ঢাকা, ১ জুন, ২০২৫ (বাসস) : অধিকৃত পশ্চিম তীর সফরের পরিকল্পনাকারী বেশ কয়েকটি আরব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা তাদের সফর আটকানোর জন্য শনিবার ইসরাইলি সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন।
জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সাথে দেখা করার জন্য রোববার রামাল্লায় প্রতিনিধিদলের সফর করার কথা ছিল। কিন্তু শনিবার ইসরাইল এই সফরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় ইসরাইলি সিদ্ধান্তের’ তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন আরব মন্ত্রীরা।
জর্ডান থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
আরব লীগের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে,আরব লীগের মহাসচিবের সাথে সৌদি আরব, মিশর, জর্ডান এবং বাহরাইনের মন্ত্রীদের অংশগ্রহণের কথা ছিল।
শুক্রবার রাতে ইসরাইল ঘোষণা করেছিল, তারা সহযোগিতা করবে না বরং কার্যকরভাবে সফর আটকে দিয়েছে। কারণ, ইসরাইল এই অঞ্চলের সীমানা এবং আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণ করে।
ইসরায়েলি একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রচারণা নিয়ে আলোচনার জন্য আব্বাস রামাল্লায় আরব দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি উস্কানিমূলক বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন।’
‘এই ধরনের রাষ্ট্র নিঃসন্দেহে ইসরাইল ভূখণ্ডের কেন্দ্রস্থলে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত হবে। ইসরাইল তার এবং তার নিরাপত্তার ক্ষতি করার লক্ষ্যে এই ধরনের পদক্ষেপে সহযোগিতা করবে না।’
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে এবং ইসরাইলের সিদ্ধান্তকে ‘একটি দখলদার শক্তি হিসেবে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে তার বাধ্যবাধকতার স্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছে।
যদি সফরটি এগিয়ে যেত, তাহলে প্রতিনিধিদলের প্রধান প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান পশ্চিম তীর পরিদর্শনকারী প্রথম সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতেন।
ইসরাইল এই সপ্তাহে পশ্চিম তীরে ২২টি নতুন ইহুদি বসতি স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে অবৈধ এবং ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে স্থায়ী শান্তির পথে অন্যতম প্রধান বাধা।
শুক্রবার নতুন বসতি স্থাপনের স্থানগুলোর একটি পরিদর্শনের সময় প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে একটি ‘ইহুদি ইসরাইলি রাষ্ট্র’ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
‘কাগজে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে’ এমন বিদেশি দেশগুলোকে লক্ষ্য করে তিনি আরো বলেন, ‘কাগজে স্বীকৃতি দেয়া কাগজটি ইতিহাসের আবর্জনার ঝুড়িতে ফেলে দেওয়া হবে এবং ইসরাইল রাষ্ট্র সমৃদ্ধ হবে।’
জুন মাসে, সৌদি আরব এবং ফ্রান্স জাতিসংঘের সদর দপ্তরে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সহ-সভাপতিত্ব করবে। এই সম্মেলনের লক্ষ্য ইসরাইলি-ফিলিস্তিনি সংঘাতের দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান পুনরুজ্জীবিত করা।
গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে সৌদি আরব ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেওয়ার কাছাকাছি চলে গিয়েছিল বলে জানা গেছে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাম্প্রতিক রিয়াদ সফরের সময় দেশগুলোর মধ্যে স্বাভাবিকীকরণকে ‘আমার তীব্র আশা এবং ইচ্ছা’ বলে অভিহিত করেছেন।
কিন্তু কার্যত শাসক ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান বারবার বলেছেন, সৌদি আরব একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ছাড়া ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবে না।
ইউরেশিয়া গ্রুপের মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফিরাস মাকসাদ বলেছেন, ইসরাইলের এই সফর আটকে দেয়া ইঙ্গিত দেয় যে, ‘সৌদি ও ইসরাইল স্বাভাবিকীকরণ থেকে কূটনৈতিক সংঘাতের দিকে কতটা এগিয়ে গেছে।’
তিনি আরো বলেন, পরিকল্পিত এই সফর ‘এই বিষয়টিই স্পষ্ট করে যে সৌদি আরব ইসরাইলের সাথে শর্তসাপেক্ষে স্বাভাবিকীকরণের মাধ্যমে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের দিকে একটি বিশ্বাসযোগ্য পথ তৈরি করা থেকে কতটা দূরে সরে গেছে, যেখানে ফিলিস্তিনিদের আকাঙ্ক্ষার সমর্থনে একটি আন্তর্জাতিক জোটের মাধ্যমে এমন একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হবে।