শিরোনাম
ঢাকা, ৩০ মে, ২০২৫ (বাসস) : ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ‘নতুন বিশেষ সম্পর্ক’ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশ্বে ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক উত্তেজনা এবং যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক শৃঙ্খলা পুনর্গঠনের লক্ষ্যে তিনি ‘মাঝারি পরিসরের দেশগুলোর’ নতুন জোট গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
সিঙ্গাপুর থেকে এএফপি জানায়, শুক্রবার সিঙ্গাপুরে শাংরি-লা ডায়ালগ নিরাপত্তা সম্মেলনে মূল বক্তা হিসেবে দেওয়া ভাষণে মাখোঁ বলেন, ‘অবশ্যই অননুরাগ বা নিরপেক্ষতার সময় ফুরিয়েছে। এখন যৌথ কর্মকাণ্ডের সময়, যেসব দেশ একসঙ্গে কাজ করতে পারে, তাদের সেই সামর্থ্য অর্জন করতে হবে।’
ইউরোপের দৃষ্টি এশিয়ায়
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরে থাকা মাখোঁর এই বক্তব্য ফ্রান্স ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৃহত্তর কৌশলেরই অংশ, যেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য নতুন শুল্কনীতির কারণে এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক মজবুত করার চেষ্টা চলছে।
ম্যাখোঁ বলেন, “ফ্রান্স যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু ও মিত্র, আবার চীনের সঙ্গেও কখনো সহযোগিতা, কখনো প্রতিযোগিতা করে।” তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ইউরোপ ও এশিয়ার যৌথ স্বার্থ রক্ষায় তিনি দুই মহাদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠতর সম্পর্ক গড়ার তাগিদ দেন।
চীনকে উত্তর কোরিয়ার রাশ টানার বার্তা
রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার সম্পৃক্ততা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে চীনকে পরোক্ষ বার্তা দেন ম্যাখোঁ। তিনি বলেন, “যদি চীন সত্যিই চায় না যে ন্যাটো এশিয়ায় সক্রিয় হোক, তবে তাদের উচিত উত্তর কোরিয়াকে ইউরোপীয় অঞ্চলে জড়িয়ে পড়া থেকে বিরত রাখা।’
ম্যাখোঁর এই বক্তব্য এমন সময়ে এসেছে যখন ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে রাশিয়াকে সামরিক সহায়তার সম্ভাবনা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে।
চীন-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা ও ন্যাটোর ভূমিকা
শাংগ্রি-লা ডায়ালগ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথও, যার জন্য এটাই প্রথমবার। চীন-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনার মাঝে আয়োজিত এই সম্মেলনে অন্যতম আলোচ্য বিষয় চীনের সামরিক আগ্রাসন, রাশিয়ার যুদ্ধ এবং এশিয়ার বিভিন্ন সংঘর্ষপ্রবণ অঞ্চল।
চীনের পক্ষে এবারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নয়, বরং নিম্নস্তরের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নিচ্ছে। দলটি নেতৃত্ব দিচ্ছেন পিপলস লিবারেশন আর্মির ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল হু গ্যাংফেং।
চীনা প্রতিনিধি দল শনিবার ‘সমবায়ী সামুদ্রিক নিরাপত্তা’ বিষয়ক এক আলোচনায় অংশ নেবে, যেখানে উপস্থিত থাকবেন জাপান, ভিয়েতনাম, চিলি ও যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিরাও। চীনের বিশ্বব্যাপী আগ্রাসী মৎস্যনীতি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইন্দো-প্যাসিফিক ছাড়িয়ে লাতিন আমেরিকা ও আর্কটিক অঞ্চলেও উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।
‘সংঘাত চাই না, কিন্তু প্রস্তুত’
সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে হেগসেথ বলেন, ‘আমরা কারো সঙ্গেই সংঘাতে যেতে চাই না, এমনকি চীনের সঙ্গেও না। তবে নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় আমরা দৃঢ় থাকব, আর এই সফরের উদ্দেশ্য সেটাই বোঝানো।’
মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে চীনের বিরুদ্ধে তিন অঙ্কের শুল্ক আরোপের হুমকি, তাইওয়ানের প্রতিরক্ষার প্রতিশ্রুতি ও ‘৩২ শতাংশ আমেরিকান শুল্ক’ আরোপের ইঙ্গিত- এসবই এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অস্থিরতার অনুঘটক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাইওয়ানকে চীনের অংশ হিসেবে দেখেন এবং বলপ্রয়োগের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেননি। এরই মাঝে চীন প্রতিদিনই তাইওয়ান সীমান্তে সামরিক জাহাজ, বিমান ও গোয়েন্দা বেলুন পাঠিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে একটি চীনা বিমানবাহী রণতরী দ্বীপটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পানিসীমায় অবস্থান করছে।
