ঢাকা, ২২ জুন, ২০২৫ (বাসস) : ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান শনিবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, ইসরাইলের নয়দিনের বোমা হামলা চলতে থাকলে এর জবাবে ‘আরও ভয়াবহ’ প্রতিশোধ নেওয়া হবে।
তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, ইসলামিক প্রজাতন্ত্র কোনো অবস্থাতেই তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করবে না।
এদিকে শনিবার ইসরাইল জানিয়েছে, তাদের অভিযানে আরও তিন ইরানি কমান্ডার নিহত হয়েছে। খবর এএফপি’র।
ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সারের দাবি, তেহরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির যে কথিত অগ্রগতি ছিল, তা দুই বছর পিছিয়ে গেছে।
জার্মান পত্রিকা বিল্ডকে সার বলেছেন, ‘আমরা আমাদের সাধ্যমতো সবকিছু করব যাতে এই হুমকি দূর হয়।’
তিনি আরও জানান, ইসরাইল তাদের হামলা চালিয়ে যাবে।
১৩ জুন ইসরাইল ইরানের বিরুদ্ধে বিমান অভিযান শুরু করার পর থেকে উভয় পক্ষই একে অপরের ওপর বিধ্বংসী হামলা চালাচ্ছে। ইসরাইলের দাবি, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।
শনিবার ইসরাইল জানিয়েছে, তারা দ্বিতীয়বারের মতো ইরানের ইস্পাহান পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে।
জাতিসংঘের পারমাণবিক নজরদারি সংস্থা জানিয়েছে, একটি সেন্ট্রিফিউজ তৈরির কারখানা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পরে শনিবার ইরানের মেহের বার্তা সংস্থা জানায়, ইসরাইল শিরাজ শহরের দক্ষিণে হামলা চালিয়েছে, যেখানে সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।
রোববার ভোরে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড জানিয়েছে, তারা ইসরাইলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অনেক ‘আত্মঘাতী ড্রোন’ হামলা চালিয়েছে।
শনিবার পেজেশকিয়ান বলেছেন, ‘বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালানো তাদের অধিকার, এটা ‘হুমকি বা যুদ্ধের মাধ্যমে কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে এক টেলিফোন আলাপে পেজেশকিয়ান বলেন, ইরান ‘শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে আস্থা তৈরি করতে আলোচনা ও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’
তবে, ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা ইরনা’র তথ্য অনুযায়ী, তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কোনো অবস্থাতেই পারমাণবিক কার্যক্রম শূন্যে নামিয়ে আনতে রাজি নই।’
ইসরাইলি হামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জায়নবাদী শাসনের ক্রমাগত আগ্রাসনের জবাব আরও ভয়াবহ হবে।’
ইরানের সশস্ত্র বাহিনী হুমকি দিয়েছে, যে তারা ‘যেকোনো দেশ থেকে’ ইসরাইলের কাছে পাঠানো সামরিক সাহায্যের চালানগুলোতেও আঘাত করবে।
সংঘর্ষ নিয়ে আলোচনা করতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি শনিবার ইস্তাম্বুলে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)’র বৈঠকে অংশ নিতে গিয়েছিলেন।
শুক্রবার বৃটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির শীর্ষ কূটনীতিকরা জেনেভায় আরাঘচির সঙ্গে বৈঠক করেন এবং যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক আলোচনা আবার শুরু করার জন্য তাকে অনুরোধ করেন।
তবে আরাঘচি শনিবার বলেছেন, ‘ইরান আবার কূটনৈতিক আলোচনায় রাজি, কিন্তু আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে এবং আগ্রাসীকে অপরাধের দায় নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যতদিন আগ্রাসন চলবে, ততদিন আমরা তাদের (মার্কিনদের) সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত নই।’
মার্কিন ভিত্তিক হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস নিউজ এজেন্সি শুক্রবার জানিয়েছে, তাদের সূত্র এবং মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরানে অন্তত ৬৫৭ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ২৬৩ জন বেসামরিক নাগরিক।
শনিবার ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় ৪শ’ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং ৩ হাজার ৫৬ জন আহত হয়েছে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ইরানের পালটা হামলায় ইসরাইলে অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন।
‘ক্লান্তির ছায়া’
ইসরাইলের জাতীয় জনসংযোগ দপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত দেশে ৪৫০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র এবং প্রায় ৪শ’টি ড্রোন নিক্ষেপ করা হয়েছে।
তেল আবিবে, যেখানে বাসিন্দারা নয় দিন ধরে নিয়মিত ইরানি হামলার শিকার হচ্ছে, সেখানে অনেকে ইরানের ক্রমবর্ধমান হুমকিতে ক্লান্তি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে, তেহরানের রাস্তাঘাট শনিবারও ছিল মূলত শান্ত, যদিও কয়েকটি ক্যাফে ও রেস্তোরাঁ খোলা ছিল।
বিকেলে, সরকারের সমর্থকরা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সদর দপ্তরের সামনে জড়ো হয়ে অল্প সময়ের জন্য ইরানি, ফিলিস্তিনি এবং হিজবুল্লাহর পতাকা নাড়িয়ে ‘ইসরাইলের মৃত্যু চাই’ বলে স্লোগান দেয়।
পশ্চিমা শক্তিগুলো বারবার ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সম্প্রসারণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, বিশেষ করে দেশটির দ্রুত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)’র প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেছেন, ‘ইরানই একমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন দেশ যারা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে।’
তবে তার সংস্থার কাছে এমন ‘কোনো তথ্য নেই’ যাতে প্রমাণ হয় ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য কোনো ‘সুসংগঠিত কর্মসূচি’ চালাচ্ছে।
গ্রোসি সিএনএন-কে বলেছেন, ‘ইরানের একটি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে কত সময় লাগবে, তা ধারণা করাটা হবে ‘শুধুই অনুমান’।