ঢাকা, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার দুই দিন আগে শনিবার কানাডার নেতারা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এলাকাগুলোতে প্রচারণা চালান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি ভোটারদের ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারবেন বলে আশ্বাস দেন।
মিসিসাউগা থেকে এএফপি জানায়, কার্নির লিবারেল পার্টির জয় কানাডার রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে নাটকীয় পরিবর্তনের একটি হিসেবে চিহ্নিত হবে।
৬ জানুয়ারি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তার পদত্যাগ পরিকল্পনার ঘোষণা করেন।
ওই দিন তার লিবারেল পার্টির প্রার্থীরা বেশিরভাগ জরিপে কনজারভেটিভদের থেকে ২০ পয়েন্টেরও বেশি পিছিয়ে ছিল এবং টোরি নেতা পিয়েরে পোইলিভর কানাডার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত বলে মনে হয়েছিল।
তবে তার পরের সপ্তাহগুলোয়, ট্রাম্প কঠোর শুল্ক নীতির একটি ধারা চালু করেন এবং কানাডাকে বারবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেন। বিক্ষুব্ধ কানাডিয়ানরা তখন থেকে ক্রীড়া ইভেন্টগুলোয় আমেরিকান সঙ্গীত বাজানোর সময় দুয়োধ্বণি দিচ্ছে। এছাড়া কানাডিয়ানরা যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করে।
১৪ মার্চ কার্নি ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত হয়ে ট্রাম্পের হুমকির বিরুদ্ধে তার স্পষ্ট বার্তা তুলে ধরেন।
৬০ বছর বয়সী এই নেতা কখনও নির্বাচিত পদে অধিষ্ঠিত হননি। তবে তিনি কানাডা ও ব্রিটেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেতৃত্ব দেন। তিনি যুক্তি দেখান যে, তার বিশ্বব্যাপী আর্থিক অভিজ্ঞতা তাকে ট্রাম্পের অস্থির বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে কানাডাকে রক্ষা করার জন্য আদর্শ প্রার্থী করে তুলেছে।
প্রধানমন্ত্রী প্রচারণার দ্বিতীয় থেকে শেষ দিন গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ অন্টারিওতে কাটিয়েছেন।
তিনি প্রচারণার মাধ্যমে টরন্টোর কাছাকাছি যেসব সম্প্রদায় পূর্বে লিবারেল ও কনজারভেটিভের মধ্যে দোদুল্যমানতার অবসান ঘটান।
কার্নি টরন্টোর ঠিক পশ্চিমে অবস্থিত মিসিসাগা নগরীর এক সমাবেশে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ আক্ষরিক অর্থেই বিশ্ব অর্থনীতিকে ভেঙে দিয়েছে। তিনি কানাডার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘কানাডিয়ানরা সেই বিশ্বাসঘাতকতার ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছে। কিন্তু আমাদের কখনই এর অভিজ্ঞতা ভুলে যাওয়া উচিত নয়।’
কার্নি বলেন, ‘আমাদের বিশৃঙ্খলার প্রয়োজন নেই, আমাদের শান্ত থাকা দরকার। আমাদের একজন পরিপক্ক মানুষ প্রয়োজন।’
উইন্ডসর-এ একটি সমাবেশের মাধ্যমে তিনি প্রচারণার সমাপ্তি টানবেন। কানাডার স্বয়ংক্রিয় শিল্প কারখানার কেন্দ্রস্থল উইন্ডসর ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ট্রাম্পের হুমকি ও ট্রুডো-কার্নে রদবদল ৪৫ বছর বয়সী পোইলিভরেকে ভিন্ন এক পরিস্থিতিতে ফেলেছে। পোইলিভরে দুই দশক ধরে পার্লামেন্টে রয়েছেন। তবে রক্ষণশীল নেতা ট্রুডো ক্ষমতায় থাকাকালীন লিবারেলদের প্রতি ক্ষোভের কারণ হয়ে ওঠা বিষয়গুলো, বিশেষ করে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ রাখার চেষ্টা করেছেন।
শনিবার অন্টারিওতে সন্ধ্যায় এক সমাবেশের আগে তিনি পশ্চিম উপকূলীয় প্রদেশ ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় প্রচারণা চালান।
কার্নি ট্রুডো যুগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন দাবি করে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ডেল্টায় সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা আরো চার বছর এই পরিস্থিতি সামলাতে পারবেন না।’
পোইলিভরে ট্রাম্পেরও সমালোচনা করেছেন। তবে লিবারেলদের অধীনে দুর্বল অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতাকে কানাডাকে মার্কিন সুরক্ষাবাদের ঝুঁকিতে ফেলার জন্য দায়ী করেন।
জনমত জরিপে লিবারেল সরকার গঠনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তবে শেষ দিনগুলোয় প্রতিযোগিতা আরো তীব্র হয়ে ওঠে।
সরকারি সম্প্রচারক সিবিসি’র জরিপ সমষ্টি বিভিন্ন পয়েন্টে লিবারেলদের সাত থেকে আট পয়েন্টের এগিয়ে রাখে। তবে শনিবার তারা লিবারেলদের সমর্থন ৪২.৫ শতাংশে রেখেছে, যেখানে টোরিদের সমর্থন ৩৮.৭ শতাংশ।
লিবারেলদের সাহায্য করতে পারে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বামপন্থী নিউ ডেমোক্র্যাট এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী ব্লক কুইবেকোয়াদের সংখ্যা হ্রাস।
বিগত নির্বাচনে, এই দলগুলোর প্রতি শক্তিশালী সমর্থন ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, অন্টারিও ও কুইবেকের গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশগুলোতে লিবারেলদের আসন সংখ্যা হ্রাস করে।
কানাডার ২৮.৯ মিলিয়ন যোগ্য ভোটারের মধ্যে রেকর্ড ৭.৩ মিলিয়ন ইস্টার সপ্তাহান্তে আগাম ভোট দিয়েছেন, যা ২০২১ সালের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি।
সোমবার ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ফলাফল জানা যাবে।