ঢাকা, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : পোপ ফ্রান্সিসের উত্তরসূরির সামনে থাকবে এক দীর্ঘ চ্যালেঞ্জের তালিকা—ক্যাথলিক চার্চে নারী ও এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের অবস্থান থেকে শুরু করে সংঘাতপীড়িত বিশ্বে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ পর্যন্ত।
ঐক্য -
এক বিভক্ত চার্চকে একতাবদ্ধ করা হবে নতুন পোপের অন্যতম প্রধান কাজ।
১২ বছরের দীর্ঘ পোপত্বকালে ফ্রান্সিস তার তুলনামূলক উদার নীতির কারণে প্রায়ই সমালোচনার মুখে পড়েন, যেমন অভিবাসীদের স্বাগত জানানো এবং লাতিন ভাষার মেস ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপ।
বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও আফ্রিকায় রক্ষণশীলরা ক্ষুব্ধ হন যখন তিনি সাধারণ বিশ্বাসী ও নারীদের চার্চের নেতৃত্বে বড় ভূমিকা দিতে চেয়েছেন এবং সমকামী দম্পতিদের আশীর্বাদ প্রদানের দ্বার উন্মুক্ত করেন।
তার উত্তরসূরির জন্য রক্ষণশীল ও উদারপন্থী দুই প্রান্তের মধ্যে শান্তি আনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
লুক্সেমবার্গের কার্ডিনাল জঁ-ক্লদ হোলেরিশ সাংবাদিকদের বলেন, ‘একজন পোপ সবসময় মানুষকে একত্রিত করেন।’
‘চার্চে ঐক্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। তবে অতীতে ফিরে গিয়ে চার্চকে ঐক্যবদ্ধ করা যায় না।’
যৌন নির্যাতন -
যদিও ফ্রান্সিস পাদ্রীদের যৌন নির্যাতন মোকাবিলায় বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, ভুক্তভোগীদের সংগঠনগুলো জানিয়েছেন, তারা তার পদক্ষেপে হতাশ হয়েছেন এবং তাকে যথেষ্ট কিছু না করার অভিযোগ করেছেন।
এই ইস্যু চার্চের জন্য এখনও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে, আর কেলেঙ্কারিগুলো কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
এটি সহজে সমাধানযোগ্যও নয়। অনেক আফ্রিকান ও এশীয় দেশে বিষয়টি এখনো নিষিদ্ধ বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে। এমনকি ইউরোপেও ইতালি এখনো নির্যাতনের অভিযোগে কোনো স্বাধীন তদন্ত শুরু করেনি।
কূটনীতি -
বিশ্বের ১৪০ কোটি ক্যাথলিকের নেতা হিসেবে পোপ ভ্যাটিকান রাষ্ট্রেরও প্রধান।
বিশ্বব্যাপী ইউক্রেন, গাজা ও সুদানের মতো অসংখ্য সংঘাতের প্রেক্ষাপটে পোপের কণ্ঠস্বরের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে।
পোপের মন্তব্যের ফলে বাস্তব পরিণতি ঘটে।
ফ্রান্সিস কখনো কখনো ইসরাইল, ইউক্রেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রকে তার মন্তব্যের মাধ্যমে ক্ষুব্ধ করেছেন।
জনপ্রিয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ এবং জলবায়ু সংকটও পোপের মনোযোগ দাবি করবে, অভিবাসন ইস্যুর মতো।
এছাড়া চীনের সঙ্গে সংবেদনশীল সম্পর্কও রয়েছে, বিশেষ করে দেশটিতে ক্যাথলিক বিশপ নিয়োগের কাঁটাবর্তা প্রশ্নে।
নারীদের অবস্থান -
চার্চে নারীদের ভূমিকা নিয়েও বিতর্ক চলতেই থাকবে। ফ্রান্সিস নারীকে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন, যেমন জানুয়ারিতে তিনি কুরিয়ার একটি বিভাগের প্রথম নারী প্রধান নিয়োগ করেন।
তবে সর্বশেষ বৈশ্বিক সম্মেলনে নারীকে ডিকন (সহকারী যাজক) করার আশা ভঙ্গ হয়।
রোমের পন্টিফিক্যাল গ্রেগরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোহিত ও অধ্যাপক রবের্তো রেগোলি এএফপিকে বলেন, ‘নারীর ভূমিকা অনেকাংশে নির্ভর করে চার্চের সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের ওপর, এবং মহাদেশভেদে বা দেশভেদে এখানে বড় পার্থক্য রয়েছে।’
‘অতএব, এটি মূলত একটি সাংস্কৃতিক প্রশ্ন, ধর্মতাত্ত্বিক প্রশ্ন নয়।’
পাদ্রীদের সংকট -
নতুন পোপ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ক্যাথলিক সম্প্রদায়কে নেতৃত্ব দেবেন।
বিশ্বের দক্ষিণ গোলার্ধে ক্যাথলিকদের সংখ্যা বাড়ছে, তবে ইউরোপে এটি কমছে।
আর পুরো বিশ্বে ধর্ম প্রচারকারী পাদ্রীদের সংখ্যা কমছে—যদিও ধীরগতিতে।
২০২২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে পাদ্রীদের সংখ্যা ০.২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪,০৬,৯৯৬-এ, যদিও আফ্রিকা ও এশিয়ায় কিছু বৃদ্ধি হয়েছে।
এলাকাভেদে চার্চে উপস্থিতির চিত্র ভিন্ন হলেও আফ্রিকায় বিশেষ করে ইভানজেলিকাল চার্চগুলোর উত্থান তীব্র প্রতিযোগিতা তৈরি করছে।
শৈলী -
ফ্রান্সিস প্রচলিত নিয়ম ভেঙে দিয়েছিলেন, বিলাসিতা পরিহার করে সাধারণ মানুষের মাঝে সবচেয়ে বেশি আনন্দ অনুভব করতেন।
তিনি পোপীয় বাসভবনে না থেকে ভ্যাটিকানের একটি অতিথি নিবাসে থাকতেন।
নিজেই ফোন করতেন, চশমার দোকান ঘুরে আসতেন, নিজ হাতে চিঠির উত্তর লিখতেন এবং তীর্থযাত্রীদের দেওয়া দক্ষিণ আমেরিকার ঐতিহ্যবাহী মেট চা গ্রহণ করতেন।
তবে তার ব্যবস্থাপনায় কর্তৃত্ববাদী মনোভাব এবং প্রকাশ্যে স্পষ্টভাষী হয়ে ওঠার জন্যও সমালোচনা হয়েছিল, যা কখনো কখনো সহকারীদের অস্বস্তিতে ফেলত।
যদিও নতুন পোপও জনগণের পোপ হওয়ার চেষ্টা করবেন, ভ্যাটিকান সম্ভবত এমন এক নেতাকে পছন্দ করবে, যিনি আনুষ্ঠানিক অবস্থানের সঙ্গে আরও ভালোভাবে সঙ্গতি রাখেন।