প্রতিবেদন : সাইফুল ইসলাম
ঢাকা, ২১ জুলাই, ২০২৫ (বাসস): আশরেফা খাতুন জুলাই আন্দোলনের একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের সঙ্গী এবং অন্যতম সংগঠক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় সংসদের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শামসুন্নাহার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আশরেফা বর্তমানে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত।
ঢাকায় জন্ম নেয়া আশরেফা খাতুনের বেড়ে ওঠা খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলার হাড়িখালী গ্রামে। হাড়িখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও খুলনার চাঁদপুর কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন।
আশরেফার রাজনৈতিক সক্রিয়তা ও তৎপরতার সূচনা হয় ২০১৯ সাল থেকে। ছাত্র রাজনীতির একটি বিকল্পধারার সঙ্গে যুক্ত থেকে শুরুর দিন থেকেই তিনি ক্যাম্পাসের নানা আন্দোলনে যুক্ত হন। ২০২২ সালে তিনি বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সংগঠকদের সঙ্গেও রয়েছে তার দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক ও সক্রিয় সম্পৃক্ততা।
কেবল ক্যাম্পাসের রাজনীতি নয়, দেশের সার্বভৌমত্ব, শিক্ষা ও সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নে সবসময়ই সোচ্চার থেকেছেন। ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী আন্দোলন, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনের দুর্নীতি, সাত কলেজ ইস্যু সবসময় ছিলেন সামনের সারিতে।
সম্প্রতি জাতীয় বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর প্রতিবেদক সাইফুল ইসলামকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তার সম্পৃক্ততা ও আন্দোলনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার নানা দিক তুলে ধরেন আশরেফা খাতুন। নিচে তার সঙ্গে আলাপের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো-
আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালানোর দিনের ভয়াবহ পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে আশরেফা বলেন, ‘৫ আগস্ট সকালবেলা আমরা বের হব। আমি ছিলাম সেগুনবাগিচায়। বাসার সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি টহল দিচ্ছে। রেডি হয়ে গেট পর্যন্ত এসে দেখি, বের হওয়ার কোনো উপায় নেই। আমাদের শহীদ মিনারে জড়ো হওয়ার কথা ছিল। সকালবেলা; তখনও লোকজন আসেনি। সারারাত মনে হয়েছে, সকালে বের হতে পারব তো! বের হলে কি গুলি করে দেবে? একটা মানুষ বের হলেও গুলি করে দেয়। এটা কখনও সম্ভব! তবু, পণ করলাম, গুলি করলেও আজ বের হতে হবে।’
আশরেফা বলেন, ‘আমার সাথে সুফিয়া কামাল হলের একটা জুনিয়র মেয়ে ছিল। আমরা প্ল্যান করি, বাসার সামনে দিয়ে যদি কোনো মিছিল যায়, আমরা মিছিলটায় জয়েন করে চলে যাব। শুধু দুজন গেলে যদি গুলি করে দেয়! পুলিশ ঘুরছে। হাইকোর্টের সামনে নাকি পুলিশ গুলিও চালিয়েছে!’
তখন এক বন্ধুকে কল দিলাম, ‘চানখারপুলের কী অবস্থা? তুমি কি শহীদ মিনার আসতে পারছ? ও বলছে, ‘না, শহীদ মিনারে যেতে পারছি না। তোমার বাসা থেকে বের হওয়ার দরকার নেই। গুলি চলতেছে।
আমাদের দিকে গুলি চালাচ্ছে। আমার সামনে চারজন মারা গিয়েছে। এখন বের হওয়া লাগবে না। তখন আর বাসা থেকে বের হতে পারিনি। এর কিছুক্ষণ পরে আরেকজন ফোন দিয়ে বলে, উত্তরা থেকে এক লাখের মতো মানুষ ঢাকা আসতেছে। আমার তখন মনে হয়েছে, এক লাখের মতো মানুষ আমাদের দোজখ থেকে উদ্ধার করতে আসছে।
আমি শুধু আল্লাহকে ডাকছি; আল্লাহ ওই মিছিলটা যেন ঢুকতে পারে। ওই মিছিলটা ঢুকলে আমরা মুক্ত, আমরা স্বাধীন!’ তখন আমি কেঁদে ফেলি। আমি টানা দুই ঘণ্টা বসে কান্না করছি...।
আশরেফা বলেন, ‘আমার সরকারি চাকরি করতেই হবে এমন আকাঙ্ক্ষা কখনোই ছিল না। বাবা-মা চেয়েছিলেন বিসিএস ক্যাডার হই। আমি সবসময় ব্রাইট স্টুডেন্ট ছিলাম, কিন্তু আমার টান ছিল মানুষের পাশে দাঁড়ানোর দিকে।’
আদালতের রায়ের প্রতিবাদে জুলাই আন্দোলন শুরু হয় ৬ জুন ২০২৫। প্রথমদিন থেকেই আশরেফা খাতুন সরাসরি আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন। তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলনে আসার পেছনে কোনো রাজনৈতিক ম্যানিফেস্টো ছিল না, ছিল পেটের দাবি, ছিল চাকরির নিশ্চয়তা। আন্দোলনে সবাই এসেছিল নিজের প্রয়োজনেই।’
শুরুতে মেয়েদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম থাকলেও ধীরে ধীরে তাদের অংশগ্রহণ দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
প্রথম দিকে মেয়েরা মিছিলগুলোতে উপস্থিত থাকলেও স্লোগান দিতে চাইতেন না। আশরেফা বলেন, ‘সংকোচ ছিল। অনেকে প্রথম-দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী, যাদের পরিবার চাকরির স্বপ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছে। কিন্তু তারা বৈষম্য চোখে পড়ছিল, তাই ওরা নিজেই বাধ্য হয়ে আন্দোলনের পথে নেমেছে।’
তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের জন্য ‘নারী সমন্বয়’ নামে পাঁচটি হলের একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ খোলা হয়। এখানেই হতো পরিকল্পনা, কাকে কোথা থেকে বের হতে হবে, কখন হলের সামনে জড়ো হবে।’
আশরেফা ও তার সহযোদ্ধারা বুঝে গিয়েছিলেন এটা আর কোনো দলীয় আন্দোলন নয়, এটা হচ্ছে গণমানুষের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
আন্দোলনে বাধা-বিপত্তি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে আশরেফা বলেন, ‘মেয়েদের হলে তেমন কোনো বাধা ছিল না। মেয়েদের হলে সবসময় সিট একটা বড় সংকট। যারা বাধ্য হয়ে পলিটিক্যালি থাকত তাদের ওপর একটা রেস্ট্রিকশন ছিল আন্দোলনে যাওয়া যাবে না বা এরকম কিছু। তবে আমার ওপর এই ধরনের কোনো প্রেশার ছিল না। যারা প্রশাসনিকভাবে বরাদ্দকৃত সিটে থাকে আমাদের ওপর এই রকম ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘তবে মেয়েদের ওপর একটা থ্রেট ছিল। আন্দোলনে যে মেয়েরা আসছে, বিশেষ করে প্রথম বর্ষ ও দ্বিতীয় বর্ষের মেয়েরা, তারা আন্দোলনে অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছে। ওদের একটা বড় অংশ ছাত্রলীগের রুমে থাকত। অনেকে আবার ছাত্রলীগের মেয়েদের দ্বারা ইনফ্লুয়েন্স ছিল। ওদের জন্য একটু ক্রিটিক্যাল ছিল।’
‘ওদেরকে আমাদের মোটিভেট করা লাগছে। ভরসা দেওয়া লাগছে- কিছু হলে আমরা আছি। ১৫ জুলাইয়ের আগে পর্যন্ত ওভাবে আমরা কোনো বাধা পাইনি’, জানান আশরেফা।
১৪ জুলাই গণপদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এরপর আমরা হলে ফিরে দেখি, প্রধানমন্ত্রীর একটা প্রেস কনফারেন্স হচ্ছিল। সেখানে শিক্ষার্থীদেরকে রাজাকারের নাতি-পুতি বলে সম্বোধন করেন শেখ হাসিনা। ওই রাতেই ঢাবি শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্ত এর প্রতিবাদ করে।
সবাই যার যার হল থেকে রাস্তায় নেমে আসে। শিক্ষার্থীরা হাসিনার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে।’
অশরেফা বলেন, ‘শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদে রাতেই আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করি। প্রতিটি হল থেকে মিছিল বের হয়। সবাই স্লোগান দেয়, ক্ষোভ থেকে স্লোগান দিচ্ছিল। আমাদের অনেকগুলো স্লোগান ছিল ওইদিন। প্রথম স্লোগান ছিল- তুমি কে আমি কে? রাজাকার, রাজাকার...। ১৪ জুলাই কোনো মাইক ছিল না। আমাদের প্রত্যেকটা হলের জন্য আমরা কিছু হ্যান্ড মাইক কিনেছিলাম।
আমার হাতে শামসুন্নাহার হলের হ্যান্ড মাইক ছিল। ওই হ্যান্ডমাইকেই আমি স্লোগান দিই।’
তিনি বলেন, ‘কোটা সংস্কারের সাথে সাথে আরেকটা দাবি যুক্ত হল, সেটা হল প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে হবে; এই বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। ওইদিন থেকে মেইনলি আমার মনে হইছে, মূল আন্দোলনটা এই জায়গায় শুরু হল। ইডেন কলেজের মেয়েরা ১৪ জুলাই রাতে বের হওয়ার কারণে ছাত্রলীগের মেয়েরা ১৫ জুলাই সকালে তাদের ওপর গরম পানি ছুড়ে মারে। তারা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের গেইটে আটকে দেয় এবং তাদের বের হতে বাধা দেয়।’
তিনি বলেন, ‘১৪ জুলাই সারাদিন কিছু না খাওয়ায় আমার ডিহাইড্রেশেন হয়ে যায়। সারাদিন বাইরে ছিলাম।
আবার রাতে না খেয়ে বের হয়েছি। রাত তিনটার দিকে হলে ফিরি, তখনও খেতে পারিনি। তখনও মিটিং চলছিল। শেষ হয় সকালে। আমি মাত্র ২ ঘণ্টার মতো ঘুমাতে পেরেছিলাম।’
আশরেফা বলেন, ‘এরপর খবর আসে ইডেন কলেজে মেয়েদেরকে আটকে রেখেছে। তখন আমি আর নুসরাত একসাথে ইডেন কলেজের দিকে রওনা দেই। এরই মধ্যে আমাদের জুনিয়র মেয়েরা অলরেডি বের হয়ে এসেছে। অন্যান্য হল থেকেও সবাই চলে এসেছে। আমরা যখন পলাশীতে পৌঁছাই, তখন ঢাকা কলেজের ছেলেরা আর মৈত্রী হলের মেয়েরা গিয়ে ইডেনের মেয়েদের বের করে নিয়ে আসে।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৫ জুলাই হামলার পরপর মেয়েরা হলে ফিরে আসে। ওই সময় আন্দোলনে যাওয়া মেয়েরা ছাত্রলীগের মেয়েদের ভয় পাচ্ছিল। যেহেতু একবার বাইরে হামলা হয়েছে। হলের ভেতরে তো ছাত্রলীগের মেয়েরা আছে! তারা আবার হলের ভেতর থেকে হামলা করবে কি না, এই ভয়। তখন আমি ভেবেছিলাম ভয় পেয়ে হয়তো মেয়েরা বাসায় চলে যাবে বা পরের দিন আন্দোলনে আসবে না। সেসময় অনেকে আহত হয়েছে। সব থেকে বড় কথা ট্রমাটাইজ হয়ে যায় অনেকে। কারণ কাছ থেকে রক্তাক্ত হতে দেখছে অনেকে। মেয়েরা হলে এসে অনেকেই কথাই বলতে পারছিল না। একটা বাজে অবস্থা। তখন কী করব! মেয়েদের রেজিস্টান্সের জন্য কিছু একটা করা দরকার!’
‘মেয়েরা বলছিল আপু হলের মধ্যেও হামলা হতে পারে। নুসরাত মার খেয়ে আসছে তখন ওকে জগন্নাথ হলের গেট থেকে নিয়ে আসতে হয়েছে। নুসরাতকে অনেক বাজেভাবে পিটাইছে। ওকে আমি ধরে নিয়ে আসছি। তখন সবাই বলতেছিল এরকম হামলা হলো আমরা কি কিছু করব না? হলের মধ্যে হামলা হলে আমরা দেখে নেব। সবাই একত্রিত হলো। মার খেয়েও কিন্তু মেয়েরা ভয় পায়নি। বরং বহিরাগতদের হামলার কারণে বিক্ষুব্ধ হয়।’
‘বহিরাগতরা মেয়েদের মেরে নোংরভাবে উল্লাস করেছে। এতে মেয়েরা খুব ক্ষেপে যায়। আমি ভেবেছিলাম, আন্দোলন আজকেই শেষ। কিন্তু মেয়েরা যেভাবে সুসংঘটিত হয়েছে, আমি অবাক হয়ে যাই। ওরা আরও বেশি সক্রিয় হয়ে আন্দোলনে নামে।’
আশরেফা বলেন, ‘এরমধ্যে আবু সাঈদের মৃত্যুর ভিডিওটা সামনে আসে। দেখে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। পুলিশ কি আদৌ এভাবে গুলি করতে পারে! এটা কী! আদৌ ও এভাবে বুক পেতে দেওয়া একটা নিরস্ত্র ছাত্রকে গুলি করা যায়?’
তিনি বলেন, ‘১২ জুলাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলুদ কালারের জিন্স পরা একটা ছেলে এভাবে হাত মেলে বুক পেতে দাঁড়িয়েছিল। ১৩ বা ১৪ জুলাই খান তালাত মাহমুদ রাফিও এভাবে দাঁড়িয়েছিল পুলিশের সামনে। ওই ভিডিওগুলো আমাদের তখন খুব ইনস্পাইয়ার করছিল। এতো ছোট একটা ছেলে ওভাবে দাঁড়াইয়া যাচ্ছে।
পুলিশ তখন কিন্তু রাফিকে গুলি করেনি। তাই আমি ভাবছিলাম, আবু সাঈদকে গুলি করার প্রশ্নই আসে না।
পুলিশ এভাবে গুলি করবে? পরে দেখি যে আসলেই ওকে গুলি করে নির্মমভাবে মেরেছে পুলিশ।’
‘১৬ তারিখ রাতে ছাত্রলীগের মেয়েদের কাছ থেকে লিখিত নেয়া হলো: হলে আর ছাত্রলীগের রাজনীতি চলবে না। আমি নিজের হাতে দফা আকারে দুই পৃষ্ঠার ডিটেইলস লিখে দেই। দফাগুলো মেয়েদেরকে পড়ে শোনাই। সিদ্ধান্ত হলো- আমরা ছাত্রলীগের রুম ভাঙচুর করব না। কিন্তু ওদেরকে বের করে দিতে হবে। আমরা সকালে সবাই দাঁড়াব, আমাদের সামনে দিয়ে ওরা বের হয়ে যাবে।’
‘১৭ জুলাই সকালে হল ছাড়ার নোটিশ এলো। তখনও হলে আমরা ৫০-৬০ জন ছিলাম। আমরা বলেছিলাম, যা-ই হোক, হলেই থাকব। এর মধ্যে ওইদিন মনে হচ্ছিল দোজখ চারিদিকে। এত পরিমাণ সাউন্ড গ্রেনেড মারছে। এত টিয়ারশেলের আওয়াজ। ওইদিন গায়েবানা জানাজা হচ্ছিল। আহত হয়ে আবার কয়েকজন হলে আসল। চারিদিকে টিয়ারশেলের আওয়াজ।’
‘৩ আগস্ট শহীদ মিনারে পৌঁছে যেন এক যুদ্ধজয়ের সমান ছিল। রাজধানীর ডেমরা থেকে শুরু করে বাংলা মোটর হয়ে শহীদ মিনারে পৌঁছতে আমাকে ৪-৫টি রিকশা বদল করতে হয়। আমার মনে আছে সেদিন ৮০০ টাকার রিকশা ভাড়া লাগছে। শহীদ মিনারে পৌঁছার আগে ফেসবুক একটা স্ট্যাটাস দিই- শহীদ মিনারের আশপাশে আছি, সবাই চলে আসেন। শহীদ মিনারে গিয়ে মনে হলো, আসলে পরিচিত কারো দরকার নেই। সবাইকে আমার পরিচিত, আপনজন মনে হলো।’
জুলাইয়ের সবথেকে স্মরণীয় দিন কোনটি জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ৩ আগস্টের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমার কাছে আর কোনো বিজয়কেই ৩ আগস্টের থেকে বড় লাগে না। আমরা তো সবসময় মনে করি, শহরের যে মানুষেরা আছে, গুলশানে থাকে, এসি রুমে থাকে, ট্যাটু করে গায়ে, স্লিভলেস জামাকাপড় পরে- এই মানুষগুলো হয়তো কখনো দেশ নিয়ে ভাবে না, আন্দোলনে যায় না। কিন্তু সেদিন সবাই রাস্তায় নেমে এসেছিল, জড়ো হয়েছিল শহীদ মিনারে।’
পাঁচ আগস্ট ভোরবেলায় ইন্টারনেট অফ করে দেওয়ার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘সকালের দিকের ঘটনা। সবাই ভাবছে রাস্তায় নামলে হয়তো গুলি করবে। কিন্তু আমি রাস্তায় নামার সিদ্ধান্ত নিলাম। সকাল থেকে আব্বু-আম্মু বারবার ফোন দিচ্ছে। কী অবস্থা? আমি খুব হাসিমুখেই কথা বলেছি। আব্বু কোনো সমস্যা নাই, কোনো চিন্তা কইরো না। আমি সাবধানে থাকব। কিন্তু ভিতর ভিতরে মনে হচ্ছে হয়তো বাঁচবো না।’
‘কিন্তু না, শেষপর্যন্ত সেদিন যেন আমাদের নবজন্ম হলো, আমরা যেন দ্বিতীয়বার স্বাধীন হলাম, পেলাম স্বৈরাচারমুক্ত নতুন বাংলাদেশ। কিন্তু এর মূল্যটাও দিতে হয়েছে অনেক...।’ বলেন আশরেফা।