যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব দাবি পূরণে ব্যর্থ: হামাস

বাসস
প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৫, ১৮:৫০
ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ৩০ মে, ২০২৫ (বাসস): হোয়াইট হাউজ বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ইসরাইল হামাসকে দেওয়া গাজা যুদ্ধবিরতির একটি নতুন প্রস্তাবে ‘অনুমোদন দিয়েছে’; তবে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস বলেছে, এই প্রস্তাব তাদের দাবিগুলো পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।

১৯ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধের অবসানে চলমান আলোচনা এখনও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। এরমধ্যে গত মার্চে স্বল্প সময়ের যুদ্ধবিরতির পর ইসরাইল আবার গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে।

হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও দূত স্টিভ উইটকফ ‘হামাসের কাছে একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাঠিয়েছেন, যেটি ইসরাইল অনুমোদন করেছে।’

হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ‘ইসরাইল এই প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে, এরপর সেটি হামাসকে পাঠানো হয়েছে।’ তিনি জানান, ‘হামাসের সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে।’

তবে ইসরাইল আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রস্তাবে তাদের সম্মতির কথা প্রকাশ করেনি।

গাজা সিটি থেকে এএফপি জানায়. হামাসের একটি সূত্র গত সপ্তাহে বলেছিল, তারা যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বাসেম নাঈম বলেন, নতুন সংস্করণটি ‘হত্যা ও দুর্ভিক্ষের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করেৃ এবং আমাদের জনগণের কোনো দাবি পূরণ করে না, বিশেষ করে যুদ্ধ বন্ধের প্রশ্নে।’

তবে তিনি বলেন, ‘হামাস নেতৃত্ব এই প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়া জাতীয় দায়িত্ববোধের সঙ্গে বিবেচনা করছে।’

হামাসের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, নতুন প্রস্তাবটিকে ‘পূর্ববর্তী প্রস্তাব থেকে একধাপ পিছিয়ে যাওয়া’ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে ‘স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার বিষয়ে মার্কিন প্রতিশ্রুতি’ ছিল।

আলোচনার সঙ্গে যুক্ত দুইটি সূত্র জানিয়েছে, নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী প্রথম সপ্তাহে ১০ জন জীবিত জিম্মি ও ৯টি মরদেহ মুক্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে এবং যুদ্ধবিরতি ৬০ দিনের জন্য কার্যকর থাকবে, যা ৭০ দিন পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।

‘দুর্ভিক্ষের কৌশল’

দুই মাসেরও বেশি সময়ের ইসরাইলি অবরোধের পর সীমিত পরিসরে সহায়তা গাজায় প্রবেশ করতে শুরু করলেও মানবিক পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ।

খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি পাঁচজনের একজনের জন্য দুর্ভিক্ষ ঘনিয়ে আসছে।

ইসরাইল জানায়, তারা হামাস ধ্বংসে নতুন করে সামরিক অভিযান শুরু করেছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় এই যুদ্ধ শুরু হয়।

গাজার সিভিল ডিফেন্স বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৫৪ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ২৩ জন আল-বুরেইজ এলাকায় একটি বাড়িতে হামলায় এবং আরও দুইজন মার্কিন-সমর্থিত একটি ত্রাণকেন্দ্রের কাছে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

এই কেন্দ্রটি ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)’ পরিচালিত নতুন একটি ত্রাণ বণ্টন ব্যবস্থা, যা হামাসকে এড়িয়ে ত্রাণ পৌঁছাতে তৈরি করা হয়েছে। জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই ব্যবস্থার সমালোচনা করেছে।

বৃহস্পতিবার কেন্দ্রটিতে আসা গাজার বাসিন্দা সোবহি আরিফ বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যা হচ্ছে তা অপমানজনক। আমরা শুধু এক বস্তা আটা নিতে গিয়ে জীবন ঝুঁকিতে ফেলছি, যাতে আমাদের সন্তানদের খাওয়াতে পারি।’

ইসরাইলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ত্রাণকেন্দ্রের আশপাশে গুলির বিষয়ে অবগত নয়। তবে আল-বুরেইজে তারা একটি ‘হামাস সেল’ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করে এবং বেসামরিক হতাহতের খবর পর্যালোচনা করছে।

‘জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়া’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কায়া ক্যালাসের সঙ্গে এক ফোনালাপে জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইমান সাফাদি অভিযোগ করেন, ইসরাইল ‘পদ্ধতিগত দুর্ভিক্ষ কৌশল’ প্রয়োগ করছে, যা ‘সব ধরনের নৈতিক ও আইনি সীমা অতিক্রম করেছে’।

দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা এবং জিএইচএফ-এর কার্যক্রম নিয়ে তীব্র সমালোচনার প্রেক্ষাপটে সহায়তা ইস্যুটি সামনে চলে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটি গাজায় দীর্ঘদিন ধরে চালু থাকা জাতিসংঘ-নেতৃত্বাধীন ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে কাজ করছে।

জাতিসংঘে ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেন, ‘কেরেম শালোম’ সীমান্ত দিয়ে ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকছে, কিন্তু জাতিসংঘ ‘জিএইচএফ-এর কাজ ব্যাহত করতে চাইছে।’

জাতিসংঘ জানায়, সীমিত যে পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে, সেটি বণ্টনের জন্য তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।

বৃহস্পতিবার গাজার কেন্দ্রীয় নেটজারিম করিডোরে জিএইচএফ-এর নতুন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে যাওয়া লোকজন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির বর্ণনা দেন।

২৯ বছর বয়সী মোহাম্মদ আবদেল আল এএফপিকে বলেন, ‘কিছু মানুষ হৈচৈ শুরু করে এবং ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ঢুকে পড়ে, কারণ মানুষ খুবই ক্ষুধার্ত।’

‘আমি-সহ সবাই একটি ত্রাণের বাক্স পাওয়ার জন্য দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু কিছুই পাইনি। সেখানকার বাহিনী আমাদের দিকে গুলি ও গ্রেনেড ছুড়ে মারে, ফলে সবাই পিছু হটে যায়।’

আল-বুরেইজের ১৭ বছর বয়সী ইউসুফ বলেন, ‘গুলির ভয় থাকা সত্ত্বেও ক্ষুধা ভয়কে জয় করে।’

জিএইচএফ-এর পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের কর্মীরা ‘চরম উত্তেজনাপূর্ণ ও সম্ভাব্য বিপজ্জনক জনসমাবেশের’ মুখোমুখি হয়েছিল যারা ছত্রভঙ্গ হতে অস্বীকৃতি জানায়।

‘নাগরিক ও কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অ-ঘাতক প্রতিরোধব্যবস্থা, যেমন ধোঁয়া ও মাটির দিকে সতর্কতামূলক গুলি, ব্যবহার করা হয়েছে।’

এদিকে গাজার চিকিৎসাকেন্দ্রগুলো ক্রমাগত চাপ ও আক্রমণের মধ্যে রয়েছে।

আল-আওদা হাসপাতাল জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনী ‘রোগী ও চিকিৎসাকর্মীদের জোরপূর্বক সরিয়ে নিচ্ছে’। এটি ছিল ‘উত্তর গাজায় এখনও চালু থাকা একমাত্র হাসপাতাল।’

২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের ইসরাইলে হামলায় এই যুদ্ধ শুরু হয়। তখন ১,২১৮ জন নিহত হন। এএফপির হিসাব অনুযায়ী যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।

ওই ঘটনায় ২৫১ জন জিম্মি করা হয়েছিল, যাদের মধ্যে এখনো ৫৭ জন গাজায় রয়েছেন। ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর মতে, এদের মধ্যে ৩৪ জন মারা গেছেন।

হামাস-শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ১৮ মার্চ ইসরাইল যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফের আক্রমণ শুরু করার পর থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৩,৯৮৬ জন নিহত হয়েছেন। পুরো যুদ্ধের সময়কালে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪,২৪৯ জনে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক।

বৃহস্পতিবার ইসরাইলি বাহিনী জানিয়েছে, গাজার উত্তরে ‘প্রকৌশল কাজ করা একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী’ নিহত হয়েছেন।

এছাড়া বৃহস্পতিবার ইয়েমেন থেকে হুতি বিদ্রোহীদের ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইল প্রতিহত করেছে বলে জানায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
দুর্নীতি মামলায় যবিপ্রবি’র সাবেক উপাচার্য ড. আব্দুস সাত্তার কারাগারে
টাকা পাচারের অভিযোগে স্বামীসহ সাঈদা মুনার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু
কাউনিয়ায় অর্থাভাবে সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ : দুর্ভোগে পাঁচ গ্রামের মানুষ
ইসরাইলি ‘আগ্রাসন’ বন্ধে ইউরোপীয় শক্তির প্রতি ইরানের আহ্বান
শ্রমিকদের জন্য আরও ৪ রুটে বিশেষ ভাড়া চালু করল বিমান
চট্টগ্রামের ড্রোন নির্মাতা আশির উদ্দিনের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারেক রহমান
দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যাত্রী কল্যাণ সমিতির ১২ দফা সুপারিশ
নওগাঁয় জমে উঠেছে আমের হাট : সিন্ডিকেটে অসন্তোষ চাষীদের
জি৭ সম্মেলনে যোগ দিতে কানাডায় ট্রাম্প
প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধে বাগেরহাট বিএনপি’র বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি 
১০