ঢাকা, ২০ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): মঙ্গলবার থেকে দ্বিতীয় ও শেষ মৌসুমে ফিরছে ‘অ্যান্ডর’। স্টার ওয়ার্স সিরিজগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম সেরা বলে বিবেচিত হচ্ছে, যার পেছনে মূল কৃতিত্ব নির্মাতা টনি গিলরয়ের বয়স্ক ও বাস্তবতানির্ভর দৃষ্টিভঙ্গিকে দেওয়া হচ্ছে।
প্যারিস থেকে এএফপি জানায়, ডিজনি সাম্রাজ্যের পারিবারিক আনন্দভিত্তিক স্টার ওয়ার্স মহাবিশ্ব থেকে এই দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই আলাদা। তবে যারা গিলরয়ের লেখা ২০০২ সালের অ্যাকশন থ্রিলার দ্য বর্ন আইডেন্টিটি দেখেছেন—তাদের জন্য এটি অবাক করা কিছু নয়।
২০১৬ সালের স্টার ওয়ার্স সিনেমা রগ ওয়ানেই এই দৃষ্টিভঙ্গির আভাস মিলেছিল। গিলরয় এর সহ-লেখক ছিলেন। অ্যান্ডর মূলত সেই ছবির প্রেক্ষাপট গড়ে তোলার বিদ্রোহী আন্দোলনের কাহিনি।
‘সবকিছুই আবেগময় হয়ে উঠেছে’, কারণ আমরা রোগ ওয়ান-এর কাছাকাছি চলে এসেছি, এএফপিকে এমনটাই বলেছেন প্রধান চরিত্র ক্যাসিয়ান অ্যান্ডরের অভিনেতা দিয়েগো লুনা।
ডিজনির জন্য অ্যান্ডর-এর সাফল্য হলো স্টার ওয়ার্স ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য এক নতুন আশার আলো, কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দর্শকের কাছে এই সিরিজ কখনও হিট, কখনও মিস হয়েছে।
এ কারণেই ১২ পর্বের এই কাহিনিতে ডিজনি বড় বিনিয়োগ করেছে। ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, এর নির্মাণ ব্যয় ৬৪৫ মিলিয়ন ডলার।
যেখানে রোগ ওয়ান ছিল বিদ্রোহীদের এক আত্মঘাতী মিশনের গল্প, যেখানে চরিত্ররা একটি লক্ষ্যের জন্য সবকিছু ত্যাগ করে, অ্যান্ডর দেখায় সেই চরিত্রদের একজন কীভাবে সেখানে পৌঁছায়—বলেছেন লুনা।
এটি কোনো সাধারণ নায়ককেন্দ্রিক অভিযাত্রা নয়; বরং বিদ্রোহী ও সাম্রাজ্যের উভয় পক্ষের উদ্দেশ্য ও অন্ধকার দিকও অনুসন্ধান করে। এতে সুইডিশ অভিনেতা স্টেলান স্কার্সগার্ড অভিনীত বিদ্রোহী জোটের এক গুপ্তচরসহ অন্যান্য চরিত্রের ওপরও আলোকপাত করা হয়।
প্যারিস সফরে এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গিলরয় জানান, প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল অ্যান্ডরের পাঁচটি মৌসুম তৈরি করার, তবে যে পরিমাণ কাজ প্রয়োজন, তা বাস্তবে করা সম্ভব নয় বলে তিনি উপলব্ধি করেন।
ফলে দুই মৌসুমেই সীমাবদ্ধ রাখা হয় সিরিজটি, তবে দ্বিতীয় মৌসুমের পর্বগুলো ‘প্রতিটি দিক থেকে আরও তীব্র, আরও জটিল’—বলেছেন লুনা।
২০২২ সালের শেষ ভাগে প্রথম মৌসুম শেষ হয় সমালোচকদের রেটিং সাইট রটেন টমেটোজ-এ ৯৬ শতাংশ রেটিং অর্জন করে, যা থেকে দ্বিতীয় মৌসুমের জন্য ডিজনি+ স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে সিরিজটি।
এই মৌসুম যুক্তরাষ্ট্রে মঙ্গলবার, আর ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও অন্যান্য অঞ্চলে বুধবার থেকে সম্প্রচার শুরু হবে।
বিদ্রোহের পাঠ
অ্যান্ডর একমাত্র সফল স্টার ওয়ার্স টিভি সিরিজ নয়।
এর আগে দ্য ম্যান্ডালোরিয়ান প্রথম দুই মৌসুমে দর্শকদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছিল, তবে তৃতীয় মৌসুমে আগ্রহ হ্রাস পায়। এই গল্পকে এখন সিনেমায় রূপান্তর করা হবে, যার মুক্তি আগামী বছর নির্ধারিত।
কিন্তু অ্যান্ডর দর্শক ও সমালোচকদের মন জয় করেছে তার গাঢ় আবহ, রাজনৈতিক থিম এবং বাস্তবতাসম্পন্ন পরিবেশনার জন্য।
গিলরয় বলেন, বিদ্রোহ সম্পর্কে বহু বছর ধরে তার পড়াশোনার বাতিকই এই সিরিজে তার দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করেছে—‘রুশ বিপ্লব, ফরাসি বিপ্লব, টমাস পেইন, অলিভার ক্রমওয়েল, হাইতিয়ান বিপ্লব, রোমান বিপ্লব এবং সাপাটা—সব কিছুই রয়েছে এখানে।’
দ্বিতীয় মৌসুমে একটি গ্রহ ঘোরমানের দুঃখজনক পরিণতি তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে প্রোপাগান্ডা ও প্রচারণার ভূমিকা উঠে এসেছে। এর জন্য গিলরয় ও তাঁর দল বিস্তারিতভাবে পৃথিবী নির্মাণ করেছেন—সেখানে অর্থনীতি, ভাষা, সংস্কৃতি, পোশাক প্রভৃতি বিষয় কল্পনা করা হয়েছে।
অনুপ্রেরণার অংশ ছিল ফরাসি টিভি সিরিজ আ ফ্রেঞ্চ ভিলেজ, যেখানে একটি গ্রাম নাৎসি অধিকৃত ফ্রান্সে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করে।
‘আমি সিরিজটি খুব ভালোবাসতাম... ঘোরমান লেখার সময় সেই গ্রামের কয়েকটি চরিত্রের কথা আমার মাথায় ছিল’, বলেন গিলরয়।
যদিও অনেকে অ্যান্ডরে আমাদের বর্তমান পৃথিবীর প্রতিচ্ছবি খুঁজে পেতে পারেন, গিলরয় বলেন, একজন লেখকের দৃষ্টিপাত ভবিষ্যতের দিকে বিস্তৃত হয় বলে তাৎক্ষণিক বাস্তবতা তাঁর পরিকল্পনায় স্থান পায় না।
তবে তিনি যোগ করেন, ‘দুঃখজনক সত্য হলো ইতিহাস বারবার ফিরে আসে।’ প্রযুক্তি ও কথাবার্তার ধরণ বদলালেও ‘দমন ও প্রতিরোধের গতি চক্রের মতো ঘুরতে থাকে—এটি দুঃখজনকভাবে চিরন্তন।’