ঢাকা, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : ইরানের বৃহত্তম বাণিজ্যিক বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১৮ জন নিহত এবং ৮০০ জন আহত হয়েছেন। বিস্ফোরণের একদিন পর আজ রোববারও আগুন জ্বলছিল। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে আজ তেহরান থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
শনিবার দক্ষিণ ইরানের হরমুজগান প্রদেশের কাছে অবস্থিত শহীদ রাজাঈ বন্দরে এ ঘটনা ঘটে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বিবৃতিতে বন্দরের কাস্টমস অফিস জানিয়েছে, বিপজ্জনক ও রাসায়নিক পদার্থ সংরক্ষণের ডিপোতে আগুন লাগার ফলে সম্ভবত বিস্ফোরণটি ঘটেছে।
রাষ্ট্রীয় টিভিতে সম্প্রচারিত ফুটেজে দেখা যায়, বন্দরের এলাকা থেকে ঘন কালো ধোঁয়া উড়ছে এবং সেখানে জ্বলতে থাকা বহু কনটেইনারের আগুন নেভাতে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কোরের সাথে সম্পর্কযুক্ত একজন ব্যক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেছেন, বিস্ফোরণে সোডিয়াম পারক্লোরেট ছিল। যা ক্ষেপণাস্ত্রের কঠিন জ্বালানির একটি প্রধান উপাদান।
রোববার ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভিতে ১৮ জন নিহত এবং ৮শ’ জন আহতের হালনাগাদ সংখ্যা জানানো হয়েছে। ঘটনাস্থলের লাইভ ফুটেজে এখনও ঘন কালো ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারক সিসিটিভি তাদের বন্দর আব্বাস কনস্যুলেটের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, তিনজন চীনা নাগরিক ‘সামান্য আহত’ হয়েছেন।
ফার্স বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, বিস্ফোরণের শক্তি এতটাই তীব্র ছিল যে ৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও তা অনুভূত হয়েছে। তাসনিম বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, বিস্ফোরণে বন্দরের বেশির ভাগ ভবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আইআরএনএ-এর ছবিতে দেখা গেছে, তেহরানের ১ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দক্ষিণে শহীদ রাজাঈতে বিস্ফোরণের পর ধ্বংসাবশেষে ঢাকা একটি প্রশস্ত বুলেভার্ড ধরে উদ্ধারকারী এবং বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা হেঁটে যাচ্ছেন।
স্থানীয় জরুরি পরিষেবার বরাত দিয়ে রাষ্ট্রীয় টিভি জানিয়েছে, ‘শত শত লোককে নিকটবর্তী চিকিৎসা কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করা হয়েছে’। প্রাদেশিক রক্ত সঞ্চালন কেন্দ্র অনুদানের আহ্বান জানিয়েছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান বিস্ফোরণের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। তিনি ‘পরিস্থিতি ও কারণ খতিয়ে দেখতে’ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসকান্দার মোমেনিকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছেন।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, এলাকাজুড়ে ধোঁয়া এবং বায়ু দূষণ ছড়িয়ে পড়ার কারণে, হরমুজগান প্রদেশের নিকটবর্তী বন্দর আব্বাসের সমস্ত স্কুল এবং অফিস রোববার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে কর্তৃপক্ষ জরুরি সেবায় মনোনিবেশ করতে পারেন।
প্রদেশের সংকট ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রধান মেহরদাদ হাসানজাদেহ রাষ্ট্রীয় টিভিকে বলেছেন, ‘এই বিস্ফোরণের কারণ ছিল শহীদ রাজাঈ বন্দর ঘাট এলাকায় সংরক্ষিত বেশ কয়েকটি কন্টেইনারের বিস্ফোরণ’।
তাসনিম সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ‘বিস্ফোরণটি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে বেশিরভাগ বন্দর ভবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেল।’
শনিবার ইরানে কর্ম সপ্তাহের শুরু, অর্থাৎ বন্দরটি কর্মীদের ভিড়ে ব্যস্ত ছিল।
সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরব বিস্ফোরণের ঘটনায় ‘ইরানের সাথে সংহতি’ প্রকাশ করেছে এবং সমবেদনা জানিয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ন্যাশনাল ইরানিয়ান অয়েল প্রোডাক্টস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিস্ফোরণের সঙ্গে কোনো পরিশোধন কেন্দ্র, জ্বালানি ট্যাংক, বিতরণকেন্দ্র বা তেলের পাইপলাইনের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা অরো জানিয়েছে, বন্দর আব্বাসের তেল স্থাপনাগুলো স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
এ ধরনের বিস্ফোরণ ইরানে বিরল ঘটনা। সেপ্টেম্বরে ইরানের পূর্বাঞ্চলের তাবাসে একটি কয়লাখনিতে গ্যাস লিকেজের কারণে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় ৫০ জনের বেশি নিহত হয়েছিলেন। শনিবারের বিস্ফোরণটি এমন এক সময়েও ঘটে যখন ইরানি ও মার্কিন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনার জন্য ওমানে মিলিত হয়েছিল। উভয় পক্ষই অগ্রগতির কথা জানিয়েছে।