ঢাকা, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘ইহুদি-বিরোধী, চরম বামপন্থী প্রতিষ্ঠান’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এই অভিজাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ট্রাম্প প্রশাসনের অর্থায়ন স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছে।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, হোয়াইট হাউসে পুনরাগমনের পর থেকে ট্রাম্প বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, যেগুলো তাদের ক্যাম্পাসে কথিত ইহুদি-বিরোধিতা সহ্য করেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বাজেট, কর-মুক্ত সুবিধা এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির ওপর হুমকি দিয়েছেন তিনি।
তবে হার্ভার্ড এসব চাপের কাছে নতি স্বীকার করেনি। সোমবার তারা ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
হার্ভার্ডের দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, ফেডারেল অনুদানের ওপর যে শর্ত আরোপ ও অর্থায়ন স্থগিত করা হয়েছে, তা অবৈধ এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচ্য—যার উদ্দেশ্য হচ্ছে এই আইভি লিগ প্রতিষ্ঠানের স্বায়ত্তশাসনে হস্তক্ষেপ করা।
ট্রাম্প তার নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লিখেছেন, ‘এই জায়গাটা একটা উদারপন্থী বিশৃঙ্খলা,’ এবং অভিযোগ করেন, ‘তারা এমন শিক্ষার্থীদের ভর্তি করে যারা আমাদের দেশটাকে ছিঁড়ে ফেলতে চায়।’
ট্রাম্পের এই মন্তব্য আসে একদিন পর, যখন তিনি উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে লক্ষ্য করে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। এতে নির্ধারিত হয় কোন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নির্দিষ্ট অনুদান ও শিক্ষাঋণের অর্থ পাবে—এতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এই নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প এমন সব পদক্ষেপ দমন করতে চেয়েছেন যেগুলো ‘জাতিগত ও বর্ণগত সংখ্যালঘুদের’ প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে, যাকে তিনি ‘অবৈধ বৈষম্য’ বলে অভিহিত করেছেন।
ইহুদি-বিরোধিতার অভিযোগ -
ট্রাম্প ও তার হোয়াইট হাউস দল বলছে, তাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়বিরোধী অভিযানের পেছনে রয়েছে ‘নিয়ন্ত্রণহীন ইহুদি-বিরোধিতা’র প্রতিক্রিয়া এবং সংখ্যালঘুদের প্রতি ঐতিহাসিক নিপীড়নের মোকাবিলায় নেওয়া বৈচিত্র্য কর্মসূচিগুলো উল্টে দেওয়ার চেষ্টা।
তাদের দাবি, গত বছর গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়া প্রতিবাদে ব্যাপক ইহুদি-বিরোধিতা দেখা গেছে।
হার্ভার্ডসহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয় সেই সময়ে এসব প্রতিবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। আন্দোলনকারীদের দাবি অনুযায়ী, হার্ভার্ড ২৩ জন শিক্ষার্থীকে প্রবেশন দিয়েছে এবং ১২ জনকে স্নাতক ডিগ্রি প্রদান থেকে বিরত রেখেছে।
হার্ভার্ড প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমের ওপর ট্রাম্প প্রশাসন ‘নানাবিধ তদন্ত’ চালিয়েছে।
বৈচিত্র্য সংক্রান্ত ট্রাম্পের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণশীলদের এই দাবি প্রতিফলন করে যে, মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অতিমাত্রায় উদারপন্থী হয়ে পড়েছে, ডানপন্থী কণ্ঠস্বরকে অবদমন করছে এবং সংখ্যালঘুদের প্রতি পক্ষপাত দেখাচ্ছে।
হার্ভার্ডের ক্ষেত্রে হোয়াইট হাউস প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম ও সবচেয়ে সম্পদশালী বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমে নজিরবিহীন হস্তক্ষেপ করতে চাইছে—যেটি বিশ্বব্যাপী উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় অন্যতম সম্মানিত প্রতিষ্ঠান।
সরকারি পর্যবেক্ষণ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানোয় ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের ২.২ বিলিয়ন (২২০ কোটি) ডলারের অনুদান আটকে দিয়েছে।
বুধবারের নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প বলেন, ‘আমেরিকান শিক্ষার্থী ও করদাতারা এর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য। আমার প্রশাসন আমাদের ভেঙে পড়া স্বীকৃতি ব্যবস্থা সংস্কার করবে যাতে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যুক্তিসঙ্গত খরচে উচ্চমানের শিক্ষা দিতে পারে।’