ঢাকা, ২৩ জুন, ২০২৫ (বাসস): চিলির ভেরা রুবিন মানমন্দিরের গবেষক দল সোমবার বহু প্রতীক্ষিত প্রথম মহাকাশচিত্র প্রকাশ প্রকাশ করেছে। এতে নক্ষত্র গঠনের অঞ্চল ও দূরবর্তী ছায়াপথের শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য ধরা পড়েছে।
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে মার্কিন অর্থায়নে নির্মিত এই বিশাল মানমন্দিরটি চিলির মধ্যাঞ্চলের সেরো পাচোন পর্বতশৃঙ্গে অবস্থিত। অঞ্চলটি অন্ধকার আকাশ ও শুষ্ক বাতাসের জন্য খ্যাত, যা মহাকাশ পর্যবেক্ষণের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, প্রকাশিত প্রথম ছবিগুলোর মধ্যে একটি হলো ৬৭৮টি এক্সপোজারের সমন্বয়ে তৈরি একটি যৌগিক চিত্র, যা মাত্র সাত ঘণ্টায় ধারণ করা হয়েছে। এতে পৃথিবী থেকে কয়েক হাজার আলোকবর্ষ দূরের ট্রিফিড নেবুলা ও ল্যাগুন নেবুলাকে উজ্জ্বল গোলাপি আভায় কমলা-লাল পটভূমিতে দেখা যায়।
ছবিতে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির ভেতরকার এই ‘নক্ষত্র নার্সারি’গুলো নজিরবিহীন স্পষ্টতায় ধরা পড়েছে, যেখানে আগে যেসব বৈশিষ্ট্য ম্লান বা অদৃশ্য ছিল, সেগুলো এখন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আরেকটি ছবিতে ভার্গো গুচ্ছের বিস্তৃত দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে।
দলটি একটি ভিডিওও প্রকাশ করেছে, যার নাম ‘কসমিক ট্রেজার চেস্ট’ বা ‘মহাজাগতিক রত্নভাণ্ডার’। এতে প্রথমে দুটি ছায়াপথের ক্লোজআপ দেখানো হয়, তারপর ধীরে ধীরে পেছনে সরে গিয়ে প্রায় এক কোটি ছায়াপথ প্রকাশ পায়।
হোয়াইট হাউসের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নীতিবিষয়ক দপ্তরের পরিচালক মাইকেল ক্রাটসিয়স বলেন, ‘রুবিন মানমন্দির আমাদের ভবিষ্যতের জন্য এক বিনিয়োগ। এটি এমন এক জ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করবে, যার ওপর আমাদের সন্তানেরা গর্বের সঙ্গে আগামী দিন গড়বে।’
এই মানমন্দিরে রয়েছে অত্যাধুনিক ৮.৪ মিটার টেলিস্কোপ এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডিজিটাল ক্যামেরা। পাশাপাশি এতে রয়েছে শক্তিশালী ডেটা প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থা।
চলতি বছরের শেষ দিকে এটি তার প্রধান প্রকল্প লেগেসি সার্ভে অব স্পেস অ্যান্ড টাইম (এলএসএসটি) শুরু করবে। পরবর্তী দশকে এটি প্রতি রাতেই রাতের আকাশ স্ক্যান করবে এবং দৃশ্যমান ক্ষুদ্রতম পরিবর্তনগুলোকেও নজিরবিহীন সূক্ষ্মতায় ধারণ করবে।
মানমন্দিরটির নামকরণ করা হয়েছে খ্যাতনামা মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ভেরা সি. রুবিনের নামে, যিনি প্রথম নিরপেক্ষ প্রমাণ দিয়েছিলেন যে ডার্ক ম্যাটার বা অন্ধকার পদার্থের অস্তিত্ব রয়েছে। এটি এমন এক রহস্যময় পদার্থ, যা আলো নিঃসরণ করে না, তবে ছায়াপথে মাধ্যাকর্ষণ প্রভাব বিস্তার করে।
অন্যদিকে, ডার্ক এনার্জি বা অন্ধকার শক্তি হলো আরেক রহস্যময় ও অত্যন্ত শক্তিশালী বল, যা মহাবিশ্বের প্রসারণ ত্বরান্বিত করছে বলে ধারণা করা হয়। অন্ধকার পদার্থ ও অন্ধকার শক্তি মিলিয়ে মহাবিশ্বের প্রায় ৯৫ শতাংশ গঠিত বলে মনে করা হয়, যদিও তাদের প্রকৃত স্বরূপ আজও অজানা।
এই মানমন্দির যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন ও এনার্জি বিভাগের যৌথ উদ্যোগে গঠিত। এটি গ্রহাণু পর্যবেক্ষণের জন্য নির্মিত সবচেয়ে শক্তিশালী যন্ত্রগুলোর অন্যতম হিসেবে বিবেচিত।
মাত্র ১০ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণেই রুবিন মানমন্দির আমাদের সৌরজগতে ২,১০৪টি আগে অজানা গ্রহাণু শনাক্ত করেছে, যার মধ্যে সাতটি পৃথিবীর নিকটবর্তী বস্তু, তবে এর কোনোটিই বিপজ্জনক নয়।
তুলনামূলকভাবে পৃথিবী ও মহাকাশভিত্তিক অন্য সব মানমন্দির মিলে বছরে গড়ে প্রায় ২০ হাজার নতুন গ্রহাণু আবিষ্কার করে।
রুবিন মানমন্দির আন্তর্মহাজাগতিক বস্তুর অবস্থান নির্ণয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে কার্যকর মানমন্দির হতে যাচ্ছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
রোববার সকালে মানমন্দির থেকে আরও ছবি প্রকাশের কথা রয়েছে।