ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার প্রতিযোগিতায় মগ্ন কাতারিরা

বাসস
প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৫, ১০:২৫ আপডেট: : ০৪ মে ২০২৫, ১৫:১৩

ঢাকা, ৪ মে, ২০২৫ (বাসস) : দোহার সমুদ্রতটে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা কাঠের তৈরি ঐতিহ্যবাহী ‘ডিঙি’ নৌকাগুলো যেন কাতারের দীর্ঘ সাগরিক ঐতিহ্যের সাক্ষ্য হয়ে উঠেছে। তীরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে অসংখ্য মাছ-সবই দেশটির ১১তম সানিয়ার উৎসবের অংশ, যার উদ্দেশ্য কাতারের ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার সংস্কৃতি নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা।

দোহা থেকে এএফপি জানায়, নৌকাগুলোর ডেকে ঐতিহ্যবাহী পোশাক-সাদা টি-শার্ট ও তোয়ালে-পরে মাছ ধরায় অংশ নিয়েছেন প্রতিযোগীরা। এ উৎসব ঘিরে কাতারিদের মধ্যে ফিরে এসেছে পুরোনো দিনের আবেগ ও গর্ব।

চার দিন সমুদ্রে কাটিয়ে উৎসবস্থল কাতারার সাংস্কৃতিক গ্রামে ফিরে এসে প্রতিযোগী মোহাম্মদ আল-হেইল বলেন, 'অসাধারণ এক অনুভূতি ছিল। ফিরে এসে যখন চারপাশে বন্ধুদের দেখলাম, তখন সেই অনুভূতিটা আরও তীব্র হলো।'

পাশেই ঐতিহ্যবাহী সাদা ‘থোব’ পরা শিশুরা দাঁড়িয়ে তিনটি বড় মাছের পাশে, যেন তাদের ওজন মাপার চেষ্টা করছে। বিকেলের রোদে মাছগুলোর আঁশ চকচক করছে। প্রতিটি মাছের ওজন প্রায় ১০ কেজি-এই সপ্তাহব্যাপী প্রতিযোগিতার সবচেয়ে বড় মাছ এগুলোই।

এবারের আসরে ৫৪টি দল অংশ নেয়। প্রতিযোগীরা আধুনিক যন্ত্র নয়, বরং হাতে ধরা সাধারণ ফিশিং লাইনের মাধ্যমে মাছ ধরে ধাও নৌকাতেই দিনরাত কাটিয়েছেন।

বড় মাছের জন্য পুরস্কার থাকলেও সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত পুরস্কার দেওয়া হয় একটি পয়েন্টভিত্তিক মানদণ্ডে-যেখানে মাছের সংখ্যা, গুণগত মান ও বৈচিত্রের ভিত্তিতে বিচার করা হয়। ‘হামোর’ ও ‘কিংফিশ’ ধরা গেলে বেশি পয়েন্ট মেলে।

ঐতিহ্যের সংরক্ষণ

তেল ও গ্যাস আবিষ্কারের আগে কাতারসহ উপসাগরীয় দেশগুলোর অর্থনীতি নির্ভর করত মুক্তো শিকার ও মাছ ধরার ওপর। ১৯২০-এর দশকে কৃত্রিম মুক্তোর আগমনে মুক্তো শিল্পের পতন হলেও মাছ ধরা সংস্কৃতি অনেকাংশেই টিকে রয়েছে।

প্রতিযোগী মোহাম্মদ আল-মোহান্নাদি বলেন, 'ভালো লাগছে, তবে ফলাফল নিয়ে একেবারে খুশি নই, কারণ আমি প্রথম হতে চেয়েছিলাম। ইনশাআল্লাহ, পরবর্তী প্রতিযোগিতায় ভালো করব।'

চার দিন আগে কাতারের দক্ষিণ উপকূল থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে নীল জলরাশিতে ছড়িয়ে ছিল অসংখ্য নৌকা। সেখানকার ‘লুসাইল’ নৌকায় ছিলেন ইউসুফ আল-মুতাওয়া। তিনি জানান, সকালবেলার হালকা বাতাসের ফাঁকে তারা বড়শি ফেলে বড় মাছের অপেক্ষায় ছিলেন।

'যখন বাতাস কমে, তখন বড় মাছ ওপরে ওঠে,' বলেন মুতাওয়া। ১২ সদস্যের দল নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন তিনি।

৫৫ বছর বয়সী মুতাওয়া কাতারের লুসাইল শহরের পরিচালন বিভাগের পরিচালক। তিনি জানান, তার পিতা ১৯৪০-এর দশক পর্যন্ত একটি ছোট নৌকায় কুয়েত-কাতার রুটে ব্যবসা করতেন।

‘১০০ বছর আগের জীবন'

মুতাওয়া বলেন, 'আমার বাবা কুয়েত থেকে খাবার এনে এখানে বিক্রি করতেন। পরে ঝড়ের কবলে পড়ে তাঁর নৌকা ভেঙে গেলে তিনি কাতারের নবীন তেলশিল্পে চাকরি নেন।'

'যদি আপনি ১০০ বছর আগের জীবনের কথা ভাবেন... তারা কীভাবে খেত, সেটা ছিল কঠিন সময়,' বলেন তিনি। তার নিজের ছেলেরাও আগে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

অন্যদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আসা প্রতিযোগী আলি আলমুল্লা জানান, তিনি দ্বিতীয়বারের মতো ‘লুসাইল’ দলের সঙ্গে অংশ নিচ্ছেন।

৩৫ বছর বয়সী এই দুবাইয়ের রিয়েল এস্টেট ব্যবস্থাপক বলেন, 'আমি এখানে এসেছি ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরায় অংশ নিতে। এটা আমাদের কাছে আনন্দের ব্যাপার। বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোটা দারুণ।'

'তরুণ প্রজন্মের আমাদের দাদা-নানারা কীভাবে জীবন কাটাতেন তা জানা উচিত,' বলেন তিনি।

আলমুল্লা জানান, তার দাদাও মুক্তো শিকার করতেন। উপসাগরের বিভিন্ন দেশে আধুনিক ও ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে মাছ ধরার প্রতিযোগিতায় অংশ নেন তিনি।

'জয়লাভ আনন্দের, তবে আমরা এসেছি উপভোগ করতে,'  বলেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা প্রচারে ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের সঙ্গে এমওইউ সই
চুয়াডাঙ্গায় ট্রাক-ইজিবাইক মুখোমুখি সংঘর্ষে চালকসহ ৩ যাত্রী নিহত
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তরুণরা নতুন সমাজ গড়বে : সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা
১৯ জুলাই জাতীয় সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে উত্তরায় জামায়াতের মিছিল
বিএনপি ৩১ দফার ভিত্তিতে মানবিক রাষ্ট্র গঠনে এগিয়ে যাচ্ছে: এস এম জাহাঙ্গীর
ফাঁসির মঞ্চ থেকে আল্লাহ আমাকে জনতার মঞ্চে নিয়ে এসেছেন: এটিএম আজহারুল ইসলাম
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাসের আলোচনার ইঙ্গিত
অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক বৈষম্য চিরতরে বিদায় করতে চাই : নাহিদ ইসলাম
রোমে জ্বালানি স্টেশনে ভয়াবহ বিস্ফোরণে আহত ৪৫
নরসিংদীতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের সম্মানে আলোচনা সভা 
১০