ঢাকা, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : গাজার উদ্ধারকারী দল ও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ইসরাইলি বিমান হামলায় অন্তত ৫৫ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যেই সেনাবাহিনী জানায়, যদি শিগগির জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া না হয়, তবে তারা আরও বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালাবে।
গাজা থেকে এএফপি জানায়, দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে ১৮ মার্চ থেকে ইসরাইল গাজায় নতুন করে সামরিক অভিযান শুরু করে। যুদ্ধবিরতির ফলে এই অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে কিছু সময়ের জন্য যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার গাজায় সেনাদের সঙ্গে সাক্ষাতে ইসরাইলি সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এয়াল জামির বলেন, 'জিম্মিদের মুক্তি সংক্রান্ত অগ্রগতি আমরা যদি শিগগির না দেখি, তবে গাজায় আমাদের তৎপরতা আরও বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে রূপ নেবে।'
এই হুঁশিয়ারির পাশাপাশি ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের নতুন করে সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে।
এর আগে, গাজার উত্তরাঞ্চলের এক বাড়িতে বিমান হামলায় একই পরিবারের ছয় সদস্য — এক দম্পতি ও তাদের চার সন্তান — নিহত হন বলে জানিয়েছে সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি।
পরিবারটির এক আত্মীয় নিদাল আল-সারাফিতি বলেন, হামলার সময় সবাই ঘুমিয়ে ছিল।
'আর কিছু বলার নেই। ধ্বংসযজ্ঞ কাউকে ছেড়ে দেয়নি,' — বলেন তিনি।
একই দিন, জাবালিয়ার একটি পুরোনো পুলিশ স্টেশনে আরেকটি হামলায় ৯ জন নিহত এবং আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতাল।
জাবালিয়ার ২৩ বছর বয়সী আব্দেল কাদের সাবাহ বলেন, 'সবাই দৌড়াতে ও চিৎকার করতে শুরু করল, কেউ বুঝতে পারছিল না কী করবে, বোমাবর্ষণের ভয়াবহতা এতটাই ছিল।'
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ওই এলাকায় হামাসের একটি ‘কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র’ লক্ষ্য করে তারা হামলা চালিয়েছে। তবে সেটি উক্ত পুলিশ স্টেশন ছিল কি না, তা তারা নিশ্চিত করেনি।
জাবালিয়ায় হাজ্জ আলি পরিবারের বাড়িতে এক হামলায় আরও ১২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে সিভিল ডিফেন্স।
পুরো গাজা জুড়ে হামলায় আরও ২৮ জন নিহত হন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক ও উদ্ধারকর্মীরা।
এর মধ্যেই ইসরাইলি সেনাবাহিনী বেইত হানুন ও শেখ জায়েদ এলাকার বাসিন্দাদের সরে যেতে নির্দেশ দেয়।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর আরবি মুখপাত্র আবিখাই আদরাই ‘এক্স’-এ বলেন, 'এই এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও সেনাদের ওপর স্নাইপার হামলার কারণে আইডিএফ এখানে তীব্র অভিযান চালাচ্ছে।'
জাতিসংঘ হুঁশিয়ারি দিয়েছে, গাজা জুড়ে ইসরাইলের ক্রমবর্ধমান সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা বাস্তবে মানুষের জোরপূর্বক স্থানান্তরে পরিণত হচ্ছে।
সহায়তাকারী সংস্থাগুলোর মতে, গাজার ২৪ লাখ বাসিন্দার মধ্যে বেশিরভাগই যুদ্ধ শুরুর পর অন্তত একবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
‘এক এক করে মরছি’
খান ইউনিসে এক হামলার পর এএফপির ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, এক তরুণী ও এক শিশুর মরদেহ ব্যাগে মোড়া, পাশে শোকে কাতর আত্মীয়রা চুমু খাচ্ছেন, মুখে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।
'আমরা এক এক করে শহিদ হচ্ছি, টুকরো টুকরো হয়ে মরছি,' — বলেন রানিয়া আল-জুমলা, যিনি ওই এলাকায় এক হামলায় তার বোনকে হারিয়েছেন।
ইসরাইল ১৮ মার্চ অভিযান পুনরায় শুরু করার পর থেকে গাজায় অন্তত ১,৯৭৮ জন নিহত হয়েছেন। ফলে ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ৫১,৩৫৫ জনে — জানায় হামাস-শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার ইসরাইলি সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে, তাদের ট্যাংকের গুলিতে গত মাসে দেইর আল-বালাহ শহরে জাতিসংঘের এক কর্মী নিহত হয়েছেন — প্রাথমিক তদন্তে এমনটাই উঠে এসেছে।
গত ১৯ মার্চ নিহত ওই কর্মী জাতিসংঘের প্রকল্প সেবা দফতর (ইউএনওপিএস)-এর একজন বুলগেরীয় কর্মী। তখন সেনাবাহিনী জানিয়েছিল, ওই এলাকায় তারা কোনো অভিযান চালায়নি।
বুলগেরিয়া বলেছে, হত্যাকাণ্ডের জন্য তারা ইসরাইলের ‘আনুষ্ঠানিক দুঃখ প্রকাশ’ পেয়েছে।
এর আগে গত রোববার সেনাবাহিনী গাজায় ১৫ জন জরুরি সেবাকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় আরেক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
সেখানে স্বীকার করা হয় যে, অভিযান পরিচালনায় ব্যর্থতার কারণে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে, এবং দায়িত্বরত এক ফিল্ড কমান্ডারকে বরখাস্ত করা হবে।
এই যুদ্ধ শুরু হয় হামাসের নেতৃত্বে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ওপর হামলার মাধ্যমে। এতে ১,২১৮ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক — জানায় এএফপির হিসাব, যা ইসরাইলি সরকারি তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি।
ওই হামলার সময় ২৫১ জনকে গাজায় জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়। এখনো ৫৮ জন জিম্মি অবস্থায় রয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সেনাবাহিনী জানিয়েছে।
ইসরাইলি কর্মকর্তারা বলছেন, অব্যাহত এই সামরিক অভিযান জিম্মিদের মুক্তির জন্য ‘প্রয়োজনীয়’।
তবে জিম্মিদের অনেক পরিবারের সদস্য এবং হাজারো বিক্ষোভকারী এর বিরোধিতা করে বলছেন, অভিযান না চালিয়ে একটি চুক্তির মাধ্যমে মুক্তির চেষ্টা করা উচিত ছিল।