শিরোনাম
ঢাকা, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): বিশিষ্ট রেসহর্স ব্যবসায়ী ও শিয়া আধ্যাত্মিক নেতা আগা খান মঙ্গলবার ৮৮ বছর বয়সে মারা গেছেন।
প্যারিস থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
আগা খানের পুরো নাম ছিল প্রিন্স করিম আল-হুসেইনি। তাকে শিয়া ইসলামের ইসমাইলি সম্প্রদায়ের ৪৯তম উত্তরাধিকারী ইমাম হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং তিনি মহানবী মুহাম্মদের বংশধর হিসেবে পরিচিত।
বিলাসী জীবন ও পারিবারিক পরিচয়
আগা খান মাত্র ২০ বছর বয়সে তার দাদার কাছ থেকে এই উপাধি পান। তার দাদা দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ভেঙে তাকে নতুন যুগের একজন যোগ্য তরুণ নেতা হিসেবে উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন।
তিনি এক ব্রিটিশ সমাজকর্মী এবং পাকিস্তানি কূটনীতিকের সন্তান। তার পারিবারিক জীবন ছিল বেশ আলোচিত—উচ্চবিত্ত জীবনের কারণে বিভিন্ন প্রেমের সম্পর্কে জড়ানোর জন্য তিনি প্রায়ই সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হতেন।
তিনি ব্যক্তিগত বিমান, বিলাসবহুল ইয়ট ও শীতকালীন অলিম্পিকে স্কিইংয়ের জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি এক ব্রিটিশ মডেলকে বিয়ে করেন এবং তাদের তিন সন্তান হয়। পরবর্তীতে তারা আলাদা হয়ে যান এবং তিনি জার্মান গায়িকা গ্যাব্রিয়েল থাইসেনকে বিয়ে করেন। তাদের একটি সন্তান হয়।
দানশীলতা ও উন্নয়নমূলক কাজ
আগা খান ১৯৬৭ সালে একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন, যা দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের ১৮টি দেশে শিক্ষার প্রসারে কাজ করেছে।
পাকিস্তানে তার সংস্থার স্কুলগুলো তালেবানের বিরোধিতার মুখে পড়ে। তালেবানরা দাবি করে, এসব স্কুল ইসলামের বিরোধিতা করছে এবং পুরুষ ও নারীদের ধর্ম থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।
আগা খান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক ইতিহাসে ডিগ্রি নেন। তিনি বিশ্ববাসীকে ইসলামী সংস্কৃতি সম্পর্কে জানাতে আগ্রহী ছিলেন এবং একবার বলেছিলেন, 'টাকা থাকা দোষের কিছু নয়, যদি তা সমাজের জন্য ভালো কাজে লাগে এবং লোভের উদ্দেশ্যে ব্যবহার না হয়।'
তিনি বসনিয়ার ঐতিহ্যবাহী মোস্তার সেতু পুনর্নির্মাণে সহায়তা করেন, যা ১৯৯০-এর দশকের বালকান যুদ্ধের সময় ধ্বংস করা হয়।
রেসহর্সের প্রতি ভালোবাসা
ধর্মীয় দায়িত্ব নেওয়ার তিন বছর পর আগা খান তার দাদা ও বাবার গড়ে তোলা রেসহর্স ব্যবসা চালু করেন। তিনি রেসের দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি পরিচিত হন শারগার নামে এক বিখ্যাত ঘোড়ার জন্য, যা ১৯৮১ সালে এপসাম ডার্বিতে সহজ জয় লাভ করে।
কিন্তু ১৯৮৩ সালে শারগারকে আয়ারল্যান্ড থেকে অপহরণ করা হয়, যা এখনও রহস্য হয়ে আছে।
প্রতারণার শিকার
২০১৬ সালে, ৭৯ বছর বয়সে আগা খান এক ভয়াবহ প্রতারণার শিকার হন। এক ব্যক্তি নিজেকে ফ্রান্সের এক উচ্চপদস্থ রাজনীতিবিদ পরিচয় দিয়ে তার সংস্থার কাছ থেকে ২০ মিলিয়ন ইউরো হাতিয়ে নেয়। এর মধ্যে ৮ মিলিয়ন ইউরো চিরতরে হারিয়ে যায়।
আগা খানের মৃত্যুতে তার অনুসারীদের মাঝে গভীর শোক নেমে এসেছে।