমন একটা খবর দিতো, ওইটা খুঁজে বের করতে হতো, গার্ডিয়ান কি এপ্রিল ফুল করেছে পাঠকদেরকে। তাদের কোন খবর এপ্রিল ফুল। পাঠকদের ওরা পরবর্তীতে জানাতো যে, এই খবরটায় ক্লু ছিল, যারা বুদ্ধিমান লোক তারা বুঝতে পারতো কোনটায় এপ্রিল ফুল করা হয়েছে। গার্ডিয়ানের এই অভিনবত্ব আমাকে মুগ্ধ করেছিল। এমন কিছু ধারণা আমাকে ভাবিয়েছিল। তো, যায়যায়দিন পত্রিকায় ৩২ পৃষ্ঠার ‘ভালোবাসা দিবস’ সংখ্যা প্রকাশ করেছিলাম। পাঠকই যার লেখক। পাঠকদের অনুভূতি কেমন তা দেখতে ১৬ পৃষ্ঠা বরাদ্দ রেখেছিলাম।

বিস্তারিত জানিয়েছিলাম ভ্যালেন্টাইনস ডে সম্পর্কে। অভিনব এই ধারণা সাড়া ফেলেছিল খুব।

বাসস : আপনি ‘লাল গোলাপ’ বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন এই দিবসে, সে সম্পর্কে কিছু বলুন।

শফিক রেহমান : দেখুন, আমি মনে করি ভালোবাসা সর্বজনীন। কাছের মানুষদের সঙ্গে এই দিনটিতে শত ব্যস্ততার মাঝেও একটু ভিন্নভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করলে মানুষের মধ্যকার দূরত্ব ঘুচে যেতে পারে। ভালোবাসার একটা বহিঃপ্রকাশ থাকা উচিত। বন্ধুবান্ধব-পাড়া প্রতিবেশী, শিক্ষক-ছাত্র, পুলিশ-জনতা, বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে, সবার মধ্যে যেন এমন ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়। এই বহিঃপ্রকাশটা খুব সস্তায় পাওয়া যায় বলেই আমি লাল গোলাপের কথা বলছি। রাস্তাঘাটে সহজে পাওয়া যায়, সহজলভ্যও। আমি দিবসটির শুরু থেকে বলে আসছি ভালোবাসা দিবসে, এদিন সকাল বেলা, প্রিয় মানুষের সঙ্গে সুন্দর কিছু মুহূর্ত জমা থাকুক। ছেলেমেয়েরা যেন তাদের বাবা মাকে এক কাপ চা করে খাওয়ায়। আরও কিছু করা যেতে পারে। আমি লিখেও দিয়েছি, অনেককে কি করে ভালোবাসা প্রকাশ করা যাবে। যদি পয়সা থাকে তাহলে লজেন্স কিনে দাও। যদি এসব কিছু কেনার সামর্থ্য না থাকে তাহলে অন্তত একটা চুমু দিতে পারো বিনে পয়সায়। এই কথাগুলোই আমি বলবো।

বাসস : ফুল নিয়ে শাহবাগের বিক্রেতাদের কি পরামর্শ দিয়েছিলেন?

শফিক রেহমান : আপনারা লক্ষ্য করলে দেখবেন গোলাপসহ নানা ফুল তোড়া বাঁধার পাশাপাশি লম্বা ডাঁটা সহকারে বাজারে বিক্রি করা হয়। আমি শাহবাগে গেলে ব্যবসায়ীরা খুব খুশী হয়। আমাকে চিনতে পেরে কাছে এসে কত কি গল্প করে। তো আমি একদিন তাদেরকে লম্বা ডাঁটাসহ ফুল বিক্রি করার পরামর্শ দিলাম। যাতে ফুল কেনার পর ক্রেতারা তা কিছুদিন টবে সাজিয়ে রাখতে পারে। নিজে প্রেম করতে গিয়ে দেখেছি, আমার স্ত্রীকে ফুল দিতে হবে, কোথায় পাবো? তখন তো এত সহজে পাওয়া যেতো না। তখন ইউনিভার্সিটির মালিকে ঘুষ দিতাম। তো সে আমাকে এনে দিল একদম ডাঁটা কেটে গোলাপ ফুলের তোড়া  বানিয়ে। তোড়া নিয়ে তো ঘোরাঘুরি করা যাবে না। তো তাদেরকে বললাম ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখার মতো উপযোগী করে ফুলের ডাঁটা কেটে দিতে। এটাও আমি করেছি।

বাসস : দিবসটিকে কেন্দ্র করে আর্থিকভাবে অনেকে সুফলভোগী হচ্ছেন। এ বিষয়ে কিছু বলুন।

শফিক রেহমান : দিবসটিতে বাংলাদেশের মানুষদের আগ্রহ বেড়েই যাচ্ছে। এটা দ্রুত প্রসার লাভ করতে থাকে। আমি কখনো ভাবিনি এর এতো প্রসার বাড়বে। দেখুন এই দিবসে সবাইকে আনন্দিত আর হাসিখুশি দেখা যায়। সকল শ্রেণিপেশার মানুষ তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী তার পরিবারকে নিয়ে বেড়াতে বের হয়, আনন্দ করে, এই একটি দিবস বাংলাদেশে স্বতঃস্ফুর্তভাবে সবাই উদযাপন করে।

পত্রিকায় একদিন পড়লাম, যশোরে কোন এক ভালোবাসা দিবসে ১২ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছিল। আমি দেখে খুব খুশি হলাম যে এই ভালোবাসা দিবসের বাণিজ্যিক ভিত্তি বাড়ছে। মানুষের উপার্জনের পথ আরও একটু খুলল। এটা একটা বড় অবদান বলে মনে করি।

বাসস : ‘ভালোবাসা দিবস’ বাংলাদেশের মানুষের মনোজগতে বিশেষ কোন পরিবর্তন আনতে পেরেছে কি?আপনি কি মনে করেন?

শফিক রেহমান : ভ্যালেন্টাইনস ডে’র মূল তত্ত্বকে ধারণ করে সুন্দর একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি আমি। যেখানে সবার মতো প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। মানুষের মধ্যে সহমর্মীতা বাড়বে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়ে দেয়ালে একটা গ্রাফিতি ছিল -‘ধর্ম যার ধর্ম তার, দেশটা সবার।’ এটা আমার খুব ভালো লেগেছে। যে যার ধর্ম পালন করবে। এটাই হওয়া উচিত। এদেশে মানুষ পাপ-পূণ্যের বিচার করে বলেই খুন খারাবি কম হয়। দয়া-দাক্ষিণ্য যা করে এটা পাপ-পূণ্যের বিচারে করে। সেজন্য ধর্মটা কিন্তু আমাদের দরকার। কিন্তু ধর্মবিদ্বেষী হওয়া উচিত না। এবং যিশু খ্রিস্ট বলেছেন,‘ লাভ দ্যা নেইবার’ আমি বলছি, আমি তো বলছি লাভ ইউর পুলিশ, লাভ ইউর বাড়িওয়ালা। ‘ভালোবাসা দিবস’ শুধুমাত্র  একদিনের আবেগ নয়, বছরব্যাপী ভালোবাসার পরিচর্যা করা দরকার।

বাসস : সম্প্রতি ফেসবুকে কেউ কেউ পোস্ট করছে এবারের ভ্যালেন্টাইনস ডে পালন না করে ‘জুলাই গণঅভুত্থানে শহিদদের স্মরণ করা বেশি সময়োপযোগী’-এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য জানতে চাইছি।

শফিক রেহমান : জুলাই গণঅভুত্থানে শহিদদের স্মরণ করা এই দিনে বেশি দরকার। কেননা, এই শহিদদের ত্যাগের কারণেই কিন্তু আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছি।

বিগত বছরে আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমি চাই দেশের যে কোন অনুষ্ঠানে এসব বীর শহিদকে স্মরণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হোক। আর এইসব ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা তাদেরকে আরো ভালোবাসতে অবশ্যই এবার দিবসটিকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের সাপ্তাহিক ‘মৌচাকে ঢিল’ এর বিশেষ ভালোবাসা সংখ্যার শিরোনাম দিয়েছি ‘স্বপ্ন সংগ্রামে ভালোবাসা।’

বাসস : মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্যে বাসসের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ। 

শফিক রেহমান : আপনাকেও ধন্যবাদ।